ধান উৎপাদনের অন্যতম জেলা রংপুরে চালের বাজার অস্থির। গত ১০ দিনের ব্যবধানে চালের দাম কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। মাছ-মাংস, শাক-সবজির সঙ্গে চালের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষ হতে না হতেই চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে অটো রাইস মিলের মালিকদের সিন্ডিকেটকে দুষছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এদিকে ক্রেতারা দ্রুত চালের দাম কমাতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় প্রতিবছর নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকে। অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে আমন ধানের কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে। ধানের ভরা মৌসুমে চালের দাম কমার কথা থাকলেও নির্বাচনের আগে বাড়তে শুরু করে চালের দাম।
রংপুর সিটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গুটি স্বর্ণা চাল ৪৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। নির্বাচনের আগে এর দাম ছিল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা। স্বর্ণা চাল ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা ছিল ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা কেজি। বিআর-২৮ চাল বর্তমানে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা ছিল ৫০ থেকে ৫১ টাকা। জিরাশাইল বা মিনিকেট চাল ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা ছিল ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা। নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা ছিল ৬৬ থেকে ৬৭ টাকা।
রেলস্টেশন এলাকার রিকশাচালক সেলিম মিয়া বলেন, ‘চাইল-ডাইল, সউগ কিছুরে দাম বাড়তোছে। রিকশা চালায়া যা পাই তা রিকশার মালিককে জমা দেমো নাকি খরচ করি খামো। এর ওপর যে শীত পড়ছে! মানুষ বাহিরে বের হয় কম। আয়-ইনকাম কমি গেইচে। কিন্তু খাওয়া তো কমে নাই হামার। কী যে করো, দিশা পাইতোছো না।’
আনছারী মোড়ের শাকিল হোসেন বলেন, ‘নিত্যপণ্য আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। দ্রুত যদি এটি নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তাহলে গরিব মানুষকে না খেয়ে থাকতে হবে। আমরা চাই তিনবেলা যেন শান্তিমতো ডাল-ভাত খেতে পারি। সরকার আমাদের এটি নিশ্চিত করুক।’
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আমন মৌসুমে পর্যাপ্ত ধান উৎপাদন হলেও এর প্রভাব পড়েনি বাজারে। হাতে গোনা কিছু অটো রাইস মিল ও মজুদদার সিন্ডিকেট ধান-চাল মজুদ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা মিলগেট থেকে কেনা দামেই চাল বাজারে বিক্রি করছেন। চাল উৎপাদনে শীর্ষে থাকা উত্তরের জেলাগুলোতে চালের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা।
মাহিগঞ্জ এলাকার আড়তদার ফারুক হোসেন বলেন, ‘চালের এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কারসাজি রয়েছে বলে আমরা মনে করছি। ছোট ছোট হাসকিং মিলগুলো এখন আর চলে না। বড় অটো রাইস মিলের মালিকরা কম দামে ধান কিনে মজুদ করে নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া বড় বড় কৃষক ধান কাটা-মাড়াই করে ঘরে রেখে দিয়েছে। তারা বাজারে ধান বিক্রি করছে না। ফলে চালের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে।’
রংপুর সিটি বাজারের চাল ব্যবসায়ী শুভ কুমার বলেন, ‘নির্বাচনের আগে থেকে চালের দাম বাড়ছে। গত ১০ দিনে প্রকারভেদে কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। ফলে চাল বিক্রিও কমে গেছে। এ ছাড়া রংপুরে শীতের কারণে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি। ফলে ধান শুকাতে না পারায় চাল করতে পারছে না মিলমালিকরা। এতে বাজারে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’
রংপুর চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, ‘চালের দাম বৃদ্ধির জন্য অটো রাইস মিলগুলো দায়ী। অটো রাইস মিলমালিকরা আগে থেকে ধানের মজুদ গড়ে তুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে অটো রাইস মিলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে ছোট ছোট ব্যবসায়ী অসহায় হয়ে পড়েছে।’
রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, ‘জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার মনিটর করছে; অবৈধভাবে ধান-চাল মজুদকারীদের বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছে।’