নর্স পুরাণের থরকে এ সময়ে এনে ফেলেছিল মার্ভেল। এমসিইউতে থরকে নিয়ে প্রথম একক সিনেমা হয়েছিল ২০১১ সালে। কেনেথ ব্রানার মতো পরিচালক ছিলেন সেখানে। মাল্টিভার্সের প্রস্তুতি তখন থেকেই মার্ভেল নিচ্ছিল কিনা সেটা নিশ্চিত নয়, তবে থরকে অ্যাভেঞ্জার্সে যুক্ত করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছিল। পরবর্তী সিনেমাগুলোতে এর রেশ পাওয়া যায়। কেনেথ ব্রানা সুপারহিরো জনরার সিনেমার পরিচালক নন, কিন্তু থর নির্মাণে ব্রানার নিজস্ব ছাপ রয়েছে। কিন্তু তাতে মার্ভেলের চরিত্র ও গল্প কথনের পরিচিত ধারা তিনি বদল করেননি। ২০১৩ সালের থর: দ্য ডার্ক ওয়ার্ল্ডের পরিচালক ছিলেন অ্যালান টেইলর এবং সে সিনেমায়ও মার্ভেলের পাশাপাশি থরের সিনেমাটিক জার্নি ও গল্পের একটা ‘মুড’ ছিল, যা পুরাণ ও আধুনিক বিজ্ঞানকে যুক্ত করে।
অ্যাভেঞ্জার্সের জনপ্রিয়তার পর মার্ভেলের সিনেমাটিক যাত্রাটা বদলে যায়। যুক্ত হয় নতুন নতুন চরিত্র। পাশাপাশি গল্পগুলো ভিন্নভাবে বলারও একটা চেষ্টা দেখা যায়। অ্যাকশনের পাশাপাশি কমেডি ঢুকতে শুরু করে। তবে কমেডির এ ধারায়ও পরিবর্তন আনেন টাইকা ওয়াইটিটি। এক্ষেত্রে বড় প্রভাব রেখেছিল জেমস গুন পরিচালিত গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি। ২০১৭ সালে এর দ্বিতীয় সিনেমা মুক্তি পায়। একই বছর মুক্তি পায় থর: র্যাগনারক। টাইকা ওয়াইটিটি পরিচালিত এ সিনেমায় কমেডির ধারাটি তিনি নিয়ে আসেন। তবে সেখানেও থরের পারিবারিক গল্প, ওডিনের মৃত্যু, হেলার বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি থর ও লোকির যে রসায়ন তৈরি হয় তার গুণে সিনেমাটি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। সেখান থেকেই টাইকা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন যে থরকে তিনি যেভাবে তৈরি করেছেন দর্শক তেমনটাই পছন্দ করবে। থর: লাভ অ্যান্ড থান্ডার তাই তিনি নিজস্ব ধারাতেই তৈরি করলেন।
সিনেমাটির দর্শক প্রতিক্রিয়া মিশ্র। বক্স অফিস আয়ের দিক থেকে পিছিয়ে নেই এ সিনেমা, তবে দর্শক নানা করণে এ থর নিয়ে অসন্তুষ্ট। বিশেষত নর্স পুরাণের দেবতাকে কিছুটা হলেও খেলো করে তুলেছেন টাইকা। র্যাগনারকে নিরেট গল্পের জোরে সিনেমাটি উতরে গিয়েছিল। লাভ অ্যান্ড থান্ডারে গল্পের সে জমাটি ভাব নেই। কমেডি যেটুকু আনা হয়েছে তা হালকা। মূল গল্প মোটেও থরের না। লাভ অ্যান্ড থান্ডারে গর দ্য গড বুচার এবং মাইটি থরের গল্প প্রধান। অভিনয়ের কথা বললে ক্রিশ্চিয়ান বেল যথেষ্ট ভালো অভিনয় করেছেন। নাটালি পোর্টম্যানের অভিনয়েও খামতি ছিল না। পুরনো প্রেম ফিরে পাওয়া থরের কিশোরসুলভ আচরণে সরলতা ছিল।
থরের আগের সিনেমাগুলো নিয়ে ওয়াইটিটি সন্তুষ্ট ছিলেন না। তার মতে জেন ফস্টারের চরিত্রটি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করা হয়নি। এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছিলেন, ‘তার চরিত্রটি আগের সিনেমাগুলোতে গুরুত্ব দিয়ে লেখা হয়নি। এখানে তাই আমি আগ্রহোদ্দীপক একটি নারী চরিত্র তৈরি করতে চেয়েছি।’ চরিত্র তিনি তৈরি করেছেন কিন্তু মাইটি থরের নেপথ্য গল্প, জেন ফস্টারের অসুখ আরো সময় নিয়ে বিকশিত হওয়ার প্রয়োজন ছিল। অন্যদিকে কমিকপ্রেমীরা গরের উপস্থাপনা নিয়ে অসন্তুষ্ট। ক্রিশ্চিয়ান বেল চেয়েছিলেন যেন অতিরিক্ত মেকআপ দিয়ে তার চেহারা বদলানো না হয়। সেদিক দিয়ে ওয়াইটিটি শতভাগ সৎ ছিলেন কিন্তু গরের চরিত্রের তীব্রতা ও গভীরতা উঠে আসেনি। গর ঠিক খল না, প্রতিনায়ক। কিন্তু এ সিনেমায় গরকে সেভাবে পাওয়া যায় না। অনেকের অভিযোগ, গরকে ছেলেধরা বানিয়ে দিয়েছে ওয়াইটিটি।
সিনেমায় দর্শককে মজা দিতে চেয়েছেন টাইকা। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি মজা করে সিনেমা বানাতে চেয়েছি। আমার মনে হয় র্যাগনারকে এর মধ্য দিয়ে আমরা এ সিরিজ অন্য অভিনেতাদের জন্য আগ্রহের বিষয় করে তুলেছি।’ জিউসের চরিত্রে রাসেল ক্রোকে নিয়ে দর্শকের আগ্রহ তুঙ্গে ছিল, কিন্তু গ্রিক পুরাণের দেবতাকে যেভাবে ভাঁড় বানালেন টাইকা তা অনেকেরই ভালো লাগবে না। অবশ্য সিনেমার শেষটা যেমন রাখা হয়েছে তাতে মনে হয় জিউস আবার ফিরবেন এবং সেখানে জিউসই হবেন প্রধান খলনায়ক। এতসবের মধ্যে সিনেমাটি পছন্দ করার মতো দর্শকও কম নন। সে কারণেই সিনেমাটি বক্স অফিসে ৬০ কোটি ডলারের বেশি আয় করেছে। বৈশ্বিক আয় এ মাসেই ৭০০ কোটি ডলার ছাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ সাফল্যের পেছনে ওয়াইটিটির চেয়ে মার্ভেলের জনপ্রিয়তার প্রভাব বেশি—এমনটা বলা ভুল হবে না।
তবে এ সিনেমা ঘৃণা ত্যাগ করে ভালোবাসা ছড়ানোর সনাতন বার্তাটি দেয়। গরকে শেষ পর্যন্ত করে দেয় মানবিক এবং সেখানে কৃতিত্ব থর এবং বলিদান মাইটি থরের। সংবেদনশীল এ অংশ সিনেমার নামকে যথার্থতা দেয়ার পাশাপাশি দর্শককে প্রভাবিত করেছে।