তারেক রহমানের নির্দেশনায় আগুন সন্ত্রাস ঘটানো হচ্ছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট হচ্ছে, নাশকতা করার পর এগুলোর ছবি-ভিডিও ধারণ করে লন্ডনে পাঠানো হয়। সেগুলো পাঠালে নাশকতাকারীদের দলে পদোন্নতিসহ নানাভাবে পুরস্কৃত করা হয়। শনিবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজী পুকুর লেনের ওয়াইএনটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সাথে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, গতকাল ঢাকার গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসের চারটি বগিতে বিএনপি-জামায়াতের দুষ্কৃতিকারীরা আগুন দিয়েছে। যেভাবে এই বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে এতে এ পর্যন্ত নয়জনের মৃত্যু হয়েছে, হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। বিএনপি-জামায়াত ২০১৩, ২০১৪ ও ও ২০১৫ সালে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছিল, ঠিক একইভাবে বর্বরোচিত হামলা তারা গত ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে। এটি কোনো রাজনৈতিক দলের কাজ হতে পারে না। রাজনীতির নামে এত জঘন্য ও ঘৃণ্য নাশকতা এবং মানুষ পুড়িয়ে মারার মহোৎসব পৃথিবীর কোথাও গত কয়েক দশকে ঘটেনি, যেটি বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত করে চলেছে। তিনি আরও যুক্ত করেন, এসব ঘটনা ঘটিয়ে অস্বীকার করা বিএনপির অভ্যাস। এর আগেও একই এলাকায় ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মা ও শিশুসহ চারজন এক সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছে। ওই এলাকায় বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের বাড়ি। এর আগের ঘটনা কার নির্দেশে, কারা করেছে, সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে, তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আগুন সন্ত্রাস করে ভোট উৎসব ম্লান করা যাবে না। যেসব নেতারা এসব ঘৃণ্য ও জঘন্য কাজের নির্দেশদাতা তারাও সমান অপরাধী। জনগণের দাবি হচ্ছে, এসব নেতাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার। যদি আমরা সরকার গঠন করতে পারি, আমাদের প্রধান কিছু কাজের মধ্যে অন্যতম হবে আগুন সন্ত্রাসীদের মূলোৎপাটন করা। একটি সভ্য দেশে এসব চলতে দেওয়া যায় না।
নির্বাচন নিয়ে সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচণ্ড আগ্রহ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে এই মন্ত্রী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, সার্কভুক্ত এবং ওআইসিভুক্ত দেশগুলো থেকে শুরু করে অনেক দেশ ও সংস্থা নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মহল এই নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে বিধায় তারা ব্যাপক হারে পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছে। আশা করছি, আগামীকাল (৭ জানুয়ারি) দেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিকভাবে সর্বজন গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধস নামানো বিজয় হবে। শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যারা এই নির্বাচনকে ভন্ডুল করার লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের ওপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করছে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছে, এদের ব্যাপারে আশা করি আন্তর্জাতিক মহল মুখ খুলবে এবং এই দুষ্কৃতিকারীদের নিবৃত্ত ও নির্মূল করার ক্ষেত্রে তারাও সহযোগিতা করবে।
তিনি আরও বলেন, নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে যারা পুড়িয়ে হত্যা করে, তারা দেশ, জাতি-সমাজ ও মানুষের শত্রু। বিএনপি-জামায়াত গতকাল শুধু ট্রেনে হামলা চালিয়েছে তা নয়, ঢাকায় গাড়িতে আগুন দিয়েছে, বগুড়ায় চলন্ত ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করেছে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আগুন দিয়েছে, রাজশাহী মহানগরে একটি ভোট কেন্দ্রের পাশ থেকে ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে, তার আগের রাতে দুটি ভোট কেন্দ্রে আগুন দিয়েছে। চট্টগ্রামেও নাশকতার ঘটনা ঘটাচ্ছে। তারা চেষ্টা করছে, এগুলো করে নির্বাচনে যে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সেই পরিবেশকে নষ্ট করার জন্য।
দুষ্কৃতিকারীদের প্রতিহত করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জনগণের শক্তির কাছে দুষ্কৃতিকারীরা কখনো পেরে ওঠে না, তারা অতীতেও পরাজিত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। আমাদের সরকার ও দল এই দুষ্কৃতিকারীদের মূলোৎপাটন করতে বদ্ধপরিকর। তারা জনগণের শত্রু, জনগণের শত্রুদেরকে জনগণকে নিয়েই প্রতিহত করা হবে।
সাংবাদিকরা মানুষকে পথ দেখায়, সমাজের তৃতীয় নয়ন খুলে দেয়, জনমত গঠনে ভূমিকা রাখে, এই ঘৃণ্য ও নৃশংস কাজগুলো যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে কলম ধরার অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, ভোট শতভাগ সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার জন্য নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত কঠোর এবং বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছে। ভোট যে শতভাগ সুষ্ঠু হবে সেই ব্যাপারে জনগণের মধ্যেও বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে। অবাধ সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহায়তা করছে।
ব্রিফিংয়ের সময় তথ্যমন্ত্রীর সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম।