মাদারীপুর পৌর শহরের শকুনী লেক এখন বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। বিশাল এলাকাজুড়ে এ লেকের সৌন্দর্য মানুষের নজর কাড়ছে। এখানে প্রতিদিন বিকেলে সব বয়সী মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৩৭-৩৮ সালের দিকে প্রমত্তা পদ্মা ও আড়িয়ালখাঁ নদীর ভাঙা-গড়ার খেলায় মাদারীপুরের মূল শহরের অস্তিত্ব বিলীন হতে থাকে।
নতুন করে শহর স্থানান্তরের জন্য মাটির প্রয়োজনে ১৯৪২-৪৩ সালে লেকটি খনন করা হয়। সে সময় এ এলাকাটি ছিল জনমানবহীন এবং বনজঙ্গলে ভরা একটি নিন্মভূমি। নদী ভাঙন কবলিত তৎকালীন মহকুমা শহরের কোর্ট-কাচারি, অফিস-আদালত, হাসপাতাল, থানা, জেলখানাসহ সরকারী কর্মকর্তাদের বাংলো স্থানান্তরের জন্য এলাকাটি বেছে নেওয়া হয়। ২০১৭ সালে পৌরসভার তত্ত্বাবধানে সাড়ে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে লেকটি আরও দৃষ্টিনন্দন করা হয়। লেক দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসছেন বহু মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, সৌন্দর্যময় লেকের পশ্চিম পাড়ে আছে লেক ভিউ ক্লাব, ডিসি একাডেমি, ঐতিহাসিক জামে মসজিদ ও ময়দান। দক্ষিণে সার্কিট হাউস, মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তন, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভবন, চৌধুরী ক্লিনিক। লেকের পূর্ব পাড়ে জেলা পরিষদের ডাক বাংলো, সদর হাসপাতাল, সিভিল সার্জন ভবন, পুলিশ লাইনস ময়দান। উত্তরে বঙ্গবন্ধু ‘ল’ কলেজ, সরকারি পাবলিক লাইব্রেরি, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, স্বাধীনতা অঙ্গন, মাদারীপুর সরকারি সমন্বিত অফিস ভবন।
অপরদিকে লেকের এই বিনোদন কেন্দ্রকে ঘিরে এক শ্রেণির গরীব মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ভাসমান ফেরিওয়ালারাও পেয়েছে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা।
ঘুরতে আসা সুইটি আক্তার, জেবু, মারিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা সব বয়সী মানুষের জন্য আছে মুখরোচক নানা ধরনের খাবার দোকান। আরও আছে মিনি চাইনিজ রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুডের দোকান। আছে পিঠাপুলি ও নামী-দামী চটপটি-ফুসকার সমাহার। শিশুদের জন্য আছে আকর্ষণীয় খেলনার দোকান। তাই এখানে দিন দিন মানুষের উপস্থিতি বাড়ছে।
মাদারীপুরের ইতিহাস গবেষক, সাংবাদিক, লেখক সুবল বিশ্বাস বলেন, চল্লিশ দশকে বিশাল এ লেকটি খনন করতে বহু সংখ্যক মাটিকাটা শ্রমিক দরকার হয়। কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক শ্রমিক এ অঞ্চলে না থাকায় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের সময় ভারতের বিহার ও ওড়িশা অঞ্চল থেকে ২ হাজার শ্রমিক আনা হয়। ৯ মাসে লেকের খনন কাজ শেষ। সেদিনের সেই কৃত্রিম লেক আজ দৃষ্টিনন্দন সরবর-মানুষের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র। বহিরাগত যে কেউ মাদারীপুর শহরে প্রবেশ করেই লেকের মনোরম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হবেই।
মাদারীপুরের পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অব নেচারের সদস্য কেএম জুবায়ের জাহিদ বলেন, লেকটি মাদারীপুর পৌর শহরের ঐতিহ্যবহন করে। একই সঙ্গে মাদারীপুর শহরের ইতিহাস ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে এ লেক। তবে সুদূর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে লেকের পানি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কোনো প্রকার ময়লা আবর্জনা ফেলতে দেওয়া যাবে না। তবেই আমাদের এই ঐতিহ্য রক্ষা পাবে।
মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র মো. খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, লেকটি মাদারীপুরের সৌন্দর্য। এটি রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। দিনে দিনে লেকটি পরিচিত ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই এই লেকের সৌন্দর্য দেখাসহ বিনোদনের জন্য সব বয়সের মানুষের উপস্থিতি লক্ষণীয়। আশা করছি ভবিষ্যতে লেকটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হবে।