চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় উপকূলে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন গহিরা গ্রামের বাসিন্দারা। কেউ সাগর থেকে নৌকায় করে নিয়ে আসছে মাছ, কেউবা ঝুঁড়িতে করে মাছ নিয়ে আসছে মহালে বালুর চরে। আবার পলিথিন কিংবা তেরপালে ছিটিয়ে রোদে শুকাচ্ছে সেই মাছ। এভাবে চলছে শুঁটকি শুকানোর কাজ।
বর্ষাকাল বিদায় নেওয়ার পরই উপজেলায় শুঁটকি তৈরির মৌসুম শুরু হয়। শীত থেকে গ্রীষ্ম পর্যন্ত চলে শুঁটকি তৈরি। সাগর ঘেঁষে উপকূলে বাঁশ দিয়ে মাচাং তৈরি করে চলছে শুটকি শুকানোর কাজ। অনেকে আবার সাগরের মধ্যে মাছ ধরার নৌকায় শুকাচ্ছেন শুটকি। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শুটকির চাহিদা ব্যাপক। দেশের সবচেয়ে বড় শুটকির বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকায়। সেখান থেকে সারাদেশের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হয় শুটকি। আর চট্টগ্রামের অতি সন্নিকটে আনোয়ারা উপজেলার অবস্থান। এখানে রয়েছে সামুদ্রিক মাছের ব্যাপক উৎস। আনোয়ারা উপকূলে তাই একটি মানসম্মত, আধুনিক শুটকি পল্লী গড়ে তুলতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
জানা যায়, উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বঙ্গোপসাগর উপকূলের গ্রাম গহিরা। এখানকার বেশির ভাগ মানুষের জীবিকা চলে সমুদ্রের মাছ ধরে। বিগত ১০ বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে চলছে শুঁটকি ব্যবসার কাজ। এ কাজে ৩৫টি শুঁটকি মহালে হাজারেরও অধিক নারী-পুরুষ কাজ করেন। এ ছাড়া আরও তিন-চার হাজার মানুষ নানাভাবে এ কাজে যুক্ত। শুঁটকি ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ী। আবার অনেকে কক্সবাজারের চকরিয়া, মহেশখালী থেকেও আসেন ব্যবসা করতে। চিংড়ির পাশাপাশি লইট্যা, ছুরি শুঁটকি, বাইলাসহ আরও কয়েক ধরনের শুঁটকি তৈরি হয় এখানে। সাগর থেকে জেলেরা বিভিন্ন প্রজাতির ইছা-চিংড়ি মাছ সংগ্রহ করে উপকূলে নিয়ে আসেন। উপকূলের শুঁটকি ব্যবসায়ীরা এই মাছ প্রতি কেজি ১০০ থেকে দেড় শ টাকা দিয়ে কিনেন। এরপর বালু চরে পলিথিন বিছিয়ে চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ। প্রতি মহালে দৈনিক ১০০০ থেকে ১২০০ কেজি শুঁটকি উৎপাদন হয়।
আনোয়ারা উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল হক বলেন, আমাদের তালিকাভুক্ত ২০জন শুঁটকি ব্যবসায়ী রয়েছেন। এদেরকে শুঁটকির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শীত মৌসুমের তিন থেকে চার মাস উপকূলে শুঁটকির কাজ চলে। শুঁটকির ব্যবসায় বিভিন্নভাবে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এই শুঁটকি পাইকারি ব্যবসায়ীরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বিদেশে নিয়ে যান।