সাবেক স্ত্রী’র করা ধর্ষণ মামলা থেকে জামিনে এসে তড়িঘড়ি করে বাল্যবিয়ে করেছেন মেহেদি হাসান সোহেল নামের বরগুনা জেলা ছাত্রদলের এক নেতা।
মেহেদি হাসান সোহেল জেলা ছাত্রদলের প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক। তিনি বরগুনার পৌরশহরের ৪নং ওয়ার্ড কেজিস্কুল এলাকার বাসিন্দা বাদল মিয়ার (ব্যাংক বাদল) ছেলে। বিয়ের গত বুধবার তিনি পাথরঘাটার কাকচিড়া ইউনিয়নের মাঝের চর বাড়িতে বৌভাত অনুষ্ঠান করেছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, শহরের কেজিস্কুল সড়কের বাসিন্দা এক ব্যংক কর্মকর্তার কলেজ পডুয়া মেয়ের সাথে বেশ কয়েকবছর প্রেমের সম্পর্কে পর ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পরিবারের সোহেল ওই মেয়েকে বিয়ে করেন। কিন্ত মেয়ের পরিবার বিয়ে মেনে নেয়নি। সোহেলের সাথে স্ত্রী’র পারিবারিক নানা বিষয়ে নিয়ে মতানৈক্য ও বিরোধে সম্পর্কে অবনতি হওয়ায় এক পর্যায়ে উভয় পরিবার ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের মধ্যস্থতায় ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর খোলা তালাকের মাধমে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়।
বিচ্ছেদের পরও সাবেক স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ রাখতে থাকে সোহেল। সোহেলের সাথে ফের যোগাযোগ রাখায় ক্ষুদ্ধ হয়ে মেয়ের পরিবার মেয়েকে বাসা থেকে বের করে দিলে ওই মেয়ে শহরের ব্রাঞ্চ সড়কে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে শুরু করে। কিন্ত সোহেল তালাক দেয়া সাবেক স্ত্রীকে আবারো বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেয়। ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখ বাসা সোহলে তার সাবেক স্ত্রীর ভাড়া বাসায় গিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রাতযাপন করে। বিয়ে না করে পরেরদিন সকালে সোহেল ওই বাসা থেকে বের হয়ে চলে যায় এবং ফোনে জানায় সে বিয়ে করবেনা। সোহেলের এমন প্রতারণার পর ৭ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞ নারী শিশু আদালতে মামলা করেন সোহেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন সাবেক স্ত্রী। আদালত ডিবি পুলিশকে মামলা তদন্ত করে প্রতিবেদনের আদেশ দেন। ডিবির এসআই জাহিদুল ইসলাম কবির গত ৮ মে সোহেলকে অভিযুক্ত করে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন জমা দেন। ১৪ জুন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে ভিক্টিমের ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত করলে জামিন মঞ্জুর করে আদালত। জামিনে মুক্ত হওয়ার পরপরই তড়িঘড়ি করে বিয়ের আয়োজন করে সোহেলের পরিবার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ জুলাই কাকচিড়া ইউনিয়নের বাইনচটকি এলাকার বাসিন্দা ও সিংড়াবুনিয়া দাখিল মাদ্রসার ১০ম শ্রেণি পড়ুয়া এক মেয়েকে বিয়ে করেন সোহেল। বিয়ের পরপরই স্ত্রীকে নিয়ে মাঝের চর বাড়িতে বসবাস শুরু করেন এবং ২ আগস্ট মাঝের চরে বৌভাত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে পাথরঘাটা উপজেলা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটির দুজন সদস্য মাঝের চর যাওয়ার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন পল্টু মেয়ের বয়স প্রমানের কাগজপত্র পাঠিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে ওই দুজন ফিরে যান।
কাকচিড়া ইউনিয়নের চেয়াম্যান আলাউদ্দীন পল্টু বিয়ের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মেয়ে ১০ শ্রেণিতে পড়লেও বিয়ের আইনগত বয়স হয়েছে। তাই আমি নিজেও বিয়েতে বিয়েতে উপস্থিত ছিলাম।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম রনি বলেন, সোহেল প্রথম বিয়ে করেছিল কমিটি ঘোষণার পরে। সম্প্রতি সে আবারো বিয়ে করেছে শুনেছি। সে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিষ্কৃয়। ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের দায় সংগঠন নেবেনা।
এ বিষয়ে ছাত্রদল নেতা সোহেলের সাবেক স্ত্রী মামলার বাদি বলেন, বিচ্ছেদের পর বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সোহেল আমার সাথে ভাড়া বাসায় রাত কাটিয়েছে। আমি তাকে বিশ্বাস করেছিলাম, কিন্ত সে প্রতারণা করেছে এবং আমাকে বিয়ে করবেনা এটা নিশ্চিত করতেই সে পুনরায় অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছে। এতে প্রমান হয় যে, সে পুনরায় মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা উদ্দেশ্যে আমার সাথে সম্পর্ক করেছে। আমি সোহেলের বিচার চাই।
এ বিষয়ে ছাত্রদল নেতা সোহেলের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে সোহেলে বাবা বাদল মিয়া বলেন- সোহেলের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগে মামলা করেছে সাবেক স্ত্রী। ধর্ষণ মামলা অথচ আদালতে মেডিকেল রিপোর্ট না দেয়ায় আদালত আমার ছেলেকে জামিন দিয়েছে। বাল্যবিয়ের কথা সত্য নয়, আমার বর্তমান পূত্রবধুর বয়স ১৮ বছরের বেশি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (ডিবি) জাহিদুল ইসলাম কবির বলেন, স্বাক্ষ্য প্রমানে আসামী সোহেলের বিরুদ্ধে বাদির আনিত অভিযোগের সত্যতা পেয়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছি।