আজঃ রবিবার ১৯ মে ২০২৪
শিরোনাম

কবিদের চোখে ‘বঙ্গবন্ধু’

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৬ আগস্ট ২০২২ | হালনাগাদ:শুক্রবার ২৬ আগস্ট ২০২২ | অনলাইন সংস্করণ
দর্পণ নিউজ ডেস্ক

Image

শরীফ মাহমুদ চিশতী

কবি শামসুর রাহমানকে দিয়ে শুরু করা যাক। অভিশাপ কবিতায় তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের অভিশাপ দিয়েছেন। হত্যাকারীদের নেকড়ের চেয়েও অধিক হিংস্র হিসেবে উল্লেখ করে তাদেরকে বুলেট-বৃষ্টিতে একবারে হত্যা করতে চান না। তিনি চান ঘাতকরা চিরদিন গলিত মৃতদেহ নিয়ে বয়ে বেড়াবে। তারা যখন রুটি চাইবে তখন তাদের থাবা থেকে রুটি দশ হাত দূরে থাকবে, ওদের পানপাত্র কানায় কানায় ভরে উঠবে রক্তে। ওরা আকণ্ঠ বিষ্ঠায় ডুবে থাকবে; নিজের সন্তানও মুখ ফিরিয়ে নেবে; আশ্রয়ের আশায় ওরা যখন ঘুরবে, পৃথিবীর প্রতিটি কপাট ওদের জন্য বন্ধ থাকবে। এভাবে তিনি তাদেরকে তিলে তিলে দগ্ধ করে হত্যা করতে চান। কারণ, ওরা কবিকে জনক-জননীর রক্তে পা ডুবিয়ে এগিয়ে যেতে বাধ্য করেছে

আমাকে করেছে বাধ্য যারা

আমার জনক জননীর রক্তে পা ডুবিয়ে দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে যেতে

ভাসতে নদীতে আর বনবাদাড়ে শয্যা পেতে নিতে

অভিশাপ দিচ্ছি আজ সেইখানে দজ্জালদের।

জসীমউদ্দীন বঙ্গবন্ধু কবিতায় মুজিবুর রহমান নামটিকে বিসুভিয়াসের অগ্নি উগারী বান-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। বিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতের কারণে যেভাবে রোমান শহর পম্পেই এবং হারকিউলানিয়াম লাভার নিচে চাপা পড়ে ধ্বংস হয়েছে; তেমনি মুজিবুর রহমান নামটিও জ¦লন্ত-শিখা রূপ ধারণ করে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে অন্যায়-অত্যাচারকে বিনাশ করার জন্য। পীড়িত মানুষের নিশ্বাস তাঁকে দিয়েছে চলার গতি, বুলেটে নিহত শহিদেরা তাঁর অঙ্গে দিয়েছে জ্যোতি, দুর্ভিক্ষের দানব তাঁর দেহে দিয়েছে শক্তি। তাঁর হুকুম পালন করার জন্য লাখ লাখ সেনা তাঁর সঙ্গে চলছে। বঙ্গবন্ধুর হুকুমে জীবনকে তুচ্ছ করে বাঙালী চলছে জয় ছিনিয়ে আনতে-

তোমার হুকুমে তুচ্ছ করিয়া শাসন ত্রাসন ভয়

আবারো বাঙালি মৃত্যুর পথে চলিছে আনিতে জয়।

আধুনিক বাংলা কাব্যে কবি সুফিয়া কামাল একটি উজ্জ্বল ও উচ্চকিত উচ্চারণ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কবি রচনা করেন ডাকিছে তোমারে কবিতা। জীবন-যৌবন কারাবাসে কাটিয়ে বাংলার মানুষকে তিনি মুক্ত করেছেন। অথচ মুষ্টিমেয় কিছু ঘাতকের হাতে তাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছে। কিন্তু বাংলার মানুষের হৃদয়ে তাঁর আসন এখনও অম্লান। বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার অপেক্ষায় আছে। অসহায় মানুষ দেখছে বঙ্গবন্ধুর দেশে কারা যেন ঝেঁকে বসেছে। বঙ্গবন্ধু নেই বলে মূষিকের দল আবার বাংলায় হানা দিয়েছে। বেইমানগুলো বাংলাকে ছারখার করে ফেলেছে। বঙ্গবন্ধুর রক্তে রঞ্জিত এ মাটি তাঁকে আবার কেঁদে কেঁদে ডাকছে-

তোমার শোণিতে রাঙানো এ মাটি কাঁদিতেছে নিরবধি।

তাইত তোমারে ডাকে বাংলার কানন, গিরি ও নদী।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন। জান্তা-সরকার বিচার করে বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দিলে বিশ^ নেতৃবৃন্দ তার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে হানাদার দখলদাররা পরাজিত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির সংবাদে সারাদেশ আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভেসে যায়। নতুন দেশের নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে যে অনিশ্চয়তার কালোমেঘ জমে তা দূর হয় বঙ্গবন্ধুর মুক্তিতে। উচ্ছ্বসিত জনগণ অপেক্ষায় থাকেন বঙ্গবন্ধুর ফেরার প্রহর গুণে। বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার সংবাদে কবি সিকান্দার আবু জাফর রচনা করেন ফিরে আসছেন শেখ মুজিব কবিতা।

সাড়ে সাত কোটি বাঙালির কান্নার পাথরে গড়া

সুমসৃণ পথে ফিরে আসছেন তিনি

ফিরে আসছেন বঙ্গ-ভারতের

সম্মিলিত রক্তস্রোত মহাপুণ্য পথে

বাংলাদেশের মরণ-বিজয়ী মুক্তিসেনানী।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লন্ডন হয়ে বিজয়ীর বেশে মুক্ত স্বদেশে ফিরে আসেন। সর্বস্তরের জনতা বঙ্গবন্ধুকে বীরোচিত অর্ভ্যথনা জানায়। ১০ জানুয়ারি গার্ডিয়ান পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল, শেখ মুজিব ঢাকা বিমানবন্দরে পদার্পণ করা মাত্র নতুন প্রজাতন্ত্র এক সুদৃঢ় বাস্তবতা লাভ করে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুগে-যুগে অনেক বিপ্লব হয়েছে। জাতির কান্ডারি রূপে নেতৃত্ব দিয়ে তাঁরা স্মরণীয় হয়ে আছেন। বাঙালীর বুকে স্বাধীনতার বীজমন্ত্র পুঁতে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। একটি নিরস্ত্র জাতির মধ্যে যে গণঅভ্যুত্থান তিনি সৃষ্টি করলেন, তা তুলনারহিত। রণেশ দাশগুপ্ত জাগরূক কবিতায় বাঙালী জাতির কা-ারি হিসেবে বঙ্গবন্ধু কীভাবে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছেন সে বিষয়ে তুলে ধরেছেন

সে তাগিদই নিয়ে জাগরূক কান্ডারিরা দেশে-দেশান্তরে

একান্তভাবে সাম্প্রতিক শহিদেরা লুমুম্বারা জাগরূক

যেমন জাগরূক সালভাদর আলেন্দে চিলিতে

ওলাফ পালমে সুইডেনে

সামোয়া মাচেল মোজাম্বিকে

বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর।

বাঙালীর কান্না-হাসি, দুঃখ-বিলাস সবকিছুতেই বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণের আগেই তাঁকে হারাতে হয়েছে। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কবি আবুল হোসেন বিশ্বাস করেন- আমাদের নায়ক আমাদের ছেড়ে চলে যেতে পারেন না। কারণ, তিনি চলে গেলে আমাদেরতো আর কিছুই থাকবে না। আমরা কার ডাকে মিছিলে স্লোগান দিব; হাসতে হাসতে জেলে আস্তানা গাঁড়ব; কে আমাদের দুস্তর রাতে পথ দেখাবে; কার হাত ধরে আমরা পাহাড়ের চূড়ায় উঠব? তাই কবি থাকো, আরো কিছুদিন থাকো কবিতায় আকুতি জানিয়েছেন-

চিরকাল যদি না-ই থাকো, আরও

কিছুদিন থাকো আমাদের সঙ্গে,

দিয়ে যাও আলো আর কিছু গান,

হাসিখুশিহীন এ স্বাধীন বঙ্গে।

বাংলাদেশের মুক্তিআন্দেলন এবং স্বাধীনতা-সংগ্রামে শক্তির প্রধান উৎস বঙ্গবন্ধু। ঔপনিবেশিক শাসন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি কখনো কর্মীর ভূমিকায়, কখনো নেতার ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করেছেন। অধিকার বিষয়টা যে আদায় করে নিতে হয়- এই বোধ তাঁর স্কুল জীবনেই হয়েছিল। তাই দেখা যায় গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালীর প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু নামটি মিশে আছে। তাঁর ঘোষিত ছয় দফা ছিল বাঙালীর মুক্তির সনদ এবং স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান হাতিয়ার ও মূলমন্ত্র। এ দাবিকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধে উঠে দুর্বার আন্দোলন। এই আন্দোলনের সূত্র ধরেই ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন এবং ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও চূড়ান্ত পরিণতি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষায়Ñ ৬ দফা বাংলার শ্রমিক-কৃষক, মজুরÑমধ্যবিত্ত তথা আপামর মানুষের মুক্তির সনদ। ৬ দফা শোষকের হাত থেকে শোষিতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ছিনিয়ে আনার হাতিয়ার, ৬ দফা মুসলিম-হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধদের নিয়ে গঠিত বাঙালি জাতির স্বকীয় মহিমায় আত্মপ্রকাশ আর আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের চাবিকাঠি...৬ দফার সংগ্রাম আমাদের জীবন মরণের সংগ্রাম। কবিদের কবিতায়ও উঠে এসেছে তার বিবরণ।

কবি রুবী রহমান তাঁর পঁচাত্তরে বিরান বাংলাদেশ কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে প্রমিথিউস বলে সম্বোধন করেছেন। প্রমিথিউস মানুষকে সৃষ্টিশীল গুণাবলী দিয়ে সৃষ্টি করেন। মানুষের প্রতি দুর্বল প্রমিথিউসের মনে হলো মানব জাতির জন্য পৃথিবীকে উপযোগী করতে হলে আগুনের প্রয়োজন। তিনি দেবতার কাছে আগুন উপহার চাইলেন কিন্তু দেবতার প্রত্যাখ্যানের পর তিনি স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করেন। ফলে, তিনি দেবতাদের রোষানলে পড়েছিলেন। দেবতার নির্দেশে তাঁর দেহ পাহাড়ের গায়ে বেঁধে রাখা হয় এবং একটি ঈগল প্রতিদিন এসে তাঁর কলিজা ঠোক্রে ঠোক্রে খেতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও দেখা যায় তিনি বাঙালীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় শোষক শ্রেণীর সঙ্গে সংগ্রাম করে অধিকার আদায় করছেন; পরবর্তীতে স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়ে বিশ^াসঘাতকদের কোপানলে পড়েছিলেন। প্রমিথিউসকে দেবতার রোষ থেকে রক্ষা করে হারকিউলিস কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে কেউ রক্ষা করতে পারেনি। কবি বিশ^াস করেন- বঙ্গবন্ধু যে আগুন ছিনিয়ে এনেছেন তার স্ফুলিঙ্গ থেকে আবার আগুন জ্বলে উঠবে

