টি-টোয়েন্টি
বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের অভিষেক হয়েছিল ইতিহাস গড়ে। একাধিক রেকর্ড ভেঙে তারা হারায়
কানাডাকে। ওই ম্যাচ জয়ে অনুপ্রাণিত আমেরিকা এবার বিশ্ব ক্রিকেটকে চমকে দিলো। বাংলাদেশের
মতো দুর্ভাগ্য বরণ করলো এবার পাকিস্তান। প্রথম কোনও পূর্ণ সদস্য দেশের বিপক্ষে তারা
জিতেছিল বাংলাদেশকে হারিয়ে। ইতিহাসের পাতায় নাম লিখেছিল মোনাঙ্ক প্যাটেলের দল। এবার
তারা বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে হারালো আরেক পূর্ণ সদস্য দেশ পাকিস্তানকে। পরতে পরতে উত্তেজনা
ছড়িয়ে ম্যাচ সুপার ওভারে নেয় স্বাগতিকরা। তারপর যোগ্য দল হিসেবে বাবর আজমের দলকে অপ্রত্যাশিত
হারের স্বাদ দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
পাকিস্তানের
পেস আক্রমণকে যেনতেন নয়, বিশ্বসেরা বলেছিলেন সাবেক অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি। শাহীন
শাহ আফিদি, মোহাম্মদ আমির, নাসিম শাহ ও হ্যারিস রউফের এই আক্রমণকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে
যুক্তরাষ্ট্র। বাবররা যত তাড়াতাড়ি পারে, এই হার ভুলে যেতে চাইবে।
দারুণ বোলিংয়ে
পাকিস্তানকে ১৫৯ রানে আটকে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। লক্ষ্যে নেমে দারুণ শুরু হয় তাদের। প্রথম
৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৪৪ রান তোলে তারা। স্টিভেন টেলর ১৬ বলে ১২ রান করে পাকিস্তানের
প্রথম শিকার হন। নাসিম তাকে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ক্যাচ বানান।
তারপর মোনাঙ্ক
প্যাটেল ও আন্দ্রিয়েস গাওস যেন পাকিস্তানের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছিলেন। ১৩তম ওভারে
দলীয় স্কোর সেঞ্চুরি হয়ে যায়। অবশেষে ৬৮ রানের এই জুটি ভেঙে দেন হারিস। গাওসের অফস্টাম্প
ভেঙে দেন পাকিস্তানি পেসার। তার আগেই মোনাঙ্ক শাহীন আফ্রিদিকে টানা চার-ছয় মেরে ৩৪
বলে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান। এরপর অধিনায়ক আর বেশিক্ষণ টেকেননি। আমিরের বলে রিজওয়ানকে
ক্যাচ দেন তিনি ৩৮ বলে ৫০ রান করে।
৩৬ বলে যুক্তরাষ্ট্রের
তখন লাগতো ৪৯ রান। আমির, শাহীনের আঁটসাঁট বোলিংয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। শেষ ওভারে লাগতো
১৫ রান। প্রথম তিন ওভারে মাত্র ২৩ রান দেওয়া হারিসের কাঁধে দায়িত্ব পড়ে দলকে জেতানোর।
প্রথম তিন বলে তিনি ৩ রান দিলেও চতুর্থ বলটি ফুলটস পেয়ে ছক্কা মারেন কানাডা বধের নায়ক
অ্যারন জোন্স। ম্যাচে ফেরে উত্তেজনা। শেষ দুই বলে প্রয়োজন কমে দাঁড়ায় ছয় রানে। পঞ্চম
বলটি জোন্স সিঙ্গেল নেন এবং নিতিশ কুমার শেষ বলে চার মারলে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
৩ উইকেটে ১৫৯ রান করে যুক্তরাষ্ট্র। ২৬ বলে দুটি করে চার ও ছয়ে ৩৬ রানে অপরাজিত ছিলেন
জোন্স ও ১৪ রানে খেলছিলেন নিতিশ।
সুপার ওভারে
বল করেন আমির। অবসর ভেঙে ফেরা এই পেসারের দুঃসহ অভিজ্ঞতা হয়। প্রথম বলেই চার মারেন
জোন্স। দ্বিতীয় বলে দুই রান নেন আমেরিকার ব্যাটার। তৃতীয় বলে সিঙ্গেল নেন তিনি। পরেরটি
ওয়াইড, দুটি রান যোগ হয়। আরও দুটি ওয়াইড দেন পাকিস্তানি পেসার। শেষ বলে রান আউট হন
জোন্স। তাতে ১৯ রানের কঠিন টার্গেট দেয় স্বাগতিকরা।
ফখর জামান ও
ইফতিখার আহমেদ সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেছিলেন। সৌরভ নেত্রাভালকার বোলিংয়ে আসেন। প্রথম
বল ডট দেন তিনি। দ্বিতীয় বলে ইফতিখার চার মারেন। পরেরটি ছিল ওয়াইড। তৃতীয় বৈধ বলে ইফতিখারকে
দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরান নিতিশ। পরেরটি ওয়াইড, তারপর লেগ বাই থেকে চার রান যোগ হয়। পঞ্চম
বলে দুটি রান নেন শাদাব খান। শেষ বলে লাগে ৭ রান। ছক্কা মেরে আরেকটি সুপার ওভারে নিতে
পারেননি পাকিস্তানি ব্যাটার। ১ উইকেটে ১৩ রান করে পাকিস্তান।
সুপার ওভারে
৫ রানে জিতে আরেকটি ইতিহাস গড়ার আনন্দে মেতে ওঠে গ্যালারি, উচ্ছ্বাসে ভাসেন ক্রিকেটাররা।
প্রথমবার কোনও পূর্ণ সদস্য দেশ নয়, এমন দলের কাছে হারে পাকিস্তান।
‘এ’ গ্রুপে দুই
ম্যাচ খেলে শতভাগ সাফল্যে পয়েন্ট টেবিলে সবার উপরে যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে টেক্সাসে
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান বিপদে পড়েছিল। ২৬ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে টেনে তোলেন
বাবর (৪৪) ও শাদাব (৪০)। তাদেরকে ১৫৯ রানে আটকে দিতে নসথুশ কেনজিগে তিন উইকেট নেন।
দুটি পান সৌরভ।
ম্যাচে যত ব্যক্তিগত
রেকর্ড
সৌরভ নেত্রাভালকার
এই ম্যাচে দুটি উইকেট নিয়েছেন। তাতে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে
২৯ উইকেট নিয়ে সর্বকালের শীর্ষ বোলারের আসনে এই পেসার। পেছনে ফেলেছেন ২৭ উইকেট নেওয়া
নিসর্গ প্যাটেলকে।
যুক্তরাষ্ট্রের
ফিল্ডার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ১০ ক্যাচ নিয়ে নিসর্গকে (৯) ছাড়িয়ে সবার উপরে এখন স্টিভেন
টেলর।
বাবর আজম আন্তর্জাতিক
টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় এতদিন শীর্ষে থাকা বিরাট কোহলিকে পেছনে ফেলেছেন।
৪০৬৭ রান পাকিস্তানি অধিনায়কের। ৪০৩৮ রান নিয়ে দুইয়ে কোহলি।