দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ১০ নভেম্বরের আগে বা পরে হতে পারে এই ‘সচিব সভা’। এরই মধ্যে এ বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সভার তারিখ চূড়ান্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। সে অনুযায়ী এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আগামী নির্বাচনের ক্ষণগণনা। তবে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি পালন করছে তারা। অন্যদিকে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনে অনড় অবস্থানে ক্ষমতাসীনরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তপশিল ঘোষণা হতে পারে। এমন অবস্থায় ভোটের আগে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী রোববার (৫ নভেম্বর) সৌদি আরব সফরে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি ওআইসির আন্তর্জাতিক নারীবিষয়ক সম্মেলনে যোগ দেবেন। সেইসঙ্গে ওমরাহ পালন করবেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) তার দেশে ফেরার কথা। প্রধানমন্ত্রী ফিরে আসার পরই অনুষ্ঠিত হবে সচিব সভা। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই সভার তারিখ চূড়ান্ত হবে। সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনে ওই সভায় সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
নির্বাচনে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। সচিবরাও বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। এ ছাড়া নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও সচিবদের নিবিড় যোগাযোগ থাকে। সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনের সার্বিক আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিতে পারেন। সব মিলিয়ে নির্বাচনের মাস দেড়েক আগে সচিবদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠককে অনেকেই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন।
তবে ভিন্ন কথা বলেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘সচিব সভা একটি রুটিন কাজ। প্রধানমন্ত্রী মাঝেমধ্যেই সচিব সভা করেন। এটি নির্বাচনের আগেও হতে পারে, পরেও হতে পারে। আমি মনে করি, ভোটের আগে এই সচিব সভার আলাদা কোনো তাৎপর্য নেই। সচিবরা আইনের বাইরে গিয়ে অস্বাভাবিক কোনো কথা বলবেন বলে আমার মনে হয় না।’
একই মতামত দিয়েছেন সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আসলে সচিব সভা রুটিন ওয়ার্ক (নিয়মিত কাজ)। এখানে নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি আলাপ হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, নির্বাচনটা করেন মূলত মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। অর্থাৎ, ডিসি-এসপিদের হাতে দায়িত্ব থাকে। ডিসি-এসপিদের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, এমপি-মন্ত্রীদের যোগাযোগ থাকে। সচিবরা ওই অর্থে ভোটের সঙ্গে খুব বেশি যুক্ত থাকেন না। তবে ডিসি-এসপিদের সঙ্গে সচিবদের টুকটাক যোগাযোগ থাকে। এ যোগাযোগ দিয়ে ভোটে প্রভাব বিস্তার করা যায় না।’
সভার আলোচ্যসূচিতে যা আছে: সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিতে শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ, আগামী বছর সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করা, নির্বাচন উপলক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়, সড়ক দুর্ঘটনা, সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষ এবং অগ্রাধিকার প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতির বিষয়গুলো সভার আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছে। তবে এর বাইরে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচনকালে সচিবদের দায়িত্ব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।