একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণের মত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৌলভীবাজারের বড়লেখার দুই ভাইসহ তিনজনের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। দণ্ডিত তিন যুদ্ধাপরাধী হলেন, আব্দুল মান্নান ওরফে মনাই, আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুল এবং তার ভাই আব্দুল মতিন। তাদের মধ্যে আব্দুল মতিন পলাতক; বাকি দুজন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
বিচারপতি মো.
শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার
এ মামলার রায় ঘোষণা করে। এ ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু আহমেদ
জমাদার এবং কে এম হাফিজুল আলম।
ট্রাইব্যুনালের
প্রসিকিউশন এ মামলায় যে পাঁচ দফা অভিযোগ এনেছিল, তার সবগুলো প্রমাণিত হওয়ায় তিন আসামির
সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় রায়ে।
আসামিদের মধ্যে
মনাইয়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এম সারোয়ার হোসেন, হাবুলের পক্ষে ছিলেন আব্দুস
সাত্তার পালোয়ান। হাবুলের ভাই পলাতক আব্দুল মতিনের পক্ষেও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে
আব্দুস সাত্তার পালোয়ানই শুনানি করেন।
ট্রাইব্যুনালের
তদন্ত সংস্থা বলছে, আজিজ ও মতিন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের
সঙ্গে ভারতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে পালিয়ে বড়লেখায় এসে তারা
হানাদার বাহিনীর কাছে আত্নসমর্পণ করেন এবং রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। তখন তাদের সাথে
যোগ দেন মান্নান।
২০১৬ সালের ১ মার্চ গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আব্দুল আজিজ বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। আর পলাতক মতিন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করতেন। আসামি মান্নান ওরফে মনাই ১৯৭১ সালে জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন বলে তদন্ত সংস্থার ভাষ্য।
মুক্তিযুদ্ধের
সময় তিনি বড়লেখা থানা শান্তি কমিটির সদস্য হন এবং রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। ২০১৬ সালের
১ মার্চ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করে।
প্রসিকিউটর
সাবিনা ইয়ানমিন মুন্নি বলেন, আসামিরা নিজেদের 'মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে দাবি করলেও ট্রাইব্যুনালে
এ বিষয়ে তারা যথাযথ প্রমাণ দিতে পারেননি।
“তারা যে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে গিয়ে রাকাজার বাহিনীতে যোগ দিয়ে হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতনসহ
অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িত ছিল তা ১৭ জন সাক্ষীর দেওয়া সাক্ষ্য ও দলিলপত্রে প্রমাণিত
হয়েছে। আমরা তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছি।”
ট্রাইব্যুনালের
তদন্ত সংস্থা ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর মনাই, হাবুল ও মতিনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে,
যা শেষ হয় দুই বছর পর ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর। ওই বছর ২৯ ফেব্রুয়ারি তিন আসামির বিরুদ্ধে
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।