সুন্দরগঞ্জ
(গাইবান্ধা) থেকে জুয়েল রানা:
নাম পরিমল চন্দ্র
শীল। পেশা নরসুন্দর বা নাপিত। বয়স ৬০ বছর ছুই ছুই করছে। দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ধরে গাইবান্ধার
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ গোটের রেইনট্রি গাছে আয়না ঝুলিয়ে চুল ছাঁটানোর কাজ করে আসছে।
প্রতিদিনের রোজগার ৬০ হতে ৮০ টাকা আর বর্তমানের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাবৃদির বাজারদর
তার সংসার জীবনকে থামিয়ে দিয়েছে। দুই ছেলে,এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন
করছেন তিনি। গ্রাম-গঞ্জের নরসুন্দর পেশায় জড়িতদের অবস্থা এখন শোচনীয়। সরকার জেলে সম্প্রদায়ের
জন্য আলাদা আইডি কার্ড তৈরি করে তাদেরকে বরাদ্দ প্রদানের ব্যবস্থা করলেও শীল সম্প্রদায়ের
জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।
নরসুন্দর পরিমল
চন্দ্র শীল জানান, তার শুরুটা ছিল মাটির মধ্যে টুলে বসিয়ে চুল ছাঁটানো। এরপর অনেক কষ্ট
করে একটি কাঁঠের চেয়ার তৈরি করে গাছের মধ্যে আয়না ঝুলিয়ে কাজ করছে। সাধ্য না থাকায়
কোন প্রকার দোকান ঘর ভাড়া নিতে পারেনি সে। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-তুফানসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক
দুর্যোগ মোকাবেলা করে চলছে তার পেশা। দীর্ঘ ৩৫ বছরেও তাকে কেউ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়নি।
তারপরও বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে যায়নি অন্য পেশায়। সে জানায় অনেক দিন তাকে শুণ্য হাতে বাড়ি
যেতে হয়েছে। অভাবের তাড়নায় হয়তো কোন স্যারের নিকট থেকে কিছু টাকা নিয়ে পরিবারের জন্য
চাল ডাল কিনে নিয়ে গেছে বাড়িতে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন আর কেউ তার নিকট কাজ করায় না।
বর্তমানে তার প্রতিদিনের রোজগার গড় ৬০ হতে ৮০ টাকা। যা দিয়ে সংসার চালানো তার জন্য
কষ্টকর হয়ে পরেছে। তিনি আশাবাদী যদি একটি দোকানঘর কাজ করতে পারতেন তাহলে তার রোজগার
বাড়ত। এই পেশায় তার জীবন শেষ করতে চান তিনি।
অবসরপ্রাপ্ত
স্কুল শিক্ষক শাহজান মিঞা জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে পরিমল এই গাছের নিচে চুল ছাঁটানোর
কাজ করে আসছেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় অর্থাভাবে আজও তার কোন পরিবর্তন হয়নি।
কাজ না থাকায় অনেক দিন তাকে সহায়তা করেছি। তার পেশাকে সে আকড়ে ধরে রয়েছে এই গাছের নিচে।
বর্তমান নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির বাজারদর যে হারে বেড়ে গেছে, তাতে করে সংসার চালানো তার জন্য অনেক কষ্টকর হয়ে পরেছে। এই
সম্প্রদায়ের প্রতি সরকারের নজর একান্ত প্রয়োজন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী
রেজাউল ইসলাম জানান, পরিমল বাবু প্রতিদিন সকাল ১০টার মধ্যে আসে। কাজ থাক আর না থাক
খেয়ে না খেয়ে বিকাল পর্যন্ত বসে থেকে চলে যায়। তার কাজের কোন রেট নেই। মানুষ কাজ করে
যে টাকা দেয়, তা নিয়ে সে খুশি। তিনি বলেন প্রতিদিন তার রোজগার গড় প্রায় ৬০ টাকা। ছোট
একটি আয়না গাছের মধ্যে ঝুলিয়ে রোদের মধ্যে সে কাজ করে। মানবিক কারনে অনেকে তার নিকট
সেভ ও চুল ছাঁটায়।
উপজেলা নরসুন্দর
সমিতির সাবেক সভাপতি বিপুল চন্দ্র সরকার জানান, এখনো গ্রাম-গঞ্জে অনেক নরসুন্দর রয়েছে,
যারা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চুল ছাঁটানোর কাজ করে থাকেন। আবার অনেকে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে
মোড়ে সকাল বিকাল এ কাজ করে থাকেন। দিন বদলে গেলেও অর্থাভাবে অনেকে দোকান ঘর তুলে সেলুন
চালু করতে পারেনি। শীল সম্প্রদায়ের বাহিরের অনেকে এখন এই পেশায় জড়িয়ে গেছে। আধুনিকতার
ছোঁয়ায় অসহায় নরসুন্দরগণ পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। প্রকৃত শীল সম্প্রদায়কে এই পেশায়
স্বচল করতে সরকারি সহায়তার বিকল্প নেই।