
ট্রেনে এক যাত্রীকে মারধর ও মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকির অভিযোগে দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক শহিদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রেল পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ এটিএম নুরুল ইসলাম বলেন, রোববার অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ভুক্তভোগী যাত্রী করীম বাদশা বলেন, গত ১৮ মে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার কমলাপুর থেকে দ্রুতযান এক্সপ্রেসে করে ঠাকুরগাঁওয়ে যাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমার চেয়ারের সামনে একটি বাড়তি চেয়ার এনে একজন যাত্রীকে বসান পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শহিদুল ইসলাম। রেলওয়ের একটি ফেসবুক ফ্যান গ্রুপে ওই চেয়ারসহ দুটি ছবি পোস্ট করি। এর ৩০ মিনিট পর ওই পুলিশ কর্মকর্তা আমার কাছে এসে বাসার ঠিকানা জানতে চান। এরপর তিনি জোর করে ট্রেনের ক্যানটিনে নিয়ে যান। সেখানে দরজা লাগিয়ে দিয়ে হাত থেকে ফোনটি কেড়ে নেন। পরে তোলা ছবি ও ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া ছবিগুলো ডিলিট করে দেন।
তিনি বলেন, শহিদুল ইসলামসহ রেলওয়ে পুলিশের অন্য সদস্যরা জানতে চান ছবিগুলো কেন পোস্ট করলাম। তখন তাদের বলি, সেখানে অতিরিক্ত চেয়ার বসানো অনিয়ম ও দৃষ্টিকটু। এ কারণে ছবিগুলো পোস্ট করেছি। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনজন রেলওয়ে পুলিশ সদস্য আমাকে পেটাতে থাকেন। পরে তারা ফোনটি আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলেন। এরপর ভাঙা ফোনসহ আমাকে সিটে পাঠিয়ে দেন। সিটে বসার পরও কয়েক দফা হুমকি দেন। এএসআই শহিদুল কিছুক্ষণ পরপর এসেছেন আর বলেছেন, ঘটনাটি যেন কাউকে না জানাই। এ বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে মাদকের মামলায় কোর্টে চালান করে দেওয়াসহ ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ারও হুমকি দেন। পরে শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর স্টেশনে তারা নেমে যান। এ সময় নাম-ঠিকানা ও ফোন নম্বর নিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সব নাম-ঠিকানা নেওয়া হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সব ব্যবস্থা করবেন।
এ বিষয়ে অভিযোগ জানাতে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় গেলে বিষয়টি রেলওয়ের বিভাগীয় পর্যায়ে অভিযোগ দিতে বলা হয় বলে জানান করিম বাদশা।
অভিযুক্ত এএসআই শহিদুল ইসলাম বলেন, পূর্বপরিচিত এক কলেজ শিক্ষককে একটি বাড়তি চেয়ার এনে বসতে দিই। ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে করিম বাদশা নামের ওই যাত্রীর কাছে পোস্ট দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সে ক্ষিপ্ত হয়। অন্য সব অভিযোগের বিষয়ে সে মিথ্যাচার করছে। এত কিছু তার সঙ্গে ঘটেনি। আমি তার মোবাইল হাত দিয়েও ধরিনি। ছবিগুলো ডিলিট করতে বলেছি মাত্র। আমি যা করিনি তার শাস্তি পেতে হচ্ছে।
দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ এটিএম নুরুল ইসলাম বলেন, করীম বাদশার অভিযোগের কারণে রেলওয়ে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক শহিদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।