ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ব্যাপকভাবে আলোচিত ইব্রাহিম রাইসি। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শনিবার সকালে তার জয়ের খবর প্রকাশ করে। তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পরাজিত প্রার্থীরা। গত শুক্রবার এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৫ কোটি ৯ লাখ ভোটারের মধ্যে এ নির্বাচনে ২ কোটি ৮ লাখ ভোটার তাদের ভোট দেন।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম টিআরটি
ওয়ার্ল্ডের খবরে বলা হয়, রাইসি ৬২ ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ১ কোটি ৭ লাখ
৮০ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রেজায়ী পেয়েছেন ৩৩
লাখ ভোট। আর আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী হিম্মতি পেয়েছেন মাত্র ২৪ লাখ ভোট।
এর আগে বিভিন্ন জরিপে ইব্রাহিম রাইসিই এগিয়ে ছিলেন। কারণ আহমেদিনিজাদের মতো শক্তিশালী প্রার্থীরা আগেই প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। যার ফলে ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হওয়া ইব্রাহিম রাইসিই বিশ্ব মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হন।
ইব্রাহিম রাইসি বর্তমান ইরানের প্রধান
বিচারপতি। ৬০ বছর বয়সী রাইসি বর্তমানে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী
ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনী দৌড়ে শামিল হয়েছেন তিনি।
গত নির্বাচনে তিনি হাসান রুহানির কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।
ইরানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা খামেনি
এবং রাইসির জন্ম একই স্থানে, দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশহাদে। খামেনির মতো না
হলেও দেশটির সংখ্যাগুরু শিয়া সম্প্রদায়ের কট্টরপন্থিমহলে তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা
ব্যাপক।
খামেনির মতো রাইসিরও দাবি, বিশ্বনবী হযরত
মুহম্মদ (সঃ)-এর বংশধর তিনি। বিশ্বনবীর রক্তসম্পর্কিত উত্তরাধিকার হওয়ার কারণে সবসময়
কালো রঙের পাগড়ি পরেন তিনি।
তবে ইরানের গণতন্ত্রপন্থি বলয়ে তার জনপ্রিয়তা
বেশ কম। কারণ, আশির দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় দেশটিতে তৎপর হয়ে উঠেছিলেন গণতন্ত্রপন্থিরা,
যারা ক্ষমতাসীন ইসলামী কট্টরপন্থি সরকারের বিরোধী। যুদ্ধ শেষে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার
কারণে শত শত গণতন্ত্রপন্থিকে গ্রেফতার করা হয় এবং তেহরানের রেভ্যুলুশনারি আদালত সংক্ষিপ্ত
বিচারকাজের পরই তাদের অধিকাংশকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। সে সময় রেভ্যুলুশনারি আদালতের
প্রধান বিচারক ছিলেন রাইসি।
ওই বিচার প্রক্রিয়ার পরই খামেনির আস্থাভাজন
হিসেবে হিসেবে উত্থান ঘটে তার।
২০১৯ সালে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক
ও অর্থনৈতিক সংস্থা আস্তান কুদস রাজাভি ফাউন্ডেশনের প্রধান হিসেবে রাইসিকে নিয়োগ দেন
খামেনি। ইরানের শিয়া মুসলিমদের কাছে পবিত্র তীর্থ বলে বিবেচিত ইমাম রেজার মাজারের রক্ষনাবেক্ষণের
দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দাতব্য কার্যক্রম ও দেশের অধিকাংশ কোম্পানি পরিচালনাও করে
থাকে এই ফাউন্ডেশন।
তিন বছর মোটামুটি সফলভাবে আস্তান কুদস
রাজাভি ফাউন্ডেনের নেতৃত্ব দেওয়ার পর ২০১৯ সালে তাকে বিচার বিভাগের প্রধান পদে নিয়োগ
দেন খামেনি। এ পদে থাকার সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ায় দেশের অভ্যন্তরে
জনপ্রিয়তা কিছুটা বাড়ে তার।
নিজেকে ‘দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অভিজাতদের’ ঘোর বিরোধী হিসেবে প্রকাশ করা রাইসি রাজনৈতিক দিক থেকে শিয়া ইসলামি কট্টরপন্থার সমর্থক। দেশের গণতন্ত্রপন্থিদের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য দেশগুলোরও কঠোর সমালোচক। তবে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি প্রায় পঙ্গু হয়ে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের বিষয়ে সুর নরম করেছেন তিনি।