দিনাজপুর জেলার চলতি বছর গ্রীষ্মকালীন সময়ে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় কৃষকেরা ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন নাবি জাতীয় টমেটো চাষ সফলভাবে করতে সক্ষম হয়েছে।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক মো: নুরুজ্জামান রোববার দুপুর ২টায় তার কার্যালয়ে সাংবাদিকেদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, কৃষি বিভাগের উদ্যোগে এবারে জেলায় উন্নত নাবি টমেটো চাষ সফল ভাবে কৃষকেরা করতে সক্ষম হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছিল ১ হাজার হেক্টর জমিতে এই টমেটো চাষে। অনুকুল আবহাওয়া সুষ্ঠু পরিবেশ ও কৃষি বিভাগের অনুপ্ররণা থাকায় কৃষকেরা উৎসাহ পেয়ে লক্ষ্যমাত্রা অতিরিক্ত ৫৬০ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত টমেটো চাষ করে মোট ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ অর্জিত হয়েছে। বাজারে টমেটো চাহিদা থাকায় দিনাজপুর থেকে ঢাকা রাজধানীসহ সারা দেশে টমেটো পাইকারী ভাবে ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে সরবরাহ হচ্ছে প্রতিদিন।
সূত্রটি জানায়, গত কয়েক বছর ধরে জেলায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হচ্ছে। সাধারণত জানুয়ারি মাসের শেষে ও ফেব্রুয়ারির শুরুতে টমেটো চাষ করা হয়। ৬০-৭০ দিন পর টমেটো পাকতে শুরু করে। এবার সময় উপযোগী হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফসল উৎপাদন হয়েছে। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।
সরেজমিনে জেলা সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের গাবুড়া বাজারে দেখা গেছে, কৃষকেরা প্রতিদিন সকালে ভ্যানে করে খাঁচাভর্তি করে টমেটো নিয়ে বাজারে আসছেন। ভোর থেকেই চলছে বেচাকেনা। কৃষকরা দাম চাচ্ছেন ৬০০-৭০০ টাকা মণ। মানভেদে ৫৫০-৬০০ টাকা মণ কিনছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। অবশ্য বড় সাইজের বাছাইকৃত টমেটোর মণ ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। শুধু গাবুড়া বাজার নয়, সদরের মোস্তানবাজারেও প্রচুর টমেটো বেচাকেনা হয়। সকাল থেকে বাজারের দুই পাশের সড়কের কয়েক কিলোমিটারে টমেটোর খাঁচা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেগুলো কিনতে এসেছেন বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলে অটোরিকশার পেছনে বাসের ধাক্কা, নিহত ৪
দিনাজপুর সদর উপজেলা শেখপুরা গ্রামের আর্দশ কৃষক আব্দুর রাজ্জাক (৪৫) জানান, প্রতি বিঘায় টমেটো চাষ করতে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। সেখান থেকে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার বেশি টমেটো বিক্রি করা যায়। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় দেড়-দুই লাখ টাকা লাভ হয়। তবে গত কয়েক বছর লোকসান হয়েছে। এবার চিত্র ভিন্ন। মৌসুমের শুরুতেই দাম ভালো পাওয়ায় খুশি তারা। তবে দাম কমে যাওয়ার শঙ্কায় আছেন অনেক কৃষক। শেখপুরা ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার দুই বিঘা জমিতে নাবি টমেটো চাষ করেছেন। গত তিন বছর লোকসান হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এবার বাজারে দাম ভালো। প্রতি মণ ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। তবে শঙ্কায় আছি, শেষের দিকে যদি দাম কমে যায়, তাহলে লাভ বেশি হবে না। কারণ সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বেশি। বর্গা জমি বেশি দাম দিয়ে নিতে হয়। এই দাম থাকলে আমরা লাভবান হবো।’এবার আড়াই বিঘা জমিতে বাহুবলী জাতের টমেটো আবাদ করেছেন দিঘন গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর টমেটো চাষ করি। প্রতি বিঘায় চাষ করতে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। গত বছরগুলোতে দাম কম থাকায় তেমন লাভ হয়নি। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। ৬০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি করছি। আশা করছি, আগের বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবো।’
একই বাজারে টমেটো কিনতে আসা নারায়ণগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘টমেটোর এবার চাহিদা বেশি। নারায়গঞ্জে এসব টমেটো পাঠাচ্ছি। কিছুটা লাভ হচ্ছে। সামনের দিনে দাম কমলে একটু বেশি লাভ হবে।
জেলার সদরে বাহাদুর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী কমল রায় বলেন, ‘খুচরা বাজারে ২০-২৫ টাকা কেজিতে টমেটো বিক্রি করছি। তবে বাছাইকৃত বড় সাইজের টমেটোর কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি করছি। চাহিদা বেশ ভালো।’ বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর জন্য ক্যারেটে টমেটো সাজাচ্ছেন শ্রমিকরা।
দিনাজপুর কৃষি বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। গত বছর জেলায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছিল। এবার সে তুলনায় ৫৬০ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত টমেটো চাষ অর্জিত হয়েছে। গত ২ বছরে হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে ৪৫ দশমিক ১১ মেট্রিক টন। ‘জেলায় এ বছর ১ হাজার ৫৬০ হেক্টরের বেশি জমিতে নাবি টমেটো চাষ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা।
তিনি আরও বলেন, ‘এই টমেটো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলাগুলোতে যাচ্ছে। তবে কৃষকদের চাষের বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, একই জমিতে যেন বার বার টমেটো চাষ না হয়। আলু এবং টমেটো সমগোত্রীয় ফসল হওয়ায় আলুর জমিতে টমেটো চাষ করলে ফলন ভালো হয় না। ফলে অন্য জমিতে চাষ করতে হবে। সব মিলিয়ে তিনি এবার দিনাজপুরে গ্রীষ্মকালীন টমেটো বাম্পার ফলন অর্জিত হয়েছে বলে দাবী করেন।