অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রির কার্যক্রম শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। এতে গ্রাহক ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। বাংলাদেশরেলওয়ের ই-টিকেটিং সার্ভিস প্রোভাইডার পরিবর্তন করে নতুন কোম্পানি ‘সহজ’কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রবিবার এ নিয়ে রেল ও সহজ কর্তৃপক্ষের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা।
অনলাইনে টিকিট বিক্রির কার্যক্রম কবে সচল হবে তা রেল এবং সহজ কর্তৃপক্ষ কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। শনিবার সকাল ৮টা থেকে ই-টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু শুরুতেই ওটিপি, ওয়েবসাইট লোডিং ও সার্ভারে সমস্যাসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়।
রেলের সূত্রে জানা গেছে, সহজ ডটকম জানিয়েছে, অনলাইনে টিকিট বিক্রির কার্যক্রম শিগগিরই তারা চালু করতে পারবে না। যদিও বর্তমানে অর্ধেক টিকিট অনলাইনে বিক্রির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই রেল কর্তৃপক্ষ সহজ ডটকমকে লিখিতভাবে সমস্যার বিষয়ে জানাতে বলেছে। অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা না গেলে শতভাগ টিকিট কাউন্টারের মাধ্যমে বিক্রি হবে। যদিও এতে গ্রাহকের ভোগান্তি কমবে না।
অনলাইন ও অ্যাপে টিকিট বিক্রির বিষয়ে রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত বলেন, আগের অ্যাপটির মালিকানা ছিল সিএনএসের। এ জন্য নতুন অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টিকিট বিক্রির অনলাইন ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে রবিবার সহজ ডটকমের সঙ্গে বিস্তারিত বৈঠক হবে।
সহজের জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক ফারহাত আহমেদ বলেন, আগের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএনএস রেলের অ্যাপ তাদের বুঝিয়ে দেয়নি। এ জন্য অ্যাপে টিকিট বিক্রি বন্ধ আছে। আর অনলাইনে টিকিট বিক্রির সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সিএনএস শেষ সময় বুঝিয়ে দেয়। এরপরও সহজ ডটকম নিজেদের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার বসিয়ে অনলাইন টিকিট কার্যক্রম চালু করে। কিন্তু গতকাল মিনিটে ২২ লাখ হিট বা ভিজিট হওয়ার পর সমস্যা দেখা দেয়। শুধু অনলাইনে এই অচলাবস্থাটা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন স্টেশনে কম্পিউটারাইজ প্রোগ্রামে কোনো সমস্যা হয়নি। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমরা দেশের ৭৭টা স্টেশনে কম্পিউটারাইজ পদ্ধতিতে প্রায় ৪১ হাজার টিকিট বিক্রি করেছি।’
ফারহাতের ভাষ্য, ‘সাইবার হামলার’ কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আদৌ সাইবার হামলা নাকি কারিগরি অন্য জটিলতা- এ প্রশ্নের উত্তরে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘এই কথাটা প্রথম শুনলাম, সাইবার হামলার কথা শুনিনি। সকালে শুনেছি কিছু সমস্যা হয়েছে। আমাদের জানানো হয়েছে, প্রায় দুই লাখ মানুষ এক সঙ্গে টিকিট কাটতে ঢোকায় ক্যাপাসিটির সমস্যা হয়েছে। তাদের (সহজ) বলা হয়েছে, তারা কাজ করছে।’
রেলওয়ের উপপরিচালক (টিসি) নাহিদ হাসান খাঁন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘নতুন সিস্টেমে অনলাইন টিকেটিং সকাল ৮টা থেকেই চালু হয়েছে। কেউই পায়নি এমনটা নয়; তবে অনেকেই পায়নি এটা ঠিক। আগের সিস্টেমে প্রায় ৪০ লাখের ওপর রেজিস্ট্রেশন করা ছিল। তাদের আবার নতুনভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হচ্ছে, তাই সার্ভারে চাপটা একটু বেশি পড়ে গেছে। মাঝে মাঝেই সার্ভার ডাউন হচ্ছে, আবার কিছুক্ষণ পর পর ঠিকও হয়ে যাচ্ছে। আর আজকে প্রথম দিন, একটু সমস্যা হবেই। তার মানে এই নয় যে টিকেটিং বন্ধ আছে।’
সমস্যা সমাধানে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে নাহিদ বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ নতুন সিস্টেমে শুরু হয়েছে। আগের সিস্টেম প্রায় ১২ বছর যাবৎ চলেছে। কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সেগুলো আমরা রেক্টিফাই করছি এবং দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।’
বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৯৯৪ সালে কম্পিউটারভিত্তিক টিকেটিং সিস্টেম চালু করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ২৭টি স্টেশনে কম্পিউটারাইজড টিকিট বিক্রি শুরু হয়। বর্তমানে ১০৪টি আন্তনগর ট্রেনের টিকিট ৭৭টি স্টেশনে কম্পিউটারের মাধ্যমে ইস্যু করা হচ্ছে। দৈনিক প্রায় ৯০ হাজার ও মাসিক প্রায় ২৭ লাখ যাত্রীর টিকিট কম্পিউটারের মাধ্যমে ইস্যু করা হয়। এ সব টিকিটের ৫০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১৩ লাখ টিকিট অনলাইন/মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দেওয়া হয়। সিএনএসের পর সহজ লিমিটেডও মোট টিকিটের ৫০ শতাংশ অনলাইনে বিক্রি করবে। সহজের দাবি, ২১ দিনে ট্রেন টিকেটিং সলিউশন তৈরি করেছে তারা।
অনলাইনে বাস, লঞ্চ টিকিট বিক্রির অভিজ্ঞতা থাকা সহজ আরও দুই কোম্পানিকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে আগামী পাঁচ বছরের জন্য ট্রেনের টিকিট ব্যবস্থাপনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ফারহাতের দাবি, ‘চুক্তি অনুযায়ী-চুক্তি সইয়ের দিন থেকে পরবর্তী ২১ কর্মদিবসের মধ্যে রেলের টিকিট পরিচালনায় ব্যবহৃত সফটওয়্যার হস্তান্তর করার কথা থাকলেও তা যথাযথভাবে হয়নি।’
তাদের কাছে অ্যাপও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সহজের এই কর্মকর্তা। এর আগে সিএনএসের নিজস্ব সাইটের মাধ্যমে রেলের টিকিট বিক্রি হলেও এবার তা রেলওয়ের নিজস্ব সাইট (www.eticket.railway.gov.bd) থেকে টিকিট মিলবে।