ঈদ উপলক্ষে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বর্ণিল সব আয়োজন নিয়ে হাজির হয়। টানা সাতদিন চলে ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। নতুন নাটকের পাশাপাশি প্রচার হয় সিনেমা। এবার ঈদের সাতদিন সাতটি নতুন সিনেমার উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে চ্যানেল আইতে। সিনেমাগুলো গত দু-এক বছরের মধ্যে মুক্তি পেয়েছে সিনেমা হলে। এখন পর্যন্ত এগুলো কোনো টেলিভিশনে প্রচার হয়নি। সেই অর্থে বলা যায়, ছোট পর্দার দর্শকদের জন্য নতুন সাত সিনেমা নিয়ে হাজির হচ্ছে চ্যানেল আই। ঈদের দিন থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে দেখানো হবে এগুলো।
নুরুল আলম আতিক পরিচালিত ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় গত বছর। ঈদের দিন দেখানো হবে আলোচিত সিনেমাটি। মুক্তির পর নূরুল আলম আতিক পরিচালিত এ সিনেমা দর্শক-সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয়। জিতে নেয় বেশকিছু পুরস্কারও।
লাল মোরগের ঝুঁটির প্রেক্ষাপট ১৯৭১ সাল। গল্পের পটভূমি সৈয়দপুর। যুদ্ধের তাগিদে সেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিমান অবতরণের প্রয়োজন পড়েছিল। সৈয়দপুরের বিমানবন্দর ও রানওয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে তুলে আনা বাঙালিদের আটকে রেখে জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করে নির্মাণ করা হয়েছিল। অনাহারে-অর্ধাহারে কেবল প্রাণের ভয়ে তারা পাকিস্তানি সেনাদের কবলে পড়ে দাস হতে বাধ্য হয়েছিল। বাংলাদেশের আনাচকানাচে সে সময় অবধারিতভাবে একই ধরনের অত্যাচার বিদ্যমান ছিল। ছবির কাহিনীকার নূরুল আলম আতিক সৈয়দপুর বিমানবন্দর নির্মাণের পেছনে বন্দি মানুষের আর্তনাদকে চলচ্চিত্রের মূল বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’তে অভিনয় করেছেন লায়লা হাসান, আহমেদ রুবেল, আশনা হাবিব ভাবনা, দিলরুবা দোয়েল, স্বাগতা, অশোক ব্যাপারী, আশীষ খন্দকার, জয়রাজ, শিল্পী সরকার অপু, ইলোরা গওহর, জ্যোতিকা জ্যোতি, শাহজাহান সম্রাট, জোবায়ের, দীপক সুমন প্রমুখ।
ঈদের দ্বিতীয় দিন দেখা যাবে তানিম রহমান পরিচালিত ‘ন ডরাই’। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সার্ফিং নিয়ে নির্মিত সিনেমা এটি। ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন দেবের বুনোহাঁস, পিংক ছবির চিত্রনাট্যকার কলকাতার শ্যামল সেনগুপ্ত। একজন নারী সার্ফারের জীবন থেকে উৎসাহিত হয়ে এ ছবির গল্প। গল্পটি গড়ে উঠেছে সত্য ঘটনা অবলম্বন করে। নারীর এগিয়ে যাওয়ার একটা বার্তাও আছে এ ছবিতে। সিনেমার প্রায় ৯০ শতাংশ দৃশ্যধারণ হয়েছে কক্সবাজারে। এতে অভিনয় করেছেন সুনেরাহ বিনতে কামাল, শরিফুল রাজ প্রমুখ।
তৃতীয় দিন দেখানো হবে ফাখরুল আরেফিন খানের ‘গণ্ডি’। এতে অভিনয় করেছেন ভারতের সব্যসাচী চক্রবর্তী ও বাংলাদেশের সুবর্ণা মুস্তাফা। ‘গণ্ডি’র গল্প দেশের সিনেমার গতানুগতিক গণ্ডির বাইরের। একজোড়া বয়স্ক মানুষের কথা বলেছে সিনেমাটি। যে মানুষ দুজন কোনো সীমারেখা নিয়ে জীবন যাপন করতে চায় না, জীবনে কোনো গণ্ডিতে আবদ্ধ হতে চায় না। সে অর্থে একটি অন্য রকম সিনেমা এটি। সব্যসাচী চক্রবর্তীর মতো একজন অভিনেতা যেখানে অভিনয় করেছেন, যেখানে তার এত এত ভক্ত-দর্শক রয়েছে সেখানে তার অভিনীত এবং একটি বয়স পেরোনো মানুষের কথা বলা গণ্ডি দর্শক ভালোবেসে গ্রহণ করছে এবং করবে। চতুর্থ দিন প্রচারিত হবে প্রসূন রহমানের