চার দশকের সর্বোচ্চ উচ্চতায় মূল্যস্ফীতি। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পণ্য ও সেবার দাম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগ্রাসীভাবে সুদের হার বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মন্দা সৃষ্টি না করে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার লক্ষ্য ফেডারেল রিজার্ভের। যদিও বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, আগামী বছরের মাঝামাঝিতেই মন্দায় পড়বে মার্কিন অর্থনীতি। এমনকি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি মন্দার মধ্যে রয়েছে বলেও মনে করছেন কয়েকজন বিশ্লেষক। খবর ইয়াহু ফাইন্যান্স। সম্প্রতি প্রকাশিত ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর বিজনেস ইকোনমিক্সের (এনএবিই) সমীক্ষা অনুসারে, ৭২ শতাংশ অর্থনীতিবিদের আশঙ্কা মার্কিন অর্থনীতি ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে মন্দায় পড়তে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় ২০ শতাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, এরই মধ্যে অর্থনীতি মন্দার মধ্যে রয়েছে।
এনএবিইর গবেষকরা ১৯৮ জন অর্থনীতিবিদের ওপর সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছেন। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ফেডারেল রিজার্ভ মন্দা সৃষ্টি না করে আগামী দুই বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতিকে ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রায় নামিয়ে আনতে পারবে বলে বিশ্বাস করেন না অর্থনীতিবিদরা। প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রই এর মধ্যে মন্দার মধ্যে রয়েছে। এছাড়া ৪৭ শতাংশ বিশ্লেষক মনে করেন চলতি বছরের শেষ দিকে কিংবা ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে মন্দা শুরু হবে। এক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদরা একটি সমস্যা চিহ্নিত করেন যে অর্থনীতি এখনো সরকারের থেকে খুব বেশি উৎসাহ পাচ্ছে। অর্ধেকেরও বেশি উত্তরদাতা বলেছেন, বর্তমান রাজস্ব নীতি খুবই প্রণোদনামূলক। চলতি সপ্তাহের শেষে বৈশ্বিক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানরা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইয়োমিং অঙ্গরাজ্যের জ্যাকসন হোলে বার্ষিক সভায় জড়ো হতে যাচ্ছেন। সেখানে ফেডের প্রধান জেরোম পাওয়েলের মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে সর্বশেষ চিন্তাভাবনার আপডেট পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন বিনিয়োগকারী ও অর্থনীতিবিদরা। ওয়াল স্ট্রিটের অনেকেই আশা করছেন যে ফেড অর্থনৈতিক মন্দার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছে এবং মুদ্রানীতি নিয়ে কঠোর অবস্থান কিছুটা বদলাতে পারে। তবে বেশির ভাগ বিশ্লেষক মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগ্রাসী নীতি অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা করছে।
ন্যাটওয়েস্ট মার্কেটসের প্রধান মার্কিন অর্থনীতিবিদ একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়ানো নিয়েই বেশি মনোযোগী। কারণ গত বছর বিষয়টি নিয়ে তারা গোলমাল পাকিয়ে ফেলেছিল। তারা বুঝতে পেরেছে যে তারা এখন একটি জিনিস করতে পারে তা হলো মুদ্রানীতি কঠোর করা। আর এটিই মূল্যস্ফীতিকে কমিয়ে দেবে। সম্প্রতি সাবেক অর্থমন্ত্রী লরেন্স সামারসও জেরোম পাওয়েলকে বর্তমানের পথ বজায় রাখার অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানের পদক্ষেপগুলো এখনো যথেষ্ট কঠোর নয়। এ অবস্থায় আরো কঠোর নীতি নেয়া হলে অগত্যা অর্থনৈতিক ব্যথার কারণ হবে। আমি মনে করি, আর্থিক ব্যবস্থা এখনো খুব শিথিল এবং মূল্যস্ফীতি এখনো একটি বড় সমস্যা। আমি কোর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ধরনের অগ্রগতি দেখছি না। আমাদের সামনে এখনো উল্লেখযোগ্য মূল্যস্ফীতি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এক্ষেত্রে নীতি এখনো সীমাবদ্ধ নয়। আমরা যদি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, তবে এটিকে অবশ্যই সীমাবদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি এটির পরিণতিও আমাদের মেনে নিতে হবে। এ বার্তাটি সবার কাছে স্পষ্ট করা উচিত।