ছোটবেলায় যে মানুষটি ছিল সকলের কাছে হাসির পাত্র। কে জানতো সেই মানুষটি একদিন হয়ে উঠবে হাজারো মানুষের আইডল। বলছি সিদ্দিক ভূঁইয়া থেকে সিনথিয়া ভূঁইয়া হয়ে ওঠার এক গল্প। খিলগাঁও পূর্ব গোড়ানের একটি সাধারণ পরিবারে জন্ম একটি ফুটফুটে ছেলের। বাবা মা খুব আদর করে নাম দিয়েছিল সিদ্দিক ভূঁইয়া। অন্য দশজনের মতো স্বাভাবিকভাবেই জীবন চলছিল তার। তবে আস্তে আস্তে বড় হতে হতে সিদ্দিক ভূঁইয়া দেখলেন তার ভিতরের পরিবর্তন, তার মেয়েদের সব কিছুই ভালো লাগে যেমন শাড়ি পরতে, চুড়ি পরতে, লিপস্টিকের রঙ দিয়ে ঠোঁট লাল করতে। হবেইবা না কেন? কারণ সে তো আর দশজনের মতো নয়। আস্তে আস্তে স্কুলের বন্ধুসহ পাড়া-প্রতিবেশীরা তাকে অবহেলা করা শুরু করে। তবুও তার পরিবার পাশে থাকার কারণে সিনথিয়া ভূঁইয়া মানসিকভাবে ভেঙে পড়েননি।
তিনি সবসময় মানুষকে বোঝাতে চাইতেন ছেলে, মেয়ে ও হিজড়া। যাই বলেন না কেন সবাই আমরা মানুষ। আমাদের উচিত একসাথে মিলেমিশে থাকা কেউ কাউকে কষ্ট না দেয়া। কিন্তু সবাই তার কথা হাস্যকর মনে করে বলতো হিজড়া আইছে আমাদের জ্ঞান দিতে।
কেউ তার সাথে মিশতে চাইতো না। তাই সিনথিয়া ভূঁইয়া সবসময় একা একা চলাফেরা করতো, স্কুলে কেউ তাকে সামনে বসতে দিতো না, তাই সবসময় শেষের বেঞ্চে বসতে হতো তাকে। একদিন সে মনে মনে ভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। দশজনকে দেখিয়ে দিতে চাই আমিও মানুষ। তারপর তিনি পরিবারের কাছ থেকে কিছু সাহায্য ও নিজের জমানো টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন কেনেন। এরপর তিনি প্রশিক্ষণ নেন। পরে একটা থেকে দুইটা, দুইটা থেকে তিনটা মেশিন ক্রয় করেন। পরে ছোটখাটো একটা গার্মেন্টসের মতো করেন।
আস্তে আস্তে পরিশ্রম, সততা ও মানুষের ভালোবাসায় আজ সিনথিয়া ভূঁইয়া ‘ভূঁইয়া ফ্যাশনের’ কর্ণধার। তার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৮শ শ্রমিক কাজ করেন, তার ভিতর ৩৫০ শ্রমিক প্রায় ট্রান্সজেন্ডার। সব থেকে মজার বিষয় হচ্ছে যেই মানুষগুলো তাকে ছোটবেলায় উপহাস করতো, তাদের অনেকেই আজ তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী-কর্মকর্তা।
এছাড়াও গরিব-দুঃখী, অসহায় মানুষ ও রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা বিভিন্ন হিজড়া বা ট্রান্সজেন্ডারের জন্য ‘আমাদের ভাবনা অ্যাসোসিয়েশন (আভা)’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলেছেন সিনথিয়া। যার মাধ্যমে গরিব, অসহায়দের বিভিন্ন বিপদে সাহায্য করা হয়। যে সকল হিজড়া নিজেরা প্রতিষ্ঠিত হতে চায়, তাদের এই সংগঠনের মাধ্যমে কাজ শিখিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। সর্বশেষ আজকের দর্পণকে সিনথিয়া ভূঁইয়া জানান, দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিতে চায়।
গরিব-দুঃখী মানুষের কষ্ট দেখলে তার হৃদয় কাঁদে। তাই তিনি তার গার্মেন্টসের সংখ্যা আরো বাড়াতে চায়, যাতে করে বেকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।