যে অগ্নি একদিন তুমি ছিনিয়ে এনেছ

প্রতিটি স্ফুলিঙ্গ তার জ¦লে উঠবার গূঢ় মন্ত্রগুলি দাও।

কৃপণ হৃদয় নিয়ে ঘাড় গুঁজে বসে আছে বামন সময়।

সত্য ও ন্যায় পথের সারথি বঙ্গবন্ধু। শত অত্যাচার ও ভীতির মুখেও তিনি তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হননি। মানুষের অধিকার আদায়ে ছিলেন সোচ্চার। ফলে, শোষক শ্রেণীকে সবসময় তটস্থ থাকতে হতো। তাঁর বাক্রুদ্ধ করতে না পারলেও তারা বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবে রুদ্ধ করে রাখে। কিন্তু মুজিব এমন একটি শব্দ- যা উচ্চারণে বাঙালীর প্রাণে তোলে ঢেউ, মৃতপ্রাণে জাগে সাড়া। কবি আবদুস সাত্তার তার একটি অমিয় নাম কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে এভাবে তুলে ধরেছেন-

অমিয় একটি নাম চেতনায় ঢেউ তোলে, রুধিরে জাগায় আলোড়ন

সে নামে প্রাণের সাড়া, মৃত ঘাসে জেগে ওঠে উদ্দাম সজীব যৌবন

সে নামে সতত ভীত মদমত্ত স্বৈরাচার, গর্বোদ্ধত আস্ফালনকারী

ধুলায় লুটায়ে পড়ে রাইফেল, স্টেন আর এজিদের তীক্ষ তরবারি

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাঙালী জাতি নিশ্চুপ ছিল। প্রতিবাদ করতে পারেনি এই অকৃতজ্ঞ জাতি। কবি অন্নদা শঙ্কর রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে কবিতায় লিখেছেন- নরহত্যা মহাপাপ। কিন্তু সন্তান হয়ে পিতাকে হত্যা আরো বড়ো পাপ। আর সেটা যদি হয় সবংশে নিহত- তার মতো গুরুতর পাপ আর কিছু হতে পারে না। আবার সন্তান পিতাকে হত্যা করে যদি ক্ষমা পেয়ে যায় এবং সঙ্গে পায় সাধুবাদ, তবে একসময় পিতা হত্যার এই পাপ তার উপর অভিশাপ হয়ে বর্ষিত হয়। তাই কবি হত্যাকারীদের শাস্তি দানে নীরব না থেকে প্রতিবাদে মুখর হতে বলেছেন।

বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! থেকো নাকো নীরব দর্শক

ধিক্কারে মুখর হও। হাত ধুয়ে এড়াও নরক।

কবি হিমেল বরকত লিখেছেন বিস্মরণের পাপ। আজকের বাঙালী জাতিসত্তার রয়েছে এক গৌরবম-িত ঐতিহ্য। সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হয়েছে এই জাতিকে। কিন্তু আজ আমাদের স্মৃতি বিস্মরণের মোহে আত্মবিনাশী ব্যাধিতে আক্রান্ত। তাই চিনতে পারছি না প্রিয় মাতৃভূমি; ভুলেছি পাখিদের স্বরলিপি, মেধাবীদের রক্তদান, একাত্তরের স্মৃতি। আমাদের মগজের নিচে প্রতারকরা ঘুণপোকার চাষ করছে। তাই-

আমরা চিনি না পিতার হত্যাকারী

আমরা ভুলেছি হত্যার প্রতিশোধ

অক্ষমতার পাপেরা বাড়ায় বাহু

আমাদের ঘৃণা নিষ্প্রভ নিরাকার

বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, তিনি সমগ্র বিশে^ই একজন অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃত। কারণ, তিনি শোষিত মানুষের পক্ষে সারাজীবন লড়াই করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়- বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত, এক পক্ষে শোষক, আরেক পক্ষে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে। কবি বিমল গুহ বঙ্গবন্ধুকে শতাব্দীর বরপুত্র বলে অভিহিত করেছেন। শতাব্দীর বরপুত্র কবিতায়

শতাব্দীর বরপুত্র শেখ মুজিবুর-

আঙ্গুলি হেলনে যাঁর দুলে ওঠে আকাশ বাতাস

কেঁপে ওঠে নক্ষত্রমন্ডল-দশদিক;

তর্জনী উঁচিয়ে সেই শতাব্দী পুরুষ

জাগিয়ে তোলেন এই বাংলার তৃণ মাটি এবং মানুষ।

কবি ফারুক নওয়াজ বঙ্গবন্ধুকে মহাশিশু বলে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ, বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। সেই ইতিহাসে মিশে আছে ক্ষোভ আর পরাধীনতার যন্ত্রণা। মুঘল, পাঠান আর ইংরেজদের মালিকানায় ছিল বাংলা। তিতুমীর, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, সুভাষ বোসসহ অসংখ্য স্বাধীনতাকামী প্রাণপুরুষরা স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অধিকার আদায়ে তাঁরা কেউই সফল হতে পারেননি। বাঙালীকে শোষক শ্রেণীর হাত থেকে মুক্ত করে স্বাধিকার দিয়েছেন মহাশিশু বঙ্গবন্ধু। সেই মহাশিশু কবিতায়-

হাজার বছর, দীর্ঘজীবন কাল মহাকাল পরে

জন্ম নিলেন মহাশিশু এক বাঙালির গেঁয়ো ঘরে।

তিনি বললেন, সবই আমাদের, সবই আমাদের, তবে

আমাদের এ অধিকার পেতে লড়াই করতে হবে।

যুগে যুগে কবিতা মানুষকে আন্দোলন-সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। শোষক-শ্রেণী তাই কবি-সাহিত্যিকদের বাক্রুদ্ধ করতে চেয়েছেন। কিন্তু কবিদের বাক্রুদ্ধ করা সম্ভব হয়নি। জেল-জুলুম সহ্য করেও কবিরা কবিতা লিখেছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলার মানুষের কবি ও কবিতা। কবি কামাল চৌধুরী বাংলার কবি কবিতায় লিখেছেন-

একটি কবিতা রক্ত পলাশে লেখা

একটি মানুষ পতাকায় আঁকা ছবি

বুকে একতারা শ্যামা দোয়েলের গান

মুজিব আজ সারা বাংলার কবি।

বঙ্গবন্ধুকে জাদুকর বলে অভিহিত করেছেন কবি আনজীর লিটন। জাদুকর যেমন জাদুর সাহায্যে সবকিছু সম্ভব করে তোলে; বঙ্গবন্ধু তেমনি বাংলার মানুষের জন্য স্বাধীনতা নামক সোনার হরিণটিকে ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। কবির ভাষায়-

বলল হেসে বঙ্গবন্ধু-

আমি হলাম সেই জাদুকর

বাংলার অন্তরে

রাঙা স্বপন দেই জাগিয়ে

বাঙালিদের ঘরে।

১৫ আগস্ট বাঙালীর জন্য এক দুঃস্বপ্নের দিন। বঙ্গবন্ধু নেই- একথা কবিরা ভাবতে পারেন না। বঙ্গবন্ধু মিশে আছেন এই বাংলার অস্তিত্বের সঙ্গে। কবি শিহাব সরকারও ভাবতে পারেন না বঙ্গবন্ধু নেই। তিনি মনে করেন, বঙ্গবন্ধু জীবিত আছেন তাঁর অস্তিত্বের মায়া ছড়িয়ে কোলাহল থেকে দূরে, নিভৃত কুটিরে। পাখিরা তার হাত থেকে শস্যদানা খুটে খাচ্ছে। তিনি যখন দিঘির কিনারে এসে দাঁড়ান- তখন লাল নীল মাছেরা তাঁর কাছে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে। তিনি আমাদের স্বপ্ন ও বাস্তবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। তাঁকে ছাড়া আমরা অসহায়। তিনি আমাদের শক্তপায়ে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী-পরিতৃপ্ত পিতা। কবির কাছে পনেরো আগস্ট তাই ভীষণ দুঃস্বপ্নের-

এমনও হতে পারতো নাকি-

পনেরো আগস্ট পঁচাত্তরের ভোররাতে

ভীষণ দুঃস্বপ্ন নিশ্চুপ বসে থেকে তারপর

এসে দাঁড়ালেন ব্যালকনিতে:

এ কী দেখলাম বাংলা মাগো, মানুষ আমাকে মেরেছে?

আমার এ পোড়া বুকে যে মানুষেরই ঠাঁই

অনেক দিন পর সময় নিয়ে তিনি সূর্য ওঠা দেখলেন।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন গণতন্ত্রের অতন্দ্র সৈনিক, বাঙালীর স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক। পাকিস্তানী শোষক গোষ্ঠীর শোষণ-নির্যাতনে অতিষ্ঠ বাঙালীর আশ্রয়স্থল ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাঙালীকে ভাবতে শিখিয়েছেন, অধিকার আদায় করতে শিখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু দ্বারা প্রভাবিত হননি এমন বাঙালী পাওয়া দুষ্কর। কিশোর থেকে যুবক, যুবক থেকে বৃদ্ধ সবাইকে সম্মোহিত করেছেন বঙ্গবন্ধু। কবি ইকবাল আজিজ তার কিশোর বয়সে দেখা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন বঙ্গবন্ধুকে প্রথম দেখার স্মৃতি কবিতা। ১৯৬৪ সালে বঙ্গবন্ধু ফাতেমা জিন্নাহর নির্বাচনী প্রচারণা সভায় ভাষণ দিয়েছেন। অধিকাংশ নেতা উর্দুতে ভাষণ দিলেও বঙ্গবন্ধু বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। সেই স্মৃতিকে তুলে ধরেছেন কবি  

বেশিরভাগ নেতাই উর্দুতে ভাষণ দিলেন;

কিন্তু মুজিব দাঁড়ালেন বাংলা ভাষার প্রতিটি বর্ণকে সঙ্গে নিয়ে-

সারাদেহে বিদ্রোহের জয়গাথা এক সুদর্শন মহামানব।

শেখ মুজিবুর রহমান একটি মহাকাব্যের নায়ক ছিলেন। এই মহাকাব্য জাতীয়তাবাদের। আরো নির্দিষ্টার্থে এ হচ্ছে পাকিস্তানি রাষ্ট্র-কাঠামোর অধীনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অভ্যুত্থান ও পরিণতিতে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। সবাইকে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন, ছাপিয়ে উঠেছেন। সেই নায়ককে নিয়ে সাহিত্যিকরা কবিতা-গল্প-উপন্যাস লিখবেন, গীতিকার গান তুলবেন, শিল্পী ছবি আঁকবেন সেটাই স্বাভাবিক। মননশীলের চিন্তায়, শিল্পীর ক্যানভাসে  বঙ্গবন্ধু অমলিন আছেন এবং থাকবেন চিরকাল।


আরও খবর



ঢাকায় পৌঁছেছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
কূটনৈতিক প্রতিবেদক

Image

দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। মঙ্গলবার (১৪ মে) বেলা ১১টার পর কলম্বো থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম।

এদিকে ডোনাল্ড লু’র সফরের কথা ঘোষণা হতেই রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়- কী বার্তা নিয়ে আসছেন তিনি।

জানা গেছে, ভারত, শ্রীলঙ্কা সফরের পর বাংলাদেশ সফরে আসলেন ডোনাল্ড লু। তার এ সফরের মধ্য দিয়ে দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার হবে বলে প্রত্যাশা ওয়াশিংটনের। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র যে মুক্ত, অবাধ ও সমৃদ্ধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল দেখতে চায়, ডোনাল্ড লু’র সফরে সেটাই গুরুত্ব পাবে। ঢাকা সফরে দুই দেশের সহযোগিতার সম্পর্ক ছাড়াও জলবায়ু সংকট ও দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা নিয়ে আলোচনা করবেন ডোনাল্ড লু।

সফরসূচি অনুসারে, ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও অন্য দুই মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া লু’র নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কথা রয়েছে।

ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ ব্যক্তি জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। প্রধানমন্ত্রী চতুর্থবার নির্বাচিত হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট চিঠি লিখে সম্পর্ক এগিয়ে যাওয়ার বা নতুন উচ্চতায় নেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। মার্কিন প্রশাসন থেকে যারাই বাংলাদেশে সফর করুক না কেন, আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করব একসঙ্গে। সেখানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে, আমাদের নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা আছে। এছাড়া র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসানীতি ঢাকা-ওয়াশিংটনের সম্পর্কে কিছুটা দূরত্ব তৈরি করেছে। সেগুলো (র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি) যাতে সহজ করা হয় বা উঠে যায় সেগুলো নিয়ে মার্কিন প্রশাসনে এর আগে হোয়াইট হাউস এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টে এসব আলোচনা করেছি। সেই প্রসঙ্গগুলো স্বাভাবিকভাবে আসতেই পারে। আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে উভয় দেশ কাজ করছি।

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর চারবার বাংলাদেশ সফর করেছেন লু। গত বছরের জুলাইতে তিনি সর্বশেষ বাংলাদেশ সফর করেন। বাংলাদেশের গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ডোনাল্ড লু’র বক্তব্য-বিবৃতি দেশের রাজনৈতিক মহলে তার বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ তৈরি করে।


আরও খবর



উন্নয়ন হতে হবে পরিবেশবান্ধব ও ব্যয় সাশ্রয়ী: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত:শনিবার ১১ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ১১ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

উন্নয়ন পরিকল্পনা পরিবেশবান্ধব ও ব্যয় সাশ্রয়ী হতে হবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে পরিকল্পনাই হোক, সেটা হতে হবে পরিবেশবান্ধব। কারণ জলবায়ুর অভিঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য। পাশাপাশি পরিকল্পনাগুলো যেনো টেকসই হয় এবং খরচের দিকটাও বিবেচনায় নিতে হবে।

আজ শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ-আইইবির ৬১তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রাচীন পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) ৬১তম কনভেনশনের উদ্বোধন করেন।

এবারের ৬১তম কনভেনশনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ফর স্মার্ট বাংলাদেশ। কনভেনশনে সেমিনারের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে দ্য ইঞ্জিনিয়ার্স ফর ট্রান্সফর্মিং টেকনোলজি ড্রাইভেন স্মার্ট বাংলাদেশ।

তিনি জানান, যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কারণেই সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।

বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী প্রকৌশলীদের সাফল্য কামনা করে বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রকৌশলীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

পাঁচ দিনব্যাপী আয়োজিত ৬১তম কনভেনশনে সমাপনী অনুষ্ঠান, জাতীয় সেমিনারের উদ্বোধনী ও সমাপনী পর্ব, শহীদ প্রকৌশলী পরিবারের সংবর্ধনা, চারটি স্মৃতি বক্তৃতাসহ বিদেশি অতিথিদের সংবর্ধণা এবং বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে।

আগামী সোমবার দুপুরে জাতীয় সেমিনারের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিকাল সাড়ে ৩টায় কনভেনশনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ কাদের।


আরও খবর



চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায় ৯ মে

প্রকাশিত:সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আদালত প্রতিবেদক

Image

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আগামী ৯ মে ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (২৯ এপ্রিল) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক আলী আহমেদ রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে এদিন ধার্য করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, তারেক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন, ফারুক আব্বাসী, আদনান সিদ্দিকী, দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী।

১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীতে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় মামলা করেন। সোহেল চৌধুরী নিহত হওয়ার পরপরই এ হত্যাকাণ্ডে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে।

মামলায় অভিযোগ থেকে জানা যায়- হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর কথা কাটাকাটি হয়। এর প্রতিশোধ নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়। ঘটনার রাতে সোহেল তার বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। তাকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। রাত আড়াইটার দিকে আবারও তিনি ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন সোহেলকে লক্ষ্য করে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান গুলি চালান।

মামলার তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসামি আদনান সিদ্দিকী ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন।

বিচারপতি মো. রূহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চ শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট রায় দেন। রায়ে রুলটি খারিজ করে দেয়া হয় এবং হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। মামলায় ১০ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে।


আরও খবর



আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা

প্রকাশিত:শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
জেলা প্রতিনিধি

Image

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে টানা তীব্রতাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪৮ শতাংশ।

গতকাল শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ ডিগ্রি ৭ সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, আজ চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী তিন দিন আরও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। ৪৩-৪৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে তাপমাত্রা। সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি।

তীব্র গরমে ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। এ ছাড়া গরমে জেলা সদর হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়া ও শিশু রোগীর সংখ্যা। ফলে ওয়ার্ডের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। বহির্বিভাগেও রয়েছে রোগীদের চাপ। প্রতিদিন গড়ে গরমজনিত কারণে ৭০০-৮০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহা. আতাউর রহমান।

এদিকে তীব্র গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার জনজীবন। সব থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। দিনে বাসায় থাকা দায় হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাতে মশার যন্ত্রণা। গরমের সঙ্গে ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় সারা রাত নির্ঘুম কাটাতে হচ্ছে।

মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চুয়াডাঙ্গা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আবু হাসান বলেন, জেলায় গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সেখানে আমরা পাচ্ছি ৯০-৯২ মেগাওয়াট। তাই ঘাটতি পূরণ করতেই লোডশেডিং চলছে।

এদিকে তীব্র গরমে জেলাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করলেও কৃষকরা এখনই বৃষ্টি চাচ্ছেন না। কয়েকজন কৃষক বলেন, তীব্র গরমে আমরাও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। তবে এখন ধান কাটার মৌসুম চলছে। এ সময় বৃষ্টি হলে কৃষকরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।


আরও খবর



যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত:সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আদালত প্রতিবেদক

Image

সরকারের বিরোধী ষড়যন্ত্র, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে মিথ্যাচার এবং ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে জনগণকে বিভ্রান্ত ও সরকারকে বিব্রত করার অভিযোগে বেসরকারি সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন বাদী হয়ে ঢাকা মহানগর মূখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে এই মামলা করেন।

সিএমএমের পক্ষে মহানগর হাকিম (শাহবাগ আমলী আদালত) বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ ও অভিযোগের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে পুলিশ ব‍্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।

এর আগে গত ২০ এপ্রিল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের তথ্য প্রকাশ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সেখানে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গত ২০ বছর মন্ত্রী থেকেও ওবায়দুল কাদের সড়ক পরিবহন খাতের উন্নয়নে ও দুর্ঘটনা রোধে কিছুই করতে পারেননি। তিনি চাইলে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন।

বাদী হানিফ খোকন মামলার আরজিতে উল্লেখ করেন, ওবায়দুল কাদের ২০ বছর মন্ত্রীত্ব করছেন না। তিনি ১৪ বছর সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন এবং তার আমলে সড়ক যোগাযোগ খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হক সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা উল্লেখ না করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই সংখ্যা বাড়িয়ে বলেছেন।

বাদী অভিযোগ করেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতি মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন এবং পরিবার ও সমাজে ব্যাপকভাবে সম্মানহানী করেছে। যা পেনাল কোড ৫০০/৫০১/৫০৬ ধারায় অপরাধ। জনগণকে বিভ্রান্ত ও সরকারকে বিব্রত করতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি এসব মিথ্যাচার করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

বাদী হানিফ খোকনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ মুশতাক আহমেদ। এর আগে একই অভিযোগে ২৩ এপ্রিল শাহবাগ থানায় জিডি করা হয়েছে।


আরও খবর