যে ধর্মের মেয়েকে টার্গেট করতেন, সেই ধর্মের
পরিচয় দিতেন অভিজিৎ ঘোষ। মুসলিম মেয়ে হলে আস্থা অর্জনের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়
করতেন। আর হিন্দু হলে মুখস্ত শ্লোক বলতেন। কোনো বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তার সন্তান আর
নিজে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার অথবা ম্যাজিস্ট্রেট বলে পরিচয় দিতেন। এভাবে একের পর এক
ফাঁদ পেতে বিয়ে করে অথবা বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ধর্ষণ করতেন মেয়েদের।
কাজির উপস্থিতিতে মুসলিম রীতি অনুযায়ী
বিয়ে শেষে মোনাজাতে অংশ নিচ্ছে আসাদ মাহমুদ পরিচয়ের অভিজিৎ ঘোষ। অবশ্য বিয়ের আগে নিজেকে
নৌবাহিনীর লেফটেনেন্ট কমান্ডার পরিচয় দিয়ে বাহিনীর পোশাক পরে ওই তরুণীর বাসায় বেড়াতে
গিয়েছিল সে। আস্থা অর্জনের জন্য ওই নারীর বাসায় নিয়মিত নামাজ আদায় করত। এভাবে প্রতারণার
ফাঁদ পেতে ওই তরুণীকে অভিজিৎ বিয়ে করেছিল বলে অভিযোগ।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, আমাকে বলেছিল ওর
বাবা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও মা কুমিল্লা কোর্টের জজ ছিল। বাবা-মা দুজনই মারা গেছে।
ওর সহযোগী বলত, আমাকে না পেলে আসাদ নাকি আত্মহত্যা করবে, মারা যাবে। তাই আমি ওকে বিয়ে
করতে রাজি হয়েছিলাম।
শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কর্মরত ভুক্তভোগী
এই নারী মায়ের চিকিৎসার জন্য ভারতে গেলে নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে আরেক হিন্দু
তরুণীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে অভিজিৎ ঘোষ নামের এই প্রতারক।
পরবর্তীতে ওই হিন্দু তরুণীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ গত ২৪ এপ্রিল এক সহযোগীসহ
অভিজিৎকে গ্রেপ্তার করে। সময় টেলিভিশনে এ নিয়ে সংবাদ প্রচার হলে ওই নারী বুঝতে পারেন
প্রতারক অভিজিৎ ঘোষ হলো তার স্বামী আসাদ মাহমুদ।
ভুক্তভোগী নারী আরও বলেন, ওর এই ঘটনা আমি
খবরে দেখি। তারপর আমি বুঝতে পারি, এই অভিজিৎ হচ্ছে আমার স্বামী আসাদ মাহমুদ।
মায়ের চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে কোতোয়ালি
থানায় প্রতারক অভিজিৎ ঘোষ এবং তার সহযোগী সত্যজিত দাশ শুভকে আসামি করে নতুন আরও একটি
মামলা করেছেন প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী নারী। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা দুজনকে
আদালতের মাধ্যমে মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়েছে পুলিশ।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, তার বিরুদ্ধে
আমরা নিয়মিত মামলা নিচ্ছি ও আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয়ে যেমন বিভিন্ন নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে পুলিশের কাছে একাধিক নারী অভিযোগ জানিয়েছেন, তেমনি ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে পুলিশকেও অভিজিৎ ঘোষ ধোঁকা দিয়েছিল।