ঢাকার সাভারে ভয়াবহ তাজরিন গার্মেন্টসের অগ্নিকাণ্ডের ট্রাজেডির ১১ বছর পূর্ণ হল আজ। নিহত শ্রমিকদের স্মরণে পুড়ে যাওয়া কারখানার সামনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন নিহত শ্রমিকদের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় প্রথমেই আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরিন ফ্যাশনসের প্রধান ফটকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শিল্প-পুলিশ। এরপরেই শ্রদ্ধা জানান, ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স (ইউএফজিডব্লিউ) এর সাভার আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ ইমন শিকদার, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর শেখ লালন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ঈসমাইল হোসেন ঠান্ডু, বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোঃ তুহিন চৌধুরী, আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ কবির হোসেন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মোঃ মাহবুব আলম বাচ্চু, সাভার আশুলিয়া অঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আল মামুন বিপ্লবসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স এর সাভার আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ ইমন শিকদার বলেন, তাজরীন ট্রাজেডি আজ ১১বছর পার হয়ে গেলেও এখনও এই ঘটনায় খুনি দেলোয়ারসহ জড়িতদেরকে উপযুক্ত শাস্তি হয়নি। তাই তাদেরকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হোক। এছাড়া আহত ও নিহতদের পরিবারের অনেকে যথাযথ সাহায্য সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তারা আজও দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। তাদের জন্য পূর্নবাসনসহ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার জন্য সরকার প্রধানের দৃষ্টিপাত কামনা করছি।
বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ কবির হোসেন বলেন, তাজরিন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার এক যুগ হয়ে গেলেও আহত শ্রমিক ও নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাইনি। অনেক ভাই-বোন অসুস্থ অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। এখনও অসুস্থতা নিয়ে অনেক শ্রমিক কষ্টে দিন পার করতেছে। এত বছরেও সরকার কিংবা বিজিএমইএ কেউই আমাদের খোঁজ রাখেনি। অবিলম্বে কারখানার মালিক দেলোয়ারের শাস্তিসহ তাদেরকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানাই।
শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, তাজরিন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা একটি বেদনাদায়ক ঘটনা। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত রিপোর্ট বিজ্ঞ আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। বিচারকাজ যাতে তরান্বিত হয় সেদিকেও আমরা নজর রাখছি। আমাদের সবরকমের প্রচেষ্টা থাকবে। এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে, ইন্ডাস্ট্রি করার ক্ষেত্রে কোন বিষয় গুলোকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সেসব বিষয় খেয়াল রাখছি।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাজরিনে হতাহত শ্রমিকদের স্মরণে পুড়ে যাওয়া কারখানার সামনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরিন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কারখানার ভিতরে আগুনে পুড়ে মারা যায় ১১১জন শ্রমিক। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন আরও ৭ শ্রমিক। এঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন যাপন করছেন আরও প্রায় শতাধিক শ্রমিক।