পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে ১২টি ওয়ার্ডের সড়কের পিচ ঢালাইসহ ইটের খোয়া ওঠে গিয়ে খানাখন্দকে তৈরি হয়েছে মরণ ফাঁদ। শুধু তাই নয়, সঠিক বর্জ্যব্যবস্থাপনা না থাকায় শহরের প্রবেশদ্বার সড়কের পাশে, বাসাবাড়ির আশপাশ যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার স্তুপ করায় পরিবেশ পরেছে হুমকির মুখে। এছাড়াও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই রাস্তা-ড্রেনেজের কাজ শুরু হবে বলে এবার আশার বাণী শুনালেন পৌরসভার সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত প্রশাসক।
১৯৯৭ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভাকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। পৌরসভার ১৩৫ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে পাকাকরণ করা হয়েছে ৮৫ কিলোমিটার ও ৫০ কিলোমিটার রাস্তা এখনো কাঁচা রয়ে গেছে। ৮৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক হলেও এসব রাস্তার প্রায় ৮০ শতাংশরই অবস্থা বেহাল।
চলতি বর্ষা মৌসুমে দেখা যায়, সড়কগুলো দীর্ঘ দিন থেকে সংস্কার না করায় ও যানচলাচলে রাস্তাগুলোর পিচের ঢালাই ও ইট উঠে গিয়ে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টিতেই রাস্তার গর্ত গুলোতে কোথাও কোথাও হাঁটু সমান পানি জমে থাকে। গাড়ি নিয়ে এসব রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন অনেকে। এছাড়াও পানি জমে থাকার কারণে রাস্তায় চলাচলকারীদের শরীরে কাদা পানি ছিটকে পোশাক নষ্ট হচ্ছে।
এছাড়াও পানি নিষ্কাশনের জন্য ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জজ কোর্ট চত্বরসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আর সেই পানি বাসাবাড়িতেও ঢুকে যায় বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। অন্যদিকে শহরের প্রবেশদ্বার সড়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়কের ধারে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার স্তুপের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ জনসাধারণ।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দুর্নীতি আর অনিয়মের কারণে দীর্ঘ ১০-১৫ বছর ধরে পৌরসভার রাস্তাঘাটের অবস্থা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোনো উন্নয়ন হয়নি। এতে চলাচল করতে দুর্ঘটনার শিকারসহ সামান্য বৃষ্টিপাতে সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি ও ড্রেনের পানি বাসাবাড়িতে প্রবেশ করে। এমন অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশে বসবাসে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। এবিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষকে অবগত করলেও নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ।
গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা রনি ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের সড়কের বেহাল দশা। আমার বাসার সামনের সড়কটি দেখ মনে হয় না এটা পাকা। রাস্তার সবকিছু ওঠে গিয়ে এখন কাঁচা রাস্তায় পরিণত হয়েছে। আর সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু সমান পানি জমে থাকে রাস্তায়। দুর্নীতির কারণে আজকে পৌরসভার রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ড্রেন ও ময়লা আবর্জনার স্তুপ দিয়ে এমন অবস্থা। আমরা এগুলোর দ্রুত সংস্কার ও দুর্নীতি মুক্ত দেশ চাই।
এদিকে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার ভাগারে পরিবেশ দূষণ হওয়ার পাশাপাশি দূর্গন্ধ ও ভাঙ্গাচোড়া ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে সধারণ মানুষসহ বিদ্যালয় ও কলেজে যেতে শিক্ষার্থীদেরও পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ।
ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, রাস্তার ভাঙ্গাচোড়ার জন্য প্রাইভেট ও কলেজে যাওয়া আসা করতে খুবই সমস্যা হয়। এসব রাস্তা দিয়ে অসুস্থ মানুষকে নিয়ে গেলে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যায় এমনকি সুস্থ মানুষও রাস্তার অবস্থার জন্য অসুস্থতা বোধ করে। বৃষ্টির দিনে তো অবস্থা আরও নাজেহাল। আমরা চাই সড়ক গুলো দ্রুত সংষ্কার করা হোক।
পৌর শহরের রাস্তার থেকে গ্রামের রাস্তাও অনেক ভালো আছে জানিয়ে অটোচালকরা বলেন, সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে দুর্ঘটনার শিকারসহ গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ দ্রুত নষ্ট হচ্ছে ও রাস্তা ভাঙ্গা এবং গর্তের জন্য যাত্রীরাও গাড়িতে ওঠতে চায় না। এছাড়াও আরও অন্যান্য ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ও সড়কে চলাচলকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে রাস্তা সংস্কার এবং ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অনুরোধ জানান পৌর কর্তৃপক্ষকে।
পৌরসভার দায়িত্ব প্রাপ্ত নতুন প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সরদার মোস্তফা শাহিন জানান, পৌরসভার রাস্তা গুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে ও সড়ক সংষ্কারের জন্য ইতিমধ্যে ৬৩ কোটি টাকার এস্টিমেট তৈরি করা হয়েছে। এটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি আমরা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে যেন কাজ গুলো করতে পারি সেটি চেষ্টা করছি।
তিনি আরো বলেন, অনেক জায়গায় সড়কের পাশে ময়লা আবর্জার ভাগার রয়েছে। পৌরসভার কিছু গাড়ি নষ্ট হওয়ায় ও জনবল কম থাকার কারণে কার্যক্রম বিঘ্ন হয়েছে। ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গাড়িগুলো মেরামত করা হচ্ছে। সেগুলো ঠিক হলে পৌরসভাকে মানসম্মত অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করেন তিনি।