দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট চরমে পৌঁছেছে। মানুষ খেতে পাচ্ছেন না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের আকাশছোঁয়া দাম। পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় বিশেষজ্ঞেরা। দেশের মানুষজনের মধ্যে খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ির ঘটনা প্রায়ই প্রকাশ্যে আসে। সরকারের তরফে গম বিলি করার আয়োজন করা হলে, সেই গম সংগ্রহ করতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে মৃত্যুর ঘটনাও বিরল নয়।
গত কয়েক দিনে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে এক লিটার দুধ বিকোচ্ছে ২১০ টাকায়। আটা, ময়দাও মহার্ঘ। প্রায় প্রতি দিনই অন্তত ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে বৃদ্ধি পাচ্ছে খাদ্যপণ্যের দাম। এই সার্বিক ন্যুব্জ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞেরা। দেশের প্রাক্তন সরকারি পরামর্শদাতা মনে করছেন, পাকিস্তান আগামী দিনে ‘ভৌতিক দেশ’-এ পরিণত হতে চলেছে।
আরও পড়ুন: বুরকিনা ফাসোতে সন্ত্রাসীদের হামলায় ৪২ জন নিহত
সাকিব শেরানি পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রকে প্রধান অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা হিসাবে কর্মরত ছিলেন।তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, লেবাননের মতো পরিস্থিতি হতে পারে পাকিস্তানেও। শেরানির মতে, আমেরিকার ব্যাংকের মতোই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পাকিস্তান রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও। তার মাথাতেও লোকসানের বোঝা। যার ভারে দেশটি অর্থনৈতিক দিক থেকে নুইয়ে পড়েছে। ফলে ভৌতিক রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে পাকিস্তানও।
পরিসংখ্যান বলছে, পাকিস্তানে বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার তলানিতে। ফলে বিদেশের ঋণ ইসলামাবাদ পরিশোধ করতে পারছে না। উল্টে মিত্র দেশগুলির কাছে হাত পাততে হচ্ছে বাধ্য হয়ে। বিদেশ থেকে আমদানি যতটা সম্ভব কমিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। আর্থিক সঙ্কটের মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ)-এর দ্বারস্থ হয়েছে দেশটি। পাকিস্তানকে রাজস্ব বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে আইএমএফ।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান এখন বাংলাদেশ হতে চায়
গত কয়েক বছরে একাধিক বিদেশি সংস্থা পাকিস্তান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে গিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে দেশকে ঘিরে ধরেছে সীমাহীন বেকারত্ব। সেই সঙ্গে প্রকৃতিও সঙ্গ দেয়নি। সাম্প্রতিক অতীতে বিধ্বংসী বন্যায় পাকিস্তানে প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতিও নজির গড়েছে দেশটিতে। মার্চ মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার পৌঁছে গিয়েছে ৩৫.৪ শতাংশ। ১৯৬৫ সালের পর থেকে যা সর্বোচ্চ।
আইএমএফের অনুমান, শুধুমাত্র চলতি বছরেই পাকিস্তানে মূল্যবৃদ্ধির হার ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। যা উপমহাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, শ্রীলঙ্কার পরেই। সাম্প্রতিক সঙ্কটে পাকিস্তানের ব্যাংকগুলির উপরে চাপ পড়তে শুরু করেছে। অর্থনীতিবিদ শেরানির মতে এই চাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে। ক্রমবর্ধমান সুদের হারে প্রভূত ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: মিসাইল পরীক্ষায় সফল পাকিস্তান
পাকিস্তানের টালমাটাল রাজনীতি, স্থিতাবস্থার
অভাব দেশের পরিস্থিতিকে দিন দিন আরও ভয়ানক করে তুলছে বলে দাবি শেরানির। তাঁর কথায়,
প্রতি দিন একটু একটু করে আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর
সম্ভাবনা কম।