ভোট আইলি প্রার্থী অক্কলে আরারে স্বপ্ন দেহাই, ভোট যেগুলি আর হনো হবর ন লাহে, এহন নেতা অক্কলোরে হইলি গরিদিয়্যুম, অই যেগুবুই, দেশত বড় বড় সেতু-টানেল অর শুধু আরার বাঁশর অঁ ইবে নদ্দে না (নির্বাচন আসলে প্রার্থীরা এই সাঁকো নিয়ে আমাদের স্বপ্ন দেখায়, পরে আর খবর থাকেনা, এখন নেতাদের জানালে তাদের শুধু ‘হয়ে যাবে- করে দেব’এ কথা গুলো আর আমাদের বিশ্বাস হয়না। দেশে বড় বড় সেতু-টানেল হচ্ছে কিন্তু আমাদের এই সাঁকো সেতু হয়না।)
রোববার সকালে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ও জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম সাপমারা খালের ভেঙেপড়া বাঁশের সাঁকোটির ছবি তুলতে গেলে স্থানীয়রা এ কথাগুলো বলেন। টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির তোড়ে পুরোনো বাঁশে তৈরি এই সাঁকোটি গত বুধবার ভেঙে যায়। এসময় আহমদ হোসেন (৬০) নামের এক বৃদ্ধ আহতও হয়। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ভাঙাগড়ার এই খেলা চললেও সাঁকোটি সেতু না হওয়ায় দু’পারের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী জানান, সাপমারা খালে ৬৫ মিটারের সেতুর জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরানো বাঁশে নির্মিত সাঁকোটির মাঝখানে ভেঙে পড়েছে। সাঁকোর দাঁড়িয়ে থাকা বাঁশগুলোও ফেটে গেছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে লোকজনকে জরুরী কাজে পার হতে হচ্ছে। এসময় লোকজনের মাঝে ক্ষোভ দেখা যায়।
স্থানীরা জানান, দীর্ঘ চারযুগ ধরে দু’পারের মানুষের দাবী সাঁকোটি সেতু করার। নির্বাচন আসলে প্রার্থীরা সেতুর স্বপ্ন দেখায়, নির্বাচনের পর খবর থাকেনা। তাই অনেকেই এটাকে নির্বাচনী ওয়াদার সাঁকোও বলে। স্থানীয়রা স্ব-উদ্যোগে এটি মেরামত করলেও অধিক মানুষের যাতায়াত ও জোয়ারের পানির তোড়ে সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে ভেঙে যায়। ফলে এলাকার নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য সাঁকোটি পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টি,পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে সাঁকোটির মাঝখানের অংশ ভেঙে যায়। এসময় স্থানীয় আহমদ হোসেন নামের এক বৃদ্ধ আহতও হয়। পরে লোজন এসে তাকে উদ্ধার করে।
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী টানেল করতে পারলে মাত্র ৩০ মিটারের সেতু কেন করতে পারেনা!
জানা যায়, রায়পুর ও জুঁইদন্ডী দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম এই সাঁকোটি। জোয়ারের পানির আঘাতে সাঁকোটির অবস্থা নাজুক। এই সাঁকো দিয়ে দুই ইউনিয়নের নারী, শিশু ও বৃদ্ধ ছাড়াও রায়পুরের বহু শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য জুঁইদন্ডী জে কে এস উচ্চ বিদ্যালয় ও আনোয়ারুল উলূম মাদ্রাসায় যায়। তাছাড়া দুই ইউনিয়নের লোকজন এই সাঁকো দিয়ে আনোয়ারা সদর ও চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াত করে।
সরেঙ্গার বাসিন্ধা বৃদ্ধ মাহাবুব আলী (৬০) ক্ষোভের সাথে বলেন, “ছবি বওত তুইল্ল, আর ন তুইল্ল, আঁরা সেতু ন পায়, এহন আঁরা বাঁশ ভাঙি পরি মরিলি তই ছবি তুইল্ল, সরকার পদ্মা সেতু আর টানেল গরিত পাইল্লি আঁরার মাত্র ৩০ মিটার সেতু কা গরির ন পারের”।
জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাস্টার মো. ইদ্রীস বলেন, জোয়ারের পানিতে বুধবার সাঁকোটি ভেঙে যায়, জরুরী মেরামত না করলে দুই ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়বে।
আনোয়ারা উপজেলা প্রকৌশলী তছলিমা জাহান বলেন, ভাঙা সাঁকোটি জরুরী মেরামতের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা নেব। খালের ওপর ৬৫ মিটার পাকা সেতুর জন্য নতুন করে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সেতু নির্মাণে বরাদ্ধের জন্য “ডিও লেটার”ও দিয়েছেন। এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন এলেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করব।