চট্টগ্রামের
হাটহাজারী উপজেলার নাজিরহাট নতুন ব্রিজ এলাকায় হালদা নদীর তীররক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে গেছে।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় দুই শিশু নিহত হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে
আরও দুইজন। উদ্বেগ উৎকণ্ঠা মধ্যে দিয়ে দিন-রাত পার করছেন এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার
(২২ আগস্ট) রাতে ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট নতুন ব্রিজ এলাকায় প্রায় ১৫ ফুট বাঁধ ভেঙে
গেছে। ফলে পানি ঢুকছে ফটিকছড়িতে।
শুক্রবার (২৩
আগস্ট) নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকে পড়ছে। বিভিন্ন এলাকায় হালদা নদীর উপর দিয়েও পানি
প্রবাহিত হচ্ছে।
বাঁধ উপচে ও
ভেঙে যাওয়া বাঁধের অংশ দিয়ে পানি ঢুকে উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত
হয়েছে। এতে কয়েকশত ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। হালদার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে ২২টি স্থানে বাঁধ ভেঙেছে। ভাঙা অংশে জিও ব্যাগ ফেলে পানি প্রবেশ বন্ধের চেষ্টা
চালানো হচ্ছে।
ভয়াবহ বন্যায়
উপজেলাজুড়ে বন্যাদুর্গত মানুষের বাঁচার আকুতি, হাহাকার, আতংকে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তবে
উপজেলার বাইরের স্বেচ্ছাসেবী ও মানবিক সংগঠনগুলোর সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে। উদ্ধার তৎপরতা
ও ত্রাণ বিতরণে উপজেলা প্রশাসন, আইন শৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি এসব সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবীদের
ভূমিকা ছিল যথেষ্ট।
স্থানীয় বাসিন্দারা
জানান, পানি স্রোতের তীব্রতা এত বেশি যে, কেউ দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। বাঁধ ভেঙে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি
মহাসড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ওই সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এখন বৃষ্টি
হচ্ছে না তারপরও পানি বাড়ছে। বিশেষ করে উপজেলার সুন্দরপুর, ভুজপুর, বাগানবাজার, পাইন্দং
এলাকার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। এখানকার অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের জরুরি
ভিত্তিতে তীরে উদ্ধার করে নিয়ে আসা জরুরি। উদ্ধারে সাহায্য ও সহযোগিতা চেয়ে ফটিকছড়ির
অনেক বাসিন্দা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক, গহিরা-হেঁয়াকো সড়ক,
নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়ক, কাটিরহাট-সমিতিরহাট-আজাদীবাজার, সমিতিরহাট-নানুপুর সড়কের বিভিন্ন
স্থানে পানিতে ডুবে আছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এসব সড়কের বিভিন্ন স্থানে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল
হক চৌধুরী জানান, ‘ফটিকছড়ির নাজিরহাট এলাকায় হালদা নদীর বাঁধ ভেঙে পানি এলাকায় প্রবেশ করছে।
এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে খালগুলো থেকে পানি উপচে লোকালয়ে প্লাবিত হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ
থেকে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি
অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘উপজেলা চাষাবাদদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি কমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ
নিরুপণ সম্ভব হবে।’
উপজেলায় দুই
পৌরসভাসহ প্রায় ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক লোক ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে । ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ৫০ মেট্রিক টন চাল ও চার লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে
বলে জানান উপজেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প অফিসার আবুল হোসেন।
উপজেলা প্রশাসনের
পক্ষে বন্যা, জলাবদ্ধতা, পাহাড়ধস পরিস্থিতির জন্য খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। বন্যাকবলিত
এলাকাবাসীর নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা
হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক গঠিত হয়েছে ২০টি ইউনিয়ন ও ৫টি সদর মেডিকেল টিম।
নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্তৃক
টিম গঠন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো.
ছাইফুল্লাহ মজুমদার জানিয়েছেন, ‘চট্টগ্রামে ৯টি উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে
ফটিকছড়িতে ২০টি ইউনিয়নে ১৯ হাজার ৫৮০ পরিবারের এক লাখ ২ হাজার মানুষ পানিবন্দি। একইভাবে
মীরসরাই উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ১২ হাজার পরিবারের ৪৮ হাজার ৫০০ লোক, সীতাকুন্ডের ৬টি
ইউনিয়নের ৫ হাজার পরিবারের ২০ হাজার লোক, হাটহাজারীতে ১২০টি পরিবারের ২ হাজার ৮০০ লোক,
কর্ণফুলীতে ৫টি ইউনিয়নের ১০০টি পরিবারের ৫০০ লোক, পটিয়ায় ১৮টি ইউনিয়নের ৬ হাজার ৯৪৬টি
পরিবারের ২০ হাজার লোক, বোয়ালখালীতে ৩টি ইউনিয়নে ১০০ পরিবারে ৭০০ লোক, বাঁশখালীতে ৮টি
ইউনিয়নে ১ হাজার ৭৫০টি পরিবারের ৮ হাজার ৭৫০ জন এবং রাউজানে ১৩টি ইউনিয়নের ৩২০টি পরিবারের
১ হাজার ৬০০ জন লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।