হত্যাকারী মাদকাসক্ত স্বামী ভরণপোষণ না করায় তালাক দিয়েছিলেন আকলিমা আক্তার। সাত সন্তানের দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছিলেন। কোনো না কোনোভাবে সন্তানদের খাবারের ব্যবস্থা তিনিই করতেন। কিন্তু পাষণ্ড সাবেক স্বামীর আক্রোশের শিকার হলেন তিনি। নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তাকে। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে হত্যাকারী বাবা। আর মমতাময়ী মাকে হারিয়ে এখন দিশেহারা সাত সন্তান! তাদের কপালে এক মুঠো খাবারো জোটে না!
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সামনে আসে তাদের অসহায় মুখগুলো। সাত সন্তানরা হলো তাহমিনা আক্তার, তানজিনা আক্তার, মমনিনা আক্তার, ছাবিনা আক্তার, সাহেদা আক্তার, আতাউর রহমান ও হাবিবুর রহমান।
আজ বিকেল ৪টার দিকে চুনারুঘাট উপজেলার ছনখলা গ্রামে নিহত আকলিমার বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সাত সন্তানকে।
মেজো মেয়ে তানজিনা আক্তার জানায়, তার বাবা মাদকাসক্ত। প্রায়ই নেশা করে বাড়ি ফিরে তাদের মাকে নির্যাতন করতেন। বাবা আমাদের ভরণপোষণ করেন না। মা-ই আমাদের একমাত্র ভরসা ছিলেন। আমার বাবা সেই মায়ের হাত-পা কেটে দিয়েছে। এখন আমরা কেমনে বাঁচুম!
এই কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। তার কান্না দেখে বাকি ছয় ভাই-বোনও বিলাপ করতে থাকে। মা-বাবাকে হারিয়ে সাত সন্তান দিশেহারা। তাদের কোনো সম্পত্তিও নেই।
বড় মেয়ে তাহমিনা বলেন, দুপুরে খাবারের ব্যবস্থাও ছিল না। পরে তারা নানার বাড়ি ছনখলা চলে যান। এর মধ্যে বড় মেয়ে তাহমিনা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। তিনি স্বামীর বাড়ি অবস্থান করলেও তেমন অবস্থা নেই।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ১৫ বছর পূর্বে গাজীপুর ইউনিয়নের সোনাচং গ্রামের ফজল মিয়ার ছেলে সুজন মিয়ার (৩৮) সাথে একই ইউনিয়নের ছনখলা গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের মেয়ে আকলিমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের কোলজুড়ে আসে সাত সন্তান। কিন্তু পরবর্তীতে বনিবনা না হওয়ায় সম্প্রতি তাদের মধ্যে তালাক হয়। এরপর খেতামারা আশ্রয়ণে অবস্থান নেন আকলিমা।
শনিবার সন্ধ্যায় সুজনের সাথে রাস্তায় দেখা হয় তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী আকলিমার। এ সময় তাকে বাড়িতে নেয়ার জন্য সুজন টানাটানি করেন। কিন্তু আকলিমা বাড়িতে যেতে চাননি। তিনি সুজনকে গালিগালাজ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুজন তার হাতে থাকা দা দিয়ে ঘটনাস্থলেই আকলিমাকে কুপিয়ে শরীর থেকে বাম হাত আলাদা করে ফেলেন। পরে দা দিয়ে কুপিয়ে একটি পা কেটে ফেলেন। গুরুতর আহত আকলিমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় তার। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।