টাঙ্গাইলে অভ্যন্তরীন
নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে একের পর এক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যেই এ জেলার
ছয়টি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের প্রায় ১১৪টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে বিশুদ্ধ পানির
অভার, গো-খাদ্যের সঙ্কট এবং কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন সাধারণ
মানুষজন। দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ বালাই।
সোমবার (২০
জুন) পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে
৩০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর
পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার
৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এছাড়াও ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার মাত্র ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ও হেমনগর ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রাম, ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা, গাবসারা ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রাম, কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী, দুর্গাপুর, সল্লা ও দশকিয়া ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রাম, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মগড়া, কাকুয়া, কাতুলি ও মাহমুদনগর ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম, নাগরপুরের ভাড়রা, সলিমাবাদ ও দপ্তিয়র ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়া বাসাইল
উপজেলার সদর, কাশিল ও ফুলকী ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। ওইসব এলাকার অন্তত
১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
কালিহাতী উপজেলার
সল্লা ও হাতিয়া বাঁধের কিছু অংশ আর আনালিয়াবাড়ী সড়কের পাকা সলিং ভেঙে ফসলি জমি-ঘরবাড়ি
প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া শনিবার(১৮ জুন) দিবাগত
রাতে বাসাইল পৌর এলাকার দক্ষিণ পাড়া-বালিনা সড়কের একটি অংশ পানির তীব্র স্রোতে ভেঙে
পৌর এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।
মগড়া ইউনিয়নের
শাহালম, আবুল কালাম, আজমত আলী, দুর্গাপুরের হযরত আলী, জামাল হোসেন, আবু বকর, গোবিন্দাসীর
শরাফত আলী, বেনজির হোসেন, কাশেমসহ বন্যা কবলিতরা জানান, রাতের মধ্যে পানি প্রবেশ করে
ঘর-বাড়ি প্লাবিত করেছে। বাড়ি-ঘরের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার আগেই ঘরে পানি ঢুকছে। ফলে গৃহস্থরা
গবাদিপশু নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন।
কালিহাতী উপজেলার
গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ, দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান
মো. সিরাজুল ইসলাম, ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দুলাল হোসেন
চকদার জানান, বন্যার পানি বাড়ছে। বাড়ি-ঘরে পানি উঠে চরম দুর্ভোগে রয়েছে সাধারণ মানুষ।
তারা নিজের সাধ্য অনুযায়ী যতটা পারছেন সাহায্য করছেন।
টাঙ্গাইল সদর
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রানুয়ারা খাতুন বলেন, ইতোমধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩০০
পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে ত্রাণ সামগ্রী বন্যা কবলিতদের
মাঝে দেওয়া হবে।
টাঙ্গাইল পানি
উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যে হারে পানি বাড়ছে তাতে বন্যার ভয়াবহ রূপ ধারণ করলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবেনা। তবে
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বরাবরের চেয়ে আরও বেশি সতর্ক রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।