ব্রিটিশরা ১৮৯২ সালে নিশ্চিন্তপুর বর্তমান ঠাকুরগাঁও স্বর্ণপট্টি এলাকায় ২ দশমিক ৮৩ একর জমিতে স্থাপন করা হয় একটি উপ-কারাগার। যার মূল ওয়ালের ভেতরে দশমিক ৮২ একর ও বাইরে ২ দশমিক শূন্য ১ একর জমি রয়েছে। পরে ১৯৮৪ সালে তৎকালীণ সরকার এটিকে জেলা কারাগারে রূপান্তর করে।
বর্তমানে বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে কারাগারটি। যেকোনো সময় হুড়মুড় করে ধসে পড়তে পারে বলে কারাগারে আটক বন্দীরা আশঙ্কা করছেন। তারপরও জরাজীর্ণ এ ভবনে চলছে বন্দিদের বসবাসসহ সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম।
১৩০ বছরের পুরোনো এই কারাগারটি আধুনিকায়ন করতে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চব্বিশ টিউবওয়েল এলাকায় ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে ১৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শুরু হয়নি নির্মাণ কাজ। এতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কয়েদিরা।
সূত্রে জানা গেছে, কারাগারটিতে ১৬৮ পুরুষ হাজতি ও তিনজন নারী হাজতি থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। থাকার জন্য রয়েছে একটি মাত্র ভবন। নারী হাজতিদের জন্য রয়েছে টিনশেডের একটি রুম। ১৬৮ জন পুরুষ হাজতি ধারণ ক্ষমতার ভবনে এখন থাকছেন ৪২০ জন। তিনজন নারী হাজতির জন্য টিনশেডের সেই রুমে থাকছেন তিন শিশুসহ ৯ জন নারী।
অন্যদিকে, বিএনপি-জামায়াতের চলমান আন্দোলনকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড়ে কারাগারে চাপ বেড়েছে বন্দিদের। ধারণ ক্ষমতার প্রায় তিন গুণ বন্দি রয়েছে এ কারাগারে।
এ ছাড়া জেলায় জঙ্গি, জেএমবি, মৃতদণ্ডসহ অন্য কারাবন্দিদের রাখার জন্য কোনো সেল নেই। সেল না থাকায় জেলার চার জেএমবিকে পঞ্চগড় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সারাদেশে জেলা কারাগারগুলোয় হস্তশিল্প, কারিগরি প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন বন্দিরা। শুধু অবকাঠামোগত কারণে এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কারাগারে বন্দিরা।
কারাগার থেকে জামিনে একব্যাক্তি জানান, রাতে এক রুমে ৬০-৭০ জনকে থাকতে হয়। ৬০-৭০ জনের জন্য মাত্র একটি টয়লেট। এক রুমে আমাদের প্রায় ১২-১৩ ঘণ্টা থাকতে হয়। এতে রাতে তেমন ঘুম হয় না। আমরা খুব গাদাগাদি করে ছিলাম। রুমের মধ্যে পা ফেলানোর মতো জায়গা থাকে না। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় বাথরুমে পানি থাকে না। গোসলের জন্য যে পানি দেওয়া হয় সেটাও অল্প সময় থাকে।
অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রাক্কলন প্রস্তুত করে ২০ বারেরও অধিক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও সেটি পাশ হয়নি বলে জানান ঠাকুরগাঁও গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, আমরা আবারো প্রাক্কলন করে পাঠাব। ইতোমধ্যে নতুন কারাগারের জন্য জমি অধিগ্রহণ করেছি।
এ বিষয়ে জেল সুপার মো. আবু তালেব এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের জেলকোডে এ বিষয়ে মন্তব্য করার কোনো নিয়ম নেই।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটেয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে নতুন কারাগার ভবন নির্মাণ করা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন।