পাংশা (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি:
কৃষি প্রধান রাজবাড়ী জেলায় আরও নিচে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানি। এই জেলায় ফল-ফসল উৎপাদনে অধিকাংশ কৃষককে পানির উৎস হিসেবে নির্ভর করতে হয় বিভিন্ন নদী ও ভূগর্ভস্থ পানির ওপর। তবে কয়েক বছরে রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন নদ-নদী ও ভূগর্ভস্থ পানি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যয় বেড়ে গেছে কৃষকদের।
অপরদিকে, জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে পানির প্রবাহ কমে যাওয়া এবং না থাকায় চরম সংকটে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। স্থানীয়রা এখন আর দেশি প্রজাতির মাছের তেমন স্বাদ পাচ্ছেন না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় এবং খনন না হওয়ার কারণে পানি ভূগর্ভে প্রবেশে বাধা পাচ্ছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্থিতিতল নিচে নেমে যাচ্ছে। নদীগুলোর খনন কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ বাড়তে পারে।
জেলার বিভিন্ন নদী ঘুরে দেখা গেছে, নদীগুলোতে পানি নেই বললেই চলে। খরস্রোতা নদীগুলো এখন পরিণত হয়েছে ছোট নালায়। নদীর বড় অংশজুড়েই পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। অনেকেই সেই পলিমাটিতে বিভিন্ন ফসল চাষ করছেন। নদীর অনেক জায়গা পরিণত হয়েছে খেলার মাঠে। বর্ষাকাল ছাড়া সব সময়ই এমন চিত্র বিরাজ করে।
জেলার পাংশা উপজেলার নাদুরিয়া গ্রামের কৃষক আসলাম আলী বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে এই জায়গায় কৃষিকাজ করছি। পাঁচ বছর আগেও গড়াই নদীর পানি দিয়ে আমার ক্ষেতে সেচ দিতাম। কিন্তু দুই বছর ধরে নদীর পানি একেবারে শুকিয়ে গেছে। এখন তো মাটিতে গর্ত করে ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন করে ফসলের ক্ষেতে দিতে হচ্ছে। তাও আবার ভূগর্ভস্থ থেকে ঠিকমতো পানি উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না।’
উপজেলার সুবর্ণখোলা গ্রামের কৃষক খায়রুল আলম বলেন, এই এলাকায় পানির স্তর খুবই নিচে। মেশিন দিয়েও পানি ঠিকমতো ওঠানো সম্ভব হয় না। কৃষিপণ্য উৎপাদনে খরচ দিন দিন বাড়ছে।
চরঝিকরি গ্রামের মৎষ্যচাষি আজম আলী বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেছি। কিন্তু এখন নদীতে পানি নেই, ফলে মাছও পাওয়া যায় না। আমি এখন মাছ ধরা বাদ দিয়ে অটো চালাই।’
রাজবাড়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় প্রতি বছরই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে। গত তিন বছরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৯ থেকে ১০ ফুট নিচে নেমেছে। জেলায় বর্তমানে ৪৫ থেকে ৫৫ ফুট নিচে পানি পাওয়া যাচ্ছে। অথচ তিন বছর আগেও এখানে ২৫ থেকে ৩৫ ফুট নিচে পানি পাওয়া যেত।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক গোপাল কৃঞ্চ দাস বলেন, খরা মৌসুমে কৃষকদের অনেক কষ্ট করে মাটির নিচ থেকে পানি তুলতে হয়। এতে খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে।