মাদারীপুরের মায়ের সম্পত্তি ও ব্যাংকে
থাকা অর্থ হাতিয়ে নিয়ে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বড়
ছেলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় বৃদ্ধা সৈয়দা শান্তি নাহার (৭০) ছেলেকে আসামি করে আদালতে
মামলা দায়ের করেছেন।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ডাসার
উপজেলার পূর্ব ডাসার গ্রামের শান্তি নাহার নামে এক বৃদ্ধা তার বড় ছেলে সৈয়দ জানে
আলম স্বপনের কাছে ছিলেন। অসুস্থ মাকে দেখশোনা করার কথা বলে তার কাছে বেশ কিছুদিন রাখেন।
এ সময় মায়ের নামে থাকা মাদারীপুর শহরের একটি বাড়ির জমি স্বপন লিখে নিয়েছেন। এ ছাড়াও
তার জমি বিক্রির ব্যাংকে থাকা অর্থ আত্মসাৎ করছেন তার বড় সন্তান সৈয়দ জানে আলম।
বৃদ্ধা মায়ের অভিযোগ, সম্পত্তি ও টাকা-পয়সা
হাতিয়ে নিয়ে তিন দিন খাবার না দিয়ে বড় সন্তান ও তার স্ত্রী বাড়ি থেকে বের করে
দিয়েছেন।
এ ঘটনায় প্রতারণা করে সম্পত্তি ও টাকা-পয়সা
হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলে মাদারীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা
করেছেন বৃদ্ধা। মামলায় বড় সন্তান সৈয়দ জানে আলম স্বপন ও তার স্ত্রী কাজী শিবলী আক্তার
রুমা এবং তার নাতনী সৈয়দ রাহুল আলম শুভকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দা
শান্তি নাহার নামে ওই বৃদ্ধার স্বামী বছর তিনেক আগে মারা গিয়েছে। ওয়ারিশ হিসেবে রেখে
গেছেন, তিন সন্তান, এক মেয়ে। স্বামীর মৃত্যুর পরে চিকিৎসাজনিত কারণে মাদারীপুর শহরে
তার বড় ছেলের বাড়িতে থাকেন তিনি। নগদ টাকার প্রয়োজনে ৫২ লাখ টাকার জমি বিক্রি করেন।
সেই টাকা বড় সন্তানের কাছে গচ্ছিত রাখেন। কিছুদিন তিনি অসুস্থবোধ করলে চিকিৎসার কথা
বলে বড় ছেলে জানে আলম ও তার স্ত্রী রুমা এবং তার সস্তান শুভ অজ্ঞাত একটি বিল্ডিংয়ে
নিয়ে যায়। এ সময় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে বলে কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর
করিয়ে নেয়। এর কিছুদিন পরে জানতে পারেন তার বাড়ির তিন শতাংশ জমি হেবা দলিলের মাধ্যমে
বড় সন্তান জানে আলম তার নামে লিখে নিয়েছেন।
এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে তার একাধিক সম্পত্তি
প্রতারণা করে অন্যদের দলিল করিয়ে দেন। বিষয়টি জানার পরে তার বড় ছেলের কাছে জমি বিক্রির
টাকাসহ মোট ৭১ লাখ টাকা এবং তিন শতাংশ জমি ফেরত চাইলে টাকা ও জমি ফেরত দিতে অস্বীকার
করে। পরে মামলা করা হুমকি দিলে সৈয়দ জানে আলম স্বপন বৃদ্ধা শান্তি নাহারকে এলোপাতাড়ি
কিল ঘুষি ও লাথি মেরে ঘর থেকে বের করে দেয়।
ঘটনার পরে তার মেঝ ছেলে সৈয়দ মুক্তি তার
মাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করেন।
ভুক্তভোগী সৈয়দা শান্তি নাহার বলেন, প্রতারণার
মাধ্যমে আমার ছেলে সৈয়দ জানে আলম ও তার স্ত্রী কাজী শিবলী আক্তার রুমা জায়গাজমি অর্থ
সম্পদ আত্মাসাৎ করে, আমাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। এমন কুলাঙ্গার সন্তান
আমার দরকার নেই। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধার দেবর মুক্তিযোদ্ধা
সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘আমার ভাতিজা স্বপন আমার সামনে ওর মাকে
মারধর করেছে। এমন কুলাঙ্গার সন্তান আমি কখনো দেখিনি। ওর দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়ার
উচিত। যাতে কেউ মায়ের গায়ে হাত তুলতে না পারে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সৈয়দ জানে আলম স্বপন
বলেন, ‘এ ঘটনা সম্পূর্ণ
মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার মা মিথ্যা কথা বলছে। জমি বিক্রি করে তার টাকা তাকে দেওয়া
হয়েছে। সে তার টাকা তুলে চিকিৎসার জন্য খরচ করছে। তার জমি বিক্রির বাকি টাকা তার অ্যাকাউন্টেই
আছে।’
ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)
শফিকুল ইসলাম জানান, ‘বৃদ্ধা মাকে পুলিশের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তা
দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে ডাসারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার
(ইউএনও) কানিজ আফরোজ বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। মাকে তার সন্তান
মারধর করবে এটা সভ্য সমাজে মেনে নেওয়ার মতো নয়। অভিযুক্ত সন্তানের বিরুদ্ধে আইনি
পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’