টানা প্রায় এক মাস ধরে চলেছে তাপপ্রবাহ। বৃষ্টির দেখা ছিল না। তীব্র খরায় বোঁটা শুকিয়েছিল আমের গুঁটির। তবে রাজশাহী অঞ্চলে হঠাৎ শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়। এতে ঝরে পড়ে আম। ঝরে পড়া সেই আম এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র দুই টাকা কেজি দরে।
গত বুধবার বিকেলে থেমে থেমে হয় ঝড়-বৃষ্টি। এতে ভেঙে পড়ে গাছ-গাছালি। ঝরে পড়ে গাছের আম। শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধান, ভুট্টারও ক্ষতি হয়েছে। রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলা আমের জন্য বিখ্যাত। এ দুই উপজেলাতেই বাগান বেশি। জেলায় আম বাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চারঘাট ও বাঘায় রয়েছে ১২ হাজার ২১৮ হেক্টর, যা পুরো জেলার দুই-তৃতীয়াংশ।
চলতি মৌসুমে এ দুই উপজেলায় ৭৫-৮০ শতাংশ আম গাছে মুকুল এসেছিল। তবে বুধবারের ঝড়ে বেশিরভাগ বাগানের আম ঝরে পড়েছে। ঝরে পড়া আম গত দুইদিন ধরে রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আম কেনার ধুম পড়েছে ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতি কেজি আম কিনছেন মাত্র দুই টাকা কেজি দরে। তবে আকারে ছোটগুলো কিনছেন দেড় টাকা কেজি দরে।
আরও পড়ুন: সাত বিভাগে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস
চাষিরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতেই তীব্র খরায় আম নিয়ে বিপাকে পড়েন তারা। গাছের গোড়ায় রস না থাকায় বোঁটা শুকিয়ে গুঁটি ঝরে পড়া শুরু হয়। এর মাঝে আঘাত হানে কালবৈশাখী। সব মিলিয়ে কয়েকশ মণ আম ঝরে গেছে। বেশিরভাগই ল্যাংড়া, ফজলি ও হিমসাগর জাতের।
চারঘাটের রাওথা গ্রামের চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, আমার ছয় বিঘা বাগানে প্রায় পাঁচ মণ আম ঝরে গেছে। দুই টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।
একই এলাকার আম ব্যবসায়ী সেতাব আলী জানান, গ্রামে ঘুরে ঘুরে ঝরে পড়া আম ৮০ টাকা মণ দরে কিনেছেন। এসব আম প্রতি মণে ২০ থেকে ২৫ টাকা লাভে আড়তদারের কাছে বিক্রি করবেন। আড়তে এসব আমের চাহিদা না থাকায় দাম কম বলে জানান তিনি।
পরানপুর এলাকার আম চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, ঝরে পড়া আম আড়তে এনে দুই থেকে তিন টাকা কেজি বিক্রি করছি। এতে গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচই উঠবে না। এখানে সংরক্ষণাগার থাকলে এতটা লোকসান হতো না।
ভায়ালক্ষীপুর এলাকার আড়তদার মোজাম্মেল হক বলেন, ফড়িয়াদের কাছে থেকে ১০০ থেকে ১১০ টাকা মণ দরে ঝরে পড়া আম কিনছি। ঢাকায় পাঠাব। কিন্তু আমের চেয়ে পাঠানোর খরচই বেশি। ট্রাক ভাড়া ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার পর এই আম বিক্রি করে লাভ করা কঠিন।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, বিভিন্ন উপজেলায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে যেমন উপকার হয়েছে ফসলের, আবার কিছুটা ক্ষতিও হয়েছে। আমের ক্ষতি হয়েছে শিলাতে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। প্রতিবেদন তৈরি কতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে।