একদিকে অব্যাহত ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ অন্যদিকে
রাতভর ভারী বৃষ্টি। রয়েছে ঠাণ্ডা বাতাস। এমন পরিস্থিতে গাজা উপত্যকায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের
দুর্ভোগ বেড়েছে সীমাহীন। কারণ এরই মধ্যে তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়েছে। এখন স্যাঁতসেতে
তাঁবুর মধ্যে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির
খবর।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি
হামলার মধ্যে আকস্মিক ভারী বৃষ্টিতে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে গাজাবাসী। বৃষ্টি
ও বন্যার পানিতে ভেসে গেছে রাস্তা ঘাট, প্লাবিত হয়েছে অনেক অঞ্চল। জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে
আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতেও। হাজারো গাজাবাসী যুদ্ধ করছে বৃষ্টির পানি ও বন্যার হাত থেকে
বাঁচতে। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) আল জাজিরার
প্রতিবেদনে দেখা যায়, মানবেতর জীবন পাড় করছেন গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা। রাস্তার পাশে নিজেদের জামা কাপড় দিয়ে ত্রিপল বা প্লাস্টিকের তাঁবু টানিয়ে কোনো রকমে পানি থেকে নিজ পরিবারকে রক্ষা করছেন তারা। কেউ কেউ আবার পানি সরাতে বালতি ভরে বালু নিয়ে তাঁবুতে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করছেন। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভেজা কাপড়। ভেসে গেছে রাস্তা ঘাট, গাড়ি, আসবাবপত্র।
আরও পড়ুন>> ভারতের পার্লামেন্ট থেকে বিরোধীদলীয় ১৫ এমপি বহিষ্কার
হান্না আবু সাইফ নামে এক ফিলিস্তিনি নারী
বলেন, আমরা মৃত্যুর মুখ থেকে পালিয়ে এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু এখানে এভাবে মরার
চাইতে যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হওয়া ভালো ছিল। আল্লাহর কসম করে বলছি আমার মেয়ে সারারাত
পানির মধ্যে ছিল। আমাদের সবকিছু ভিজে গেছে। আমরা খাবার পাচ্ছি না, চিকিৎসা পাচ্ছি না।
এমনকি খাবার পানি পর্যন্ত পাচ্ছি না।
এক ফিলিস্তিনি মা বলেন, তাঁবু টানিয়েও নিজের বাচ্চাদের বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে পারিনি। রাতে তাঁবুর মধ্যে পানি ঢুকে পড়ে। আমরা শত চেষ্টা করেও পানি আটকাতে পারিনি। আমার বাচ্চারা সবাই ভিজে গেছে। সারারাত তারা পানিতে ভিজে কষ্ট পেয়েছে। এই একটা কম্বল পেঁচিয়ে ওদেরকে নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। এখন আমি কী করব? বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাবো?
আরও পড়ুন>> বিশ্বে ২০২৩ সালে নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা কমেছে
চিকিৎসকরা বলছেন, গাজায় চরম স্বাস্থ্য
সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সংক্রামক রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে অবশিষ্ট গাজাবাসীদের মধ্যে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছে,
গাজা এখন মারাত্মক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন। হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ খাদ্য
ও পানি সঙ্কটের পাশাপাশি এখন রোগ ও অনাহারের সঙ্গে লড়ছে।
জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয় (ওসিএইচএ)
অনুসারে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়, এর
ভেতরে প্রায় ৭০ শতাংশ আইডিপি ইউএনআরডব্লিউএ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে, বাকিরা সরকার
পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্রে বা হোস্ট পরিবারের সঙ্গে আছেন। এর মধ্যে ছিটমহলের দক্ষিণতম
শহর রাফা হতে ৫ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা রয়েছে।