চলমান রাজনৈতিক
অস্থিরতার মাঝে নির্ধারিত সময়ে আলুবীজ সংগ্রহ ও বিক্রি নিয়ে উদ্বিগ্ন রংপুর অঞ্চলের
ডিলারর। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ২০২৩-২৪ বিতরণবর্ষে ডিলারদের জন্য
বীজ বরাদ্দের বুকিংয়ের শেষ দিন ছিল ৫ নভেম্বর। নির্ধারিত সময়ে রংপুর অঞ্চলের ৮৫৬ ডিলারের
মধ্যে বুকিং দিয়েছেন ৭৪৯ জন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কোল্ড স্টোরেজ থেকে বীজ সংগ্রহ
করতে হবে তাদের। হরতাল-অবরোধ চলতে থাকলে পরিবহন সংকটে নির্ধারিত সময়ে বীজ সংগ্রহ নিয়ে
সংশয় দেখা দিয়েছে ডিলারদের মাঝে। আবার নভেম্বরের মধ্যে কৃষকের কাছে বীজ বিক্রি করতে
না পারলে লোকসানের ঝুঁকিও রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে মানসম্পন্ন বীজ না পেলে আলু আবাদে
নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে কৃষকদেরও।
বিএডিসি রংপুর
অঞ্চলের উপপরিচালকের (বীজ বিপণন) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুর বিভাগে
বীজ আলু বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ১৪৫ দশমিক ৯১৫ টন। এর মধ্যে নিবন্ধিত ডিলারদের জন্য বরাদ্দ
২ হাজার ৪৮৪ টন। কৃষক, বীজ আলু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং এনজিওর
চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিক্রির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৬৬১ দশমিক ৯১৫
টন।
এর মধ্যে রংপুর জেলায় বুকিং দিয়েছেন ১৯২ ডিলার। নীলফামারীতে ১৪১, লালমনিরহাটে ১১৭,
গাইবান্ধায় ১৩৭ ও কুড়িগ্রামে বুকিং দিয়েছেন ১৬২ জন। রংপুর জেলার প্রত্যেক ডিলারের জন্য
বরাদ্দ ৩ হাজার ২০০ কেজি। বাকি চার জেলার ডিলারদের জন্য বরাদ্দ ২ হাজার ৮০০ কেজি। ২০২২-২৩
বিতরণবর্ষে আলুর বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৫৬৭ দশমিক ৯৬৯ টন এবং প্রতি কেজি বীজ আলু ডিলার
ও কৃষক পর্যায়ে বর্তমানের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করেছে বিএডিসি।
এ অঞ্চলের ডিলারদের
দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, রংপুরসহ ১৮টি কোল্ড স্টোরেজ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। তবে প্রায়
৬০০ টন বীজ ডিলারদের নদীর ওপারে অর্থাৎ টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, মুন্সিগঞ্জসহ দূরের জেলার
কোল্ড স্টোরেজ থেকে বাধ্যতামূলক সংগ্রহ করতে হবে।
রংপুর নগরীর
বিএডিসির ডিলার মো. ফিরোজ আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আলুর বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় স্বাভাবিকভাবে চলতি মৌসুমে
আলুবীজের চাহিদা বেশি থাকবে। আমিও আশায় ছিলাম বীজ বিক্রি করে লাভবান হব। কিন্তু হরতাল
ও অবরোধ কর্মসূচিতে; বিশেষ করে কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু পরিবহনে যানবাহন ভাড়া করা কঠিন
হবে। নভেম্বরে বীজ কৃষকরা না পেলে অবিক্রীত থেকে যাবে। তাছাড়া বীজের যে দাম নির্ধারণ
করা হয়েছে, কৃষক না নিলে পরে খাওয়ার আলু হিসেবে বিক্রি করলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ডিলাররা।’
রংপুর আঞ্চলিক
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা
হয়েছে ৯৮ হাজার ৫১০ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৭ লাখ ৩২ হাজার ১৫৪ টন। এবার
ডিলার পর্যায়ে প্রতি কেজি ভালো মানের বীজ সাড়ে ৫৩ টাকা ও বি গ্রেডের বীজ ৫২ টাকা দাম
নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষক পর্যায়ে ভালো মানের বীজ ৬০ টাকা এবং বি গ্রেডের বীজ সাড়ে
৫৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া অন্য জাতগুলো প্রকার ভেদে ডিলার এবং কৃষক পর্যায়ে
৪-৭ টাকা কমবেশি হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা
বিএডিসি বীজ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. তাজমিনুর রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো না হলে
পরিবহনের অভাবে ডিলারের পক্ষে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জের মতো দূর-দূরান্ত থেকে আলু আনা
সম্ভব হবে না। একেক স্থানের কৃষক একেক জাতের আলু আবাদ করেন। নির্দিষ্ট সময়ে কৃষকদের
চাহিদা মোতাবেক বীজ দেয়া না গেলে বাধ্য হয়ে কম দামে খাওয়ার আলু হিসেবে বিক্রি করতে
হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন, শুধু আলু নয়, রবি মৌসুমে কৃষক পরিবহনের অভাবে তাদের উৎপাদিত
শস্যের বাজার দাম ভালো পাবেন না।’
বিএডিসি (বীজ
বিপণন) রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক মো. মাসুদ সুলতান বলেন, ‘রংপুর অঞ্চলে বীজের চাহিদা নির্ধারণ
হয়েছে জাতীয় পর্যায় বিবেচনায়। এবারের চেয়ে গতবার বীজ আলুর পরিমাণ বেশি থাকলেও বিক্রি
হয়েছিল ২ হাজার ৫০০ টন। এমনকি দাম পুনর্নির্ধারণ করেও মাত্র ২০০ টন বিক্রি করতে পেরেছিলেন।
হরতাল ও অবরোধের কারণে ডিলাররা নদীর ওপারে, বিশেষ করে দূরের কোল্ড স্টোরেজ থেকে বীজ
আলু পরিবহনে ভোগান্তিতে পড়তে পারেন।’
রংপুর জেলা
প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, ‘রংপুর বিভাগে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে। তারপর শুধু আলুবীজ নয়,
যেকোনো ব্যবসায়ী যদি নিরাপত্তাসহ কোনো সহযোগিতা চান, আমরা সাধ্যমতো সহায়তা করতে প্রস্তুত।
এমনকি বাইরের জেলায় যদি সহায়তা প্রয়োজন হয়, আমরা তাও দিতে প্রস্তুত। জেলায় পর্যাপ্ত
বীজ আলু মজুদ আছে।’