পায়ে শিকল পরা অবস্থায় দিন শুরু হয়, বিকেল
গড়িয়ে অন্ধকার নামে এ অবস্থাতেই। ফলে পায়ের সঙ্গে শিকল যেন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাড়িঁয়েছে
কলম উদ্দীনের (৪০) জীবন। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভালাইপুর গ্রামের মৃত আসাদুল বিশ্বাসের
(বুড়ো) ছেলে কলম উদ্দিন ১০ বছর যাবৎ শিকল বাঁধা অবস্থায় মানবেতর জীবনযাবন করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পায়ে লোহার শিকল দিয়ে
গোয়াল ঘরের একটি ইটের পিলারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে কলম উদ্দীনকে। কখনো সে দাঁড়িয়ে
থাকছে, কখনো শুয়ে-বসে সময় কাটাচ্ছে। আবার কখনো হাসি-কান্নার মধ্য দিয়েই কাটছে তার জীবন।
কেউ গেলে তার সাথে স্বাভাবিক মানুষের মত কথা বলে সে। সন্তানের এ অবস্থা দেখে চিন্তায়
মানোসিক রোগী হয়ে গেছেন মা মঞ্জুরা বেগম।
পরিবারের সদস্যেদের সঙ্গে কথা বলে জানা
যায়, ১০ বছর আগে থেকে তার মধ্যে মানসিক কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। অস্বাভাবিক আচরণ শুরু
করে। সে সময় তাকে ছেড়ে দিলে কোথাও চলে যেতে পারে এ আশঙ্কায় তাকে বেধে রাখা হয়েছে। তার
কোন চিকিৎসা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে, তার মা মঞ্জুরা বেগম বলেন তাকে কোন চিকিৎসা
করানো হয়নি, কে করবে চিকিৎসা?
শীতের ভেতর তাকে কোন শীত বস্ত্রও দেয়নি
পরিবারের লোকজন। তারা বলেন শীত বস্ত্র গায়ে রাখে না। সে কারণে তাকে শীত বস্ত্র দেওয়া
হয় না। প্রচন্ড শীতে গোবর মাখা একটি চাদরই তার শীতবস্ত্র।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মশিয়ার রহমান জানান,
মৃত আশাদুল বিশ্বাস (বুড়ো) এর ৪ ছেলে ২ মেয়ে। তাদের মধ্যে কলম ৩য়। সে এক সময় মাঠে গরু
চরাতো। ৮-১০ বছর যাবৎ তাকে আর দেখতে পাওয়া যায় না। তাদের বাড়ি চারিদিক ইটের প্রাচীর
দিয়ে ঘেরা। এ অমানবিক বিষয়টি জানতে পেরে আমার খুবই খারাপ লাগছে। আমি তার ভাইদের সাথে
কথা বলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখব।
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুপ দাশ
বলেন, বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।