ভারতের মহারাষ্ট্রের
উপকূলীয় ভেলাস গ্রাম পর্যটকদের আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। বিপন্ন প্রজাতির অলিভ রিডলি কচ্ছপ
এর কারণ। একটি সংস্থা তাদের রক্ষায় কাজ করছে। গ্রামবাসীও এতে সম্পৃক্ত হয়ে লাভবান হচ্ছেন।
শিশু কচ্ছপরা টিম টিম করে সাগরের দিকে ছুটছে- এমন দৃশ্য দেখতে ভেলাসে ভিড় করেন পর্যটকরা। তাদের একজন মুম্বইয়ের শিক্ষার্থী শ্রুতি গোর। তিনি বলেন, আমি আমার আর্ট প্রজেক্টের জন্য এসেছি। প্রজেক্টের বিষয় ‘অ্যাট দ্য রেস'। সেজন্য কিছু ছবির দরকার ছিল। ভেবে পাচ্ছিলাম না, কী করবো। একসময় কনজারভেশন বা এমন কিছুর কথা ভাবছিলাম। পরে ভাবলাম, কচ্ছপেরা সাগরে যাচ্ছে এমন ছবি তুলবো। কারণ এটাও একধরনের বাঁচার জন্য প্রতিযোগিতা।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে অতিষ্ঠ তিন মহাদেশের মানুষ
শীতে একেকটি নারী কচ্ছপ সর্বোচ্চ ১৬০টি ডিম পাড়ে। কয়েক বছর আগেও স্থানীয়রা সেসব ডিম খেয়ে ফেলতেন বা বিক্রি করতেন। ২০ বছর আগে এই অবস্থার পরিবর্তন হয়। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা এনজিও ‘সেহিয়াদ্রি নিশার্গ মিত্র’ কচ্ছপদের রক্ষায় এগিয়ে এসেছিল। ‘ওয়াশিংটন কনভেনশন অন ওয়াইল্ডলাইফ ট্রেড’ অলিভ রিডলি প্রজাতির কচ্ছপকে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
গবেষক মোহন
উপাধ্যায় জানান, যারা সৈকতে ঘুরে কচ্ছপের ডিম সংগ্রহ করতেন তাদের আমরা বোঝানোর চেষ্টা
করেছি। কচ্ছপ ও তাদের ডিমের গুরুত্ব বুঝিয়েছি আমরা। এভাবে শিকারিরা একসময় কচ্ছপ সংরক্ষণের
অংশ হয়ে ওঠে।
কচ্ছপদের নিয়ে
কাজ করে কিছু গ্রামবাসী এখন জীবিকা নির্বাহ করছেন। এটা সত্যিকার অর্থে একটি ইকো টুরিজম
হয়ে উঠেছে, যার কারণ মানুষ ও প্রাণী উভয়ই লাভবান হচ্ছে।
ম্যানগ্রোভ ফাউন্ডেশনের বন্দন জাভেরি বলেন, ‘‘আপনি যখন কিছু সম্পর্কে জানেন তখন তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝতে পারেন, তাদের রক্ষার তাগিদ অনুভব করেন। এটাই ইকো টুরিজমের গুরুত্ব: এটা প্রজাতি, আবাস ও দর্শকদের এক করে।’’
আরও পড়ুন: টমেটো বিক্রি করে এক মাসেই কোটিপতি কৃষক
প্রায় সাত বছর
ধরে কচ্ছপ দেখতে আসা পর্যটকদের আপ্যায়ন করছে সিদ্ধি কুলাপকার ও তার পরিবার। প্রতিবছর
ভেলাস কচ্ছপ উৎসবের সময় তারা তাদের ঘরকে ‘হোম স্টে'তে পরিণত করেন। সিদ্ধি বলেন, হোম স্টে শুরুর পর আমাদের খুব
ভালো হয়েছে। আগে এখানে কিছু ছিল না। একমাত্র কাজ ছিল দিনমজুরি। কিন্তু এখন আমরা ভালো
উপার্জন করছি। প্রতিবছর অনেক পর্যটক আসছেন।
প্রকৃতির ক্ষতি না করে প্রকৃতি উপভোগ সম্ভব করতে কিছু নিয়ম চালু করা হয়েছে। ‘‘যেমন সৈকতে বালু দিয়ে কিছু করা যায় না। পর্যটকরা চাইলেও ওয়াটার স্পোর্টসের অনুমতি নেই। সৈকতে কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই। আর গাড়ি শুধু দূরে পার্ক করা যায়। মূল লক্ষ্য হচ্ছে কনজারভেশন,’’ বলেন মোহন উপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: নারী বিশ্বকাপ শুরুর আগে নিউজিল্যান্ডে বন্দুক হামলা, নিহত ২
অলিভ রিডলি
প্রজাতির কচ্ছপ বাঁচাতে ভেলাসে শুরু হওয়া ইকো টুরিজম সৈকতের আরও দশ গ্রামে বাস্তবায়িত
হচ্ছে।