ইউক্রেনে যুদ্ধ
শুরু করার কারণে রাশিয়ার থেকে তেল, গ্যাস, কয়লা কেনা বন্ধ করে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা
আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও বেশকিছু দেশ রাশিয়া থেকে
জ্বালানি কেনা বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল বিশ্ব অর্থনীতির
নিয়ন্ত্রক হিসেবে তাদের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোও রাশিয়া থেকে তেলসহ
অন্যান্য জ্বালানি কেনা বন্ধ করবে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে জার্মানি, ফ্রান্স,
ইতালি, হাঙ্গেরি, নেদারল্যান্ড, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়াসহ ইউরোপের দেশগুলো এখনও রাশিয়া
থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে। তেল কিনছে এশিয়ার দুই প্রভাবশালী রাষ্ট্র চীন ও ভারত।
যুক্তরাষ্ট্রের
নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কার তোয়াক্কা না করে তারই মিত্ররা রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, বিষয়টি
ওয়াশিংটনকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। এমনকি জ্বালানি বিক্রিতে আন্তর্জাতিক বাজারের
তুলনায় দামে অনেক বেশি ছাড় দিয়েছে রাশিয়া, এই ঘটনায় উল্টো আরও চাপে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
চলুন জেনে নেওয়া
যাক, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ থাকার পরও এখনও কোন কোন দেশ রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত
রেখেছে।ৎ
এই তালিকায় রয়েছে:
বুলগেরিয়া: বলকান
উপদ্বীপের বৃহত্তম তেল শোধনাগার নেফটোচিম বুরগাস শোধনাগারটি রাশিয়ার লুকোইলের মালিকানাধীন।
এটি বুলগেরিয়ার অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের মূল সরবরাহকারী। বর্তমানে দেশটির
চাহিদার ৪০ শতাংশ তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করা।
চীন: ইউরোপীয়
ইউনিয়নের পর রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক হচ্ছে চীন। আন্তর্জাতিক শক্তি
সংস্থা (আইইএ) জানিয়েছে, নতুন করে রাশিয়া থেকে চীনের তেল আমদানি আরও বাড়তে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
(ইইউ): ২৭ সদস্যের ব্লকটি চাহিদার ৪০ শতাংশ গ্যাস ও ২৭ শতাংশ অপরিশোধিত তেল আমদানির
জন্য রাশিয়ার উপর নির্ভর করে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হামলার কারণে রাশিয়া থেকে তেল ও
গ্যাস আমদানি বন্ধের ব্যাপারে ব্লকের সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধ চলছে। ইইউ রাষ্ট্রগুলো
রাশিয়ার তেল কোম্পানি রোসনেফ্ট, ট্রান্সনেফ্ট ও গ্যাজপ্রম নেফ্টের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা
গ্রহণ করতে প্রস্তুত কিন্তু তাদের কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে।
ফ্রান্স: ২০২১
সালে চাহিদার ৯ দশমিক ৫ শতাংশ অপরিশোধিত তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করেছিল ফ্রান্স। ইউক্রেন
যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ফ্রেঞ্চ অ্যাসোসিয়েশন অব পেট্রোলিয়াম ইন্ডাস্ট্রি জানিয়েছে,
তারা রাশিয়ার বিকল্প খুঁজছে।
জার্মানি: জার্মানির
সবচেয়ে বড় শোধনাগার, এমআইআরও প্রায় ১৪ শতাংশ তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করে। আরেক শোধনাগার
পিসিকে স্কয়েদতের ৫৪ শতাংশ মালিকানা রোজনেফত ডাচেসল্যান্ডের। এটি রাশিয়ার রোজনেফতের
একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি।
গ্রিস: দেশটির
বৃহত্তম তেল শোধনাগার হেলেনিক পেট্রোলিয়াম জানিয়েছে, ২০২১ সালে রাশিয়া থেকে তারা যে
পরিমাণ তেল আমদানি করেছিল তার ১৫ শতাংশ বিকল্প উৎস থেকে সংগ্রহ করা যাবে।
ভারত: রাষ্ট্রীয়
শোধনাগার হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম আগামী মে মাসের জন্য রাশিয়া থেকে ২০ লাখ ব্যারেল
তেল কিনেছে। ভারতের শীর্ষস্থানীয় তেল শোধানাগার ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন মে মাসের জন্য
৩০ লাখ ব্যালেল তেল সরবরাহের আদেশ দিয়েছে।
রাশিয়া থেকে তেল
আমদানি করা দেশের তালিকা একেবারে ছোট নয়। এই তালিকায় রয়েছে ইতালি, হাঙ্গেরি, নেদারল্যান্ডস,
পোল্যান্ড ও তুরস্কের বড় তেল শোধানাগারগুলো।