
শেখ লিটন, চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে তীব্র তাপপ্রবাহ। গেল কয়েকদিন আগে মৃদু, মাঝারি, তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। আর এখন চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। এতে স্বস্তিতে নেই সাধারণ মানুষ। অতিরিক্ত তাপমাত্রা গরমের কারণে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগির চাপ বাড়ছে। আর এই মৌসুমির বোরো ধান ও আমের গুটি। এছাড়াও আরো অনেক চাষযোগ্য ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন প্রতিদিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, চলতি মাসের ২ এপ্রিল থেকে টানা ১৪ দিন ধরে প্রতিদিন তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির ঘরে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। আর তাই গত শনিবার ৯ বছরের মধ্যে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল সারাদেশের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজ ১৬ এপ্রিল রোববার সারাদেশের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে বিকাল ৩ টায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৮ টার পর থেকে তীব্র রোদের তাপমাত্রায় নাকাল জনজীবন। এই তাপমাত্রার বাড়ার কারণে সব থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে রোজাদার ব্যক্তিরা ও খেটে খাওয়া শ্রমিকরা। সব থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে ভ্যান চালক ও রিকশা চালকরা । প্রখর রোদের কারণে কাজের প্রয়োজনে ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বেড়োছে না। তাই দুপুরের দিকে চুয়াডাঙ্গা সড়কে মানুষের আনাগোনা কম দেখা গেছে। আবার চুয়াডাঙ্গা প্রশাসন থেকে বাইরে না বেরোনোর জন্য সচেতন করা হচ্ছে।
এদিকে তীব্র রোদের তাপ আর গরমের কারণে সদর হাসপাতালে সব ধরনের রোগির সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনিই প্রায় সব ধরনের বয়সের রোগি শিশু ওর্য়াডে ৩০ থেকে ৪০ জন রোগি আসছে চিকিৎিসা নিতে । এরা সবাই প্রায় গরম জনিত বমি,ডায়রিয়া, আরো অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এদিকে তাপমাত্রার দাবদাহে পুড়ছে উঠতি মৌসুমের বোরো ধান। অনাবৃষ্টি ও খড়তাপে আমের গুটি ঝড়ে পড়ে যাচ্ছে। তাই লোকসানে শঙ্কায় এবার আম চাষিরা।
কথা হয় চুয়াডাঙ্গায় বড়বাজারে আসা এক পথচারি শহিদুল ইসলামের সাথে তিনি বলেন, প্রতিদিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করে চলেছে। আর আমরা যারা রোজাদার ব্যক্তিরা আছি তারা খুব কষ্টে আছি। আর তাপমাত্রা কমলে আমরা সবাই স্বস্তি পেতাম। একটু বৃষ্টি হলে সবাই বাচঁতো। বাইরে যে রোদের তাপমাত্রা । বাইরে বোরোলে সের্দ হয়ে যাচ্ছি ।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, আমাদের এবার এই বোরো মৌসুমের ধান নিয়ে চাষিরা খুব বিপাকে আছে। কারণ অনেকদিন হয়ে গেল বৃষ্টির দেখা নেই। এতে ধান পুরে যাওয়ার শঙ্কায় থাকে। আবার আমের গুটি পড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও আরো ফসলের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চাষিদের তাদের ফসলে বেশি করে সেচ দিতে হবে। কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ চলছে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স জলি খাতুন বলেন, চুয়াডাঙ্গায় অতিরিক্ত গরমের কারণে সব বয়সের শিশুরা আসছে হাসপাতালে। তারা সবাই বিভিন্ন গরম জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক রোগির চাপ। চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছি। আর আমরা এই গরমের রোগ থেকে বাচঁতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। কোনো ভাবে বাসিপচাঁ জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। আর সব সময় ঠান্ডা ও কোমল পানি পান করতে হবে বেশি করে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, চলতি মাসের ২ ই এপ্রিল থেকে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। গত ১২ দিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ওঠানামা করেছে। যা ১৬ এপ্রিল রবিবার বিকাল ৩ টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন অবস্থা আরো কয়দিন অব্যাহত থাকতে পারে।