ঈদযাত্রার ট্রেনের টিকিট
কালোবাজারির অভিযোগে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার
মো. রেজাউল করিম (৩৮) ও তার সহযোগী এমরানুল আলম সম্রাটের (২৮) দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) তাদের
আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক শাহ
আলম তাদের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় সাতদিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে
ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী আশ্রাফ দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত বুধবার রেজাউল
করিমকে আটক করে র্যাব-১। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই দিন রাতে বিমানবন্দর স্টেশন
থেকে সহযোগী এমরানুল আলম সম্রাটকেও আটক করা হয়। এ সময় তাদের স্মার্টফোন থেকে বিপুল
পরিমাণ ট্রেনের ই-টিকিট জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় রেলওয়ে থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে বিশেষ
ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
সহজ লিমিটেডের মুখপাত্র
ফরহাত আহমদ সমকালকে জানান, রেজাউল করিম ছয় বছর ধরে রেলওয়ের টিকেট বিক্রয় পরিচালনার
কাজে নিয়োজিত ছিলেন। গত ২১ মার্চ তাকে নিয়োগ দেয় সহজ।
রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে
অভিযোগ, স্টেশনের সার্ভার নিয়ন্ত্রণের সুযোগে তিনি টিকিট কেটে তা তিন চার গুণ
দামে বাইরে বিক্রি করেছেন।
টানা ১৫ বছর ট্রেনের টিকিট
বিক্রির দায়িত্বে ছিল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস)। গত ২৬ মার্চ দায়িত্বে
আসে সহজ, ভিনসেন ও সিনোসিসের জয়েন্ট ভেঞ্চার। ঈদযাত্রার ট্রেনের টিকিটের জন্য
প্রতিদিন হাজারো মানুষ কমলাপুরে দিনভর লাইন ধরেও টিকিট পাননি। তারা টিকিট কালোবাজারির
অভিযোগ করলেও রেল এতদিন তা অস্বীকার করেছে।
সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন বিবৃতিতে
জানিয়েছে, ভবিষ্যতে কোনো কর্মীর বিরুদ্ধে কালোবাজারির অভিযোগ এলে আরও কঠোর
ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে.
কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান, প্রতিবছর ঈদে ২ থেকে ৩ হাজার ট্রেনের টিকিট সরিয়ে
নিতেন রেজাউল। যা কালোবাজারিতে বিক্রি করে আয় করতেন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।
জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে
র্যাব-১ এর কর্মকর্তা বলেন, পরিচিতদের কাছে ৫০০ টাকা লাভে টিকিট বিক্রয় করতেন রেজাউল।
এছাড়া অন্যদের কাছে নির্ধারিত দামের চেয়ে এক হাজার থেকে ১৫০০ টাকা বেশি দামে টিকিট
বিক্রি করতেন।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, রেজাউল পরিচিতজনদের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে টিকিট প্রত্যাশীদের একটি বড় শ্রেণি গড়ে তুলেছেন। এর বাইরেও কালোবাজারিতে তার টিকিট বিক্রেতা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, সহজ ডটকমের আগে অনলাইনে টিকিট বিক্রির দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান সিএনএস বিডিতেও
কর্মরত ছিলেন রেজাউল। অভিজ্ঞকর্মী হিসেবে সহজ ডটকম তাকে নিয়োগ দেয়।
গত মার্চের শেষে বাংলাদেশ
রেলওয়ের টিকেটি বিক্রির দায়িত্ব পায় সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জয়েন্ট ভেঞ্চার। এর আগে দেড়
যুগ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) এ দায়িত্বে ছিল। সহজ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই
অনলাইনে টিকেট কিনতে গিয়ে সমস্যায় পড়ার অভিযোগ করে আসছেন যাত্রীরা। ঈদের অগ্রিম টিকেট
বিক্রির সময়ও অনলাইনে টিকেট না পাওয়া এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই টিকেট মেলার মত বিষয়ও
আলোচনায় এসেছে।
রেলমন্ত্রী দাবি করেছিলেন,
এখন সবার এনআইডি দেখে যেভাবে টিকেট বিক্রি হচ্ছে, তাতে কালোবাজারির কোনো সুযোগই নেই।
তার মধ্যেই খোদ ভেন্ডরের কর্মীর কালোবাজারির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার খবর আসে।