প্রত্যেক মানুষের
সুস্থ শরীরের জন্য প্রয়োজন ভালো ঘুম। কিন্তু আমাদের অনেকের পক্ষেই তা সম্ভব হয়ে ওঠে
না। কারণ
আমরা প্রত্যেকেই
জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে আজ মহাব্যস্ত। যাদের পরিপূর্ণ ঘুম হয় না, তারা হালকা ন্যাপ নিতে পারেন। দীর্ঘ ঘুমের
মতো উপকার না হলেও ন্যাপ নিলে শরীর ঝরঝরে থাকে।
শান্তিপূর্ণ ঘুমের জন্য প্রয়োজন: একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করুন। লাইট বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। কোনো ধরনের শব্দ হয় না-
এমন জায়গা বেছে নিন ঘুমের জন্য। ঘুমানোর আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো বন্ধ করে রেখে দূরে
সরিয়ে রাখুন। আবার ভালো ঘুমের জন্য বালিশও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
খাপ খাওয়ানো : রুটিনে
কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। শরীরের সঙ্গে মানিয়ে নিন। প্রথম এক সপ্তাহ সমস্যা মনে হলেও
পরে ঠিক হয়ে যাবে। আপনি ক্লান্তি বোধ করছেন, ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে, কাজ, সংসার, সন্তানদের
ঝামেলা- সব মিলিয়ে ঘুম কঠিন করে তুলছে। অর্থনৈতিক কষ্ট, বন্ধুত্বে ফাটল অথবা কোনো কঠিন
অসুখ ঘুমের নরম পেলব একেবারে অসম্ভব করে তুলতে পারে। হয়তো আপনি এ ফ্যাক্টরগুলো একেবারে
হাতের মুঠোয় আনতে সক্ষম হবেন না। কিন্তু ঘুমের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করুন এবং কিছু অভ্যাস
গড়ে তুলুন, যা কিনা শান্ত ঘুম আনতে সহায়তা করবে।
ভালো ঘুমের জন্য আরও কিছু উপায় : প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যান এবং একই সময় ঘুম থেকে উঠুন। ছুটির দিনগুলোয়
ঘুমের একই রুটিন বজায় রাখুন। তরল খাদ্য সন্ধ্যার পর থেকে কমিয়ে দিন। ঘুমের অন্তত ২
ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন। তরল খাবার বেশি খেলে সারারাত ঘুম ভেঙে যাবে, ঘুমের
ব্যাঘাত ঘটবে।
নিকোটিন, কফি
ও অ্যালকোহল সন্ধ্যা বেলায় পরিহার করুন। এসব উত্তেজক খাবার আপনাকে জেগে রাখতে সহায়তা
করে। ধূমপায়ীদের রাতে ধূমপান না করার পার্শ্বপ্রক্রিয়ায় ঘুমের ব্যাঘাত হয়। কফি পান
করলেও ঘুমানোর ৮ ঘণ্টা আগে করুন। কারণ কফি শরীর জমা করে রাখতে পারে না। পানের অনেকক্ষণ
পর পর্যন্ত শরীর থেকে কফি নিঃসরণ হয় এবং এর প্রভাব বজায় থাকে। প্রচলিতভাবে মনে হলেও
অ্যালকোহল ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে।
প্রতিদিন অল্পবিস্তর ব্যায়াম করুন : প্রতিদিনের হালকা অ্যারোবিক ব্যায়াম আপনার শরীরে একটা অচ্ছেদ্য ঘুম
উপহার দিতে পারে।
সাধারণত রাতেই ঘুমান : দুপুরের ঘুম আপনার রাতের শান্ত বিশ্রাম কেড়ে নিতে পারে। দুপুরের ভাতঘুম
নিতে হয়, তবে তা আধাঘণ্টার বেশি নয়। আপনি এক আরামদায়ক ম্যাট্রেস ও নরম বালিশ বেছে নিন।
যদি কেউ আপনার সঙ্গে ঘুমায়, তবে দেখতে হবে দুজনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে কিনা। সন্তান
বা পোষা প্রাণির জন্য একই বিছানায় ঘুম কখনো কখনো আপনার শান্তিপূর্ণ ঘুমের ব্যাঘাতের
মূল কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।
শুরু করুন একটা
শিথিল ঘুমের রুটিন সময়। একই কথা প্রতিরাতে আপনার মনকে শোনান। যেমন- এখন সব বন্ধ করে
আমি ঘুমাব। এটির পূর্বপ্রস্তুতি হতে পারে একটা সুন্দর গোছালো বা একটি বইপড়া বা কোনো
হালকা গান শোনা। আলোটাও হতে হবে বন্ধ কিংবা স্নিগ্ধ।
যখন আপনি ক্লান্ত
এবং ঘুমে ভেঙে পড়ছেন, তখনই আলো বন্ধ করুন এবং ঘুমাতে যান। যদি ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে
ঘুম না আসে, তাহলে আবার কাজ করতে উঠে পড়ুন এবং ক্লান্ত হলে ঘুমাতে যান।
ঘুম নিয়ে অযথা
কোনো দুশ্চিন্তা ঠিক নয়। ঘুমের দুশ্চিন্তাই আপনাকে ঘুমাতে দেবে না। ঘুমের ওষুধ শুধু
শেষ অবলম্বন হিসেবে রাখুন। ডাক্তারের পরামর্শে শুধু ঘুমের ওষুধ খেতে পারেন। ক্রমে সেটিও
কমিয়ে দিন। তবে সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব থাকলে, শরীরে ঝিমুনি থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে
মোটেও ভুলে যাবেন না।