দীর্ঘ সাত বছর
পর তিন দিনের সফরে সৌদি আরব গেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বিবিসির প্রতিবেদনে
বলা হয়েছে, এই নিয়ে আরব বিশ্বের নেতাদের মধ্যে যে মাত্রারআগ্রহ-উচ্ছ্বাস দেখা গেছে
তার নজির বিরল।
সংযুক্ত আরব
আমিরাত এবং কাতারসহ উপসাগরীয় সহযোগিতা জোট জিসিসির সবগুলো দেশের নেতারা প্রেসিডেন্ট
শির সঙ্গে বৈঠকের জন্য রিয়াদে আসেন। এছাড়া গতকাল শুক্রবার একটি চীন-আরব শীর্ষ বৈঠকে
যোগ দিতে রিয়াদে হাজির হন মিশর, তিউনিসিয়া, লেবানন, ইরাক এবং সুদানের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
অন্যদিকে, আরব
বিশ্বের নৈকট্যের জন্য চীনারাও তাদের আগ্রহ-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য
করেনি। উন্নয়ন ও প্রযুক্তির জন্য চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক করতে
উপসাগরীয় দেশগুলোর আগ্রহের বাস্তবতা অনেকটাই মেনে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু অনেক
বিশ্লেষক বলছেন, কৌশলগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চীনের সম্পৃক্ত হয়ে পড়া নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
উপসাগরীয় দেশগুলাতে
হুয়াওয়ে টেলিকম নিয়ে আমেরিকানরা চিন্তিত। চীন এখন সৌদিদের সামরিক ড্রোন তৈরিতে সাহায্য
করছে। এমনকি বছরখানেক আগে সিএনএন রিপোর্ট করেছিল, চীন সৌদি আরবকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র
উৎপাদনে সাহায্য করছে।
শুক্রবার রিয়াদে
আরব নেতাদের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট পারমানবিক জ্বালানি এবং মহাকাশ প্রযুক্তিতে
সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন।
আল-জাজিরা অনলাইনের
সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন গবেষণা সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক কর্মসূচির
গবেষক জনাথন পিকফোর্ড বলেন, সৌদি-চীন সম্পর্কের যে বিষয়টি আমেরিকার জন্য সবচেয়ে বড়
চ্যালেঞ্জ তা হলো সৌদিরা মনে করে চীনের সঙ্গে কাজ করা তাদের জন্য সহজ।
সৌদিরা মনে
করে রাজনীতি নিয়ে চীন মাথা ঘামাবে না। মানবাধিকারের বিষয়ে লেকচার দেবে না। অস্ত্র কোথায়
ব্যবহার হবে তা নিয়ে শর্ত আরোপ করবেনা, বলেন জনাথন।
আমেরিকার ভয়
এসব কারণে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্পর্কে
জড়িয়ে পড়বে।
অনেক বিশ্লেষক
মনে করেন, বেশ কিছুদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে, বিশেষ করে সৌদি আরব বা ইউএইর
মধ্যে, নিরাপত্তা, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের জন্য আমেরিকার ওপর নির্ভরশীলতা
কমানোর তাগিদ দেখা যাচ্ছে।
২০১৭ সালে সৌদি
আরবের ক্ষমতা হাতে পাবার পর যুবরাজ সালমান আধুনিক এবং স্বাবলম্বী একটি দেশে পরিণত করতে
উঠেপড়ে লেগেছেন। এজন্য গুপ্তচরবৃত্তিতে সংশ্লিষ্টতার যুক্তিতে চীনা যে টেলিকম কোম্পানিকে
যুক্তরাষ্ট্র নিষিদ্ধ করেছে সেই হুয়াওয়ে সৌদি আরব এবং ইউএইসহ বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশে
ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক বসিয়েছে। স্পর্শকাতর তথ্য চুরির ঝুঁকি নিয়ে আমেরিকার কথা এসব দেশ
কান দেয়নি।
এমনকি গত বুধবার
সৌদি আরব ও চীনের মধ্যে যেসব চুক্তি হয়েছে তার মধ্যে একটি চুক্তির আওতায় হুয়াওয়ে সৌদি
আরবে বেশ কতগুলো ডেটা সেন্টার প্রতিষ্ঠিত করবে যেখানে ক্লাউডে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ
ডেটা সংরক্ষিত থাকবে।