আলেশা মার্ট ও
ই-অরেঞ্জসহ নয়টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে-ধামাকা, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, সিরাজগঞ্জ
শপ, কিউকুম, নিড ডটকম ডটবিডি। এসব প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা, মোট দায় এবং
প্রতিষ্ঠানের চলতি ও স্থায়ী মূলধনের তদন্ত করা হচ্ছে।
এর আগে বাংলাদেশ
ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা প্রতিবেদন চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছে মন্ত্রণালয়। এর বাইরে আরও কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের
কার্যক্রমের ওপর নজর রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
এদিকে প্রতারণা
ঠেকাতে ই-কমার্সের বিজ্ঞাপনের নিচে ‘অনলাইনে পণ্য
ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতারণা থেকে সাবধান’-এমন সর্তকবাণী
লিপিবদ্ধ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এটি নিশ্চিত করতে তথ্য মন্ত্রণালয়কে বৃহস্পতিবার চিঠি
দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এছাড়া বিদ্যমান
মানি লন্ডারিং আইনে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। বাণিজ্য
মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে বিদ্যমান আইনের সংশোধনীর কাজ শুরু করেছে।
জানা যায়, বাণিজ্য
মন্ত্রণালয়ের তদন্তের তালিকায় রয়েছে ধামাকা। ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের
নামে নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ধামাকা নামে লোভনীয় অফার ও ভার্চুয়াল সিগনেচার
কার্ড বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসা করে আসছিল। মানুষের কাছ থেকে তারা ৮০৩ কোটি টাকা হাতিয়ে
নেয়, যার একটি অংশ পাচার করা হয়। এজন্য ৯ সেপ্টেম্বর ৫ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা
করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এছাড়া ই-মানি
আকারের ৪৭ কোটি ৪৩ লাখ ১৮ হাজার ৯৬৩ টাকা প্রতারণা করে নিয়ে গেছে সিরাজগঞ্জ শপ। নগদের
পক্ষ থেকে সিরাজগঞ্জ ডটকমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এরপর থেকে সিরাজগঞ্জ ডটকমের
মালিক জুয়েল রানার ফোন বন্ধ। চট্টগ্রামের বাসিন্দা এস জামাল চৌধুরী জাতীয় ভোক্তা অধিকার
অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন আদিয়ান মার্ট অন লাইনের বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, ‘গত ৫ এপ্রিল ২টা
ইনভয়েসের (চালান) বিপরীতে এডিম-০৪০৪২৩১৮৫৪২৫, এডিম-০৪০৫১৩০৫২৮৩৭) ৪টা রাইস কুকার এবং
একটি ওয়ালটন ৪৩” স্মার্ট টিভি অর্ডার করি। ২১ কার্যদিবসের
মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিলেও এখন
পর্যন্ত সব পণ্য দেওয়া হয়নি।’ তিনি যোগাযোগ
করার পর মাত্র ৩টি রাইস কুকার পেয়েছেন; কিন্তু ১টি রাইস কুকার ও টিভি বুঝে পাননি।
এদিকে ই-কমার্সের
আদলে বিদেশে অর্থ পাচার প্রতিরোধ করতে মানি লন্ডারিং আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে
বলেন, বর্তমান মানি লন্ডারিং আইনে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে কাভার করছে না। ফলে এই আইনে
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে করা মামলা আদালতে টিকবে না। এখন আইনটি সংশোধন করে সেখানে ই-কমার্স
বসাতে হবে।
সূত্রমতে, বর্তমান
এক হাজার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর কোনোটিরই নিবন্ধন নেই। অনেক ই-কমার্স চলছে
পুরোপুরি নিজস্ব নীতিতে। মন্ত্রণালয়ের দাবি, গত ৪ জুলাই ই-কমার্স নীতিমালা প্রণয়ন করা
হয়েছে। এরপর থেকে এ খাতে নৈরাজ্য ধীরে ধীরে কমছে।
এর উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়, নীতিমালা প্রণয়নের আগে ইভ্যালিতে ৬ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আর নীতিমালা প্রণয়নের ৪ মাসে সেখানে লেনদেন হয়েছে ৪শ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২শ কোটি টাকা পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। অন্য কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা অনেকটা ফিরে আসছে।