সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে ১৪২ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। ফলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করেছে নিয়েছে রশিদ খানের দল। প্রথম ওয়ানডেতে বৃষ্টি আইনে হার। একটু আক্ষেপ ছিল, যদি পুরো খেলা হতো! এবার আর সেই আক্ষেপের সুযোগ নেই। যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স দেখিয়েই হেরেছে বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের
কাছে পাত্তাই পায়নি টাইগাররা, হেরেছে ১৪২ রানের বিশাল ব্যবধানে। এই হারে তিন ম্যাচের
সিরিজ এক ওয়ানডে বাকি থাকতেই খুইয়ে বসেছে লিটন দাসের দল।
আফগানিস্তানের রানপাহাড়ে চাপা পড়ে বাংলাদেশের
বড় হার নিশ্চিত হয়ে যায় ব্যাটিংয়ের শুরুর দিকেই। ৩৩২ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে
নেমে রশিদ-নবিদের তোপে ৭২ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে টাইগাররা। তারপর কেবল পরাজয়ের ব্যবধান
কমানোর চেষ্টা।
সপ্তম উইকেটে মুশফিকুর রহিম আর মেহেদি
হাসান মিরাজ গড়েন ১০৮ বলে ৮৭ রানের লড়াকু এক জুটি। তাদের এই জুটিটি শেষ পর্যন্ত ভেঙেছেন
মুজিব। আফগান অফস্পিনারকে তুলে মারতে গিয়ে লংঅনে ক্যাচ হন মিরাজ। ৪৮ বলে তার ২৫ রানের
ইনিংসে ছিল ২টি বাউন্ডারি।
বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই
ধুঁকছিল বাংলাদেশ। প্রথম ওভারটা আফগান ফজলহক ফারুকিকে মেইডেন দিয়ে শুরু করেন নাইম শেখ।
দ্বিতীয় ওভারে স্পিন আক্রমণে নিয়ে আসেন আফগান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদি।
ওই ওভারে মুজিব উর রহমানকে টানা দুই বাউন্ডারি
হাঁকান লিটন। এরপরই অবশ্য বিপদে পড়তে যাচ্ছিলেন। বল প্যাডে লাগলে আফগানদের আবেদনে আঙুল
তুলে দিয়েছিলেন আম্পায়ার।
তবে লিটন সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নিয়ে নেন।
রিপ্লেতে দেখা যায় বল প্যাডে আঘাত হানার সঙ্গে লেগেছে ব্যাটেও। ব্যক্তিগত ৮ রানের মাথায়
বেঁচে যান লিটন। তবে সেই জীবন কাজে লাগাতে পারেননি।
আরও পড়ুন: ব্যাটিং বিপর্যয়ে বাংলাদেশ
আফগান পেসার ফারুকিকে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে
সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ১৫ বলে ৩ বাউন্ডারিতে তিনি করেছেন ১৩ রান।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন ১ রান
করেই। মুজিব উর রহমানের ঘূর্ণি বল বুঝতে না পেরে স্টাম্প উড়ে যায় শান্তর। ২৭ বলে ৯
করেন দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা নাইম শেখ, তার স্টাম্প উড়িয়েছেন ফারুকি। ২৫ রানে ৩ উইকেট
হারিয়ে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ।
অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান আর তরুণ তাওহিদ
হৃদয় সেই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ৫০ বলে তাদের ৪০ রানের জুটিতে
ভাঙন ধরান রশিদ খান নিজের প্রথম ওভারেই। তার দুর্দান্ত গুগলি বুঝতে না পেরে বোল্ড হন
হৃদয়। ৩৪ বলে ২ বাউন্ডারির সাহায্যে ১৬ রান করেন তিনি।
চাপের মুখে সাকিব খেলছিলেন দায়িত্ব নিয়েই।
কিন্তু ১৮তম ওভারে আম্পায়ার্স কলে ফিরতে হয় তাকে। মোহাম্মদ নবির বলে এলবিডব্লিউয়ের
আবেদন হলে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
আরও পড়ুন: টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায় বল প্রায় লেগস্টাম্প
বেরিয়েই যেতো, একটুখানি পেয়েছে। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে আউট হয়। ২৯ বলে ৩ চারে সাকিবের
ইনিংসটি ছিল ২৫ রানের।
পরের ওভারে 'গোল্ডেন ডাক' আফিফ হোসেন ধ্রুবর।
রশিদ খানের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। সেখান থেকে মিরাজ আর মুশফিকের
লড়াই যা একটু পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে।
মুশফিক তার ক্যারিয়ারের ২৫০তম ওয়ানডে খেলতে
নেমেছিলেন। যা একটু লড়াই করেছেন তিনিই। শেষ ব্যাটার হিসেবে মুশফিক আউট হন ৬৯ করে, ফারুকির
শিকার হয়ে। ৮৫ বলের ইনিংসে ৬টি বাউন্ডারি হাঁকান মুশফিক।
৪৩.২ ওভারে বাংলাদেশ থামে ১৮৯ রানে। চোটের
কারণে ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি এবাদত হোসেন।
আফগানিস্তানের ফজলহক ফারুকি আর মুজিব উর
রহমান নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট। ২টি উইকেট শিকার রশিদ খানের।
আরও পড়ুন: তামিম না থাকলেও দলের তেমন কোন ক্ষতি হবে না: লিটন
আফগানদের কাছে নাকাল হয়ে সিরিজ খোয়ালো
বাংলাদেশ
এর আগে ওপেনিং জুটিতে ২৫৬ তোলা ইব্রাহিম
জাদরান আর রহমানুল্লাহ গুরবাজের জোড়া সেঞ্চুরিতে ভর করে ৯ উইকেটে ৩৩১ রানের পাহাড় গড়ে
আফগানরা।।
চট্টগ্রামে প্রথম ওয়ানডেতে আগে ব্যাটিং
নিয়ে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে তাই টস জেতার পর প্রথমে ব্যাট করার
সিদ্ধান্ত নেননি অধিনায়ক লিটন দাস। বরং, আফগানিস্তানকে বেকায়দায় ফেলতে বল হাতে তুলে
নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
কিন্তু আফগানদের বেকায়দায় ফেলা দূরে থাক।
দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরানকেই আউট করতে রীতিমত ঘাম ঝরেছে টাইগারদের।
শুধু জুটি গড়াই নয়, মারমুখী ব্যাটিংয়ে আফগানিস্তানকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন দুই ওপেনার।
আরেকটু হলে রেকর্ড হয়ে যেতো। বাংলাদেশের
বিপক্ষে ওয়ানডেতে প্রথম উইকেটে সেরা জুটিটি ২৮২ রানের। ২০১৭ সালে কিম্বারলিতে হাশিম
আমলা আর কুইন্টন ডি কক গড়েছিলেন এই জুটি।
আরও পড়ুন: তামিমের জায়গায় ডাক পেয়েছেন রনি তালুকদার
ইব্রাহিম জাদরান আর রহমানুল্লাহ গুরবাজ
সেই জুটি ভাঙার পথেই ছিলেন। অবশেষে আঘাত হানেন সাকিব, সেটাও অনেক দেরিতে, ইনিংসের ৩৭তম
ওভারে। ২৫৬ রানের জুটিটি সাকিব ভাঙেন সেঞ্চুরিয়ান গুরবাজকে গুরবাজকে এলবিডব্লিউ করে।
তার আগেই অবশ্য নিজের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস
খেলে ফেলেছেন গুরবাজ। ১২৫ বলে তার ১৪৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংসটিতে ছিল ১৩ চার আর ৮টি
ছক্কার মার। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি।
গুরবাজকে আউট হওয়ার পরের বলেই আরেকটি উইকেট
পেতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু রহমত শাহকে রানআউট করার সুযেগা মিস করেন মুশফিক। বল ধরার
আগেই শরীর দিয়ে বেল ফেলে দেন।
তবে রহমত শাহ জীবন পেয়ে সুযোগ কাজে লাগাতে
পারেননি। পরের ওভারে প্রথম বলেই এবাদত হোসেনকে পুল করে ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে মোস্তাফিজুর
রহমানের ক্যাচ হন তিনি (২)।
পরের ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজ ফিরিয়ে
দেন আফগান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদিকে। টাইগার অফস্পিনারকে সুইপ করতে গিয়ে ২ রানে
বোল্ড হন শহিদি।
নাজিবুল্লাহ জাদরান স্লগে নামলেও ঠিক সুবিধা
করতে পারেননি। ১৫ বল খেলে ১০ রান করে মিরাজকে তুলে মারতে যান। লংঅনে সহজ ক্যাচ নেন
লিটন।
আরও পড়ুন: তামিম না ফিরলে আফগানিস্তান সিরিজে নেতৃত্ব দেবেন লিটন
ইব্রাহিম জাদরান অবশ্য সেঞ্চুরি তুলে নিতে
ভুল করেননি। ১১৯ বলে ৯ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ১০০ করে আউট হন তিনি। ৪৩ রানের মধ্যে
৫ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ।
এরপর রশিদ খান ৬ করে সাকিবকে এগিয়ে মারতে
গিয়ে হন স্টাম্পিং। এরপর লেজের ব্যাটারদের আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেননি মোস্তাজি-হাসান
মাহমুদরা।
২টি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান,
হাসান মাহমুদ, সাকিব আল হাসান আর মেহেদি হাসান মিরাজ।