![Image](https://cdn.ajkerdarpon.com/images/723714213b51ce7725ea97e4e061f3da.jpeg)
কখনো কখনো সিনেমায় প্রপস খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর ভারতীয় ঐতিহাসিক সিনেমা হলে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে গয়না। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া মনি রত্নমের পোনিয়িন সেলভান সিনেমার জন্যও এ কথা প্রযোজ্য। একটি দৃশ্যে ভালাভারিয়া ভানিদিয়াদেব খুব কড়া প্রহরায় থাকা রাজকুমারী নন্দিনীর বাসস্থানে ঢোকার সুযোগ পান ছোট্ট একটি আংটি দিয়ে। আংটিটা তাকে দিয়েছিলেন নন্দিনী নিজেই।
যুদ্ধের ছাপ পড়া ভানিদিয়াদেবের হাতে নন্দিনীর নরম কোমল হাত থেকে আংটি দেয়ার দৃশ্যটি দেখানো হয় একটি ক্লোজ আপে। কোনো আগ্রহী দর্শকের চোখ এ দৃশ্য এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়। শুধু ওই আংটি নয়। দশম শতাব্দীর চোল রাজত্বকে কেন্দ্র করে তামিল লেখক কল্কি কৃষ্ণমূর্তির জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত মণি রত্নমের এ সিনেমার একটি বড় জায়গা দখল করে আছে গয়না। নন্দিনী চরিত্রে ঐশ্বরিয়া, চোল রাজকুমারী কুন্দবাই ও কুন্দবাইয়ের বন্ধু ভানাথির মতো প্রধান সব নারী চরিত্রকেই জমকালো গয়নায় সজ্জিত দেখা যায়। সিনেমায় ব্যবহৃত এ গয়নাগুলো হায়দরাবাদের জুয়েলার্স কিষানদাস অ্যান্ড কোংয়ের বানানো।
এভাবেই গয়নার উপস্থিতি দশকের পর দশক ধরে অনেক সিনেমায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে আসছে। কখনো ভালোবাসা, কখনো বিশেষত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে। গানের রচয়িতারাও নারীদের সৌন্দর্যকে হীরা, মুক্তা বা অন্যান্য রত্নের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সব মিলিয়ে এসব গয়নাও একেক সময় হয়ে উঠেছে একটি চরিত্র। কিছু সিনেমায় দেখা যায় নারীরা তাদের স্বামীর হাতে নিজের সব গয়না তুলে দিচ্ছেন, আর এসব বিক্রি করে নিজেকে এগিয়ে নেয়ার কথা বলছেন। আবার যখন নায়কের বড় হয়ে ওঠার সুযোগ আসে, তখন এক জোড়া চুড়ি বা হীরার কোনো হার বিক্রি করে ফেলতে হয়, যেটা তার কাছে ছিল মা বা প্রেমিকার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে।
সারা বিশ্বের পৌরাণিক কাহিনী, কল্পকাহিনী ও লোককাহিনীতে একটি আংটির চরিত্রের ওপরে নজর রেখেছেন ডনিগারও। সেটা কালিদাসা থেকে শুরু করে উইলিয়াম শেকসপিয়ার পর্যন্ত, সেই সঙ্গে হিন্দুইজম থেকে শুরু করে জুদাইজম পর্যন্ত। তিনি বলেন, আংটি বা ব্রেসলেটের ওই গোল আকার অনন্তকালের বৃত্তের অনুকরণ। সেটা মানুষের ক্ষণস্থায়ীতার মধ্যেই টিকে থাকে। প্রেমিক-প্রেমিকারা যেমন আসে ও যায়, বিয়ে শেষ হয়ে যায়, রাশিয়ান রাজকুমারীরাও হারিয়ে যায়, কিন্তু ওই আংটি থেকেই যায়।
তাই শুধু নয়, কখনো কখনো রোম্যান্সের অনুষজ্ঞও হয়ে উঠেছে গয়না। আবার কখনো কখনো কথা শুরু করার সবচেয়ে ভালো মাধ্যমও। মনি রত্নমের ‘থালাপাথি’ সিনেমায় একটি সোনার চুড়িই ভারতনাট্যম নৃত্যশিল্পী সুবালক্ষ্মী ও গ্যাংস্টার সূর্যের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে ফেলে। সুবালক্ষ্মী সূর্যের নির্দেশে তার চুড়ি বিক্রি করে একজন দরিদ্র মানুষের চিকিৎসার জন্য। থালাপাথিতে চুড়ি যে জাদু করেছে, সেই একই জাদু দেখিয়েছে সংগিতাম শ্রীনিবাস রাওয়ের সংলাপমুক্ত পুষ্পাকা ভিমানা সিনেমায়। অভিনেত্রী যখন দোকানে দাঁড়িয়ে কানে দুল পরছে, তখনই তার দিকে চোখ যায় ধনী ব্যবসায়ীর ভাব নিয়ে থাকা বেকার ছেলের। হঠাৎ মেয়েটি চারপাশে তাকায়। অভিনেতার চোখে চোখ পড়তেই তিনি ইতিবাচক ইশারা দেন। পরে যখন দুজনের আবার দেখা হয়, দেখা যায় সেই দুলটি ঝুলছে মেয়েটির কানে।
এমনকি সুজয় ঘোষের কাহানি সিনেমায়ও দেখা যায়, বিদ্যা বালান তার সশস্ত্র প্রতিপক্ষকে পরিকল্পিতভাবে আহত করেন চুলের কাঁটা দিয়েই। আবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প অবলম্বনে বানানো তিন কন্যা সিনেমায় সত্যজিৎ রায় দেখিয়েছেন, এক গৃহিনীর গয়নার প্রতি তীব্র আবেশ, যার কারণে একসময় সে বিবেক হারিয়ে ফেলে, শেষে হারায় জীবনও।
সৌন্দর্য, পরিচয়, ভালোবাসা ও মোহ ছাড়িয়ে এ গয়না দিয়েই কখনো কখনো তুলে ধরা হয়েছে অন্ধকার জগৎও। যেমন গাঙ্গুবাই কাঠিওয়ারির কথাই তোলা যাক। এখানেও আলিয়া ভাটের সব গয়না নির্বাচন করা হয়েছে সুনিপুণভাবে। বানসালির দেবদাসে পার্বতী ও চন্দ্রমুখীর গহনা থেকে শুরু করে বাজিরাও মাস্তানি ও পদ্মাবতী উভয় সিনেমায়ই গয়নার ব্যবহার দেখা যায়। গাঙ্গুবাইয়ে নাকফুলের ব্যবহারটি অস্বস্তিকর বা বেদনাদায়ক হলেও অন্য সিনেমা দুটিতে এর ব্যবহার স্বাভাবিক রাজকীয়। কেননা রাজপরিবারের রানীর পাশাপাশি রাজপুরুষরাও গহনা ব্যবহার করত। অন্যদিকে প্রিয়াংকা, দীপিকা, অদিতি রাও হায়দারীর সৌন্দর্য এতে বেড়েছে বৈ কমেনি। সময়কেও উপস্থাপন করেছেন বানসালি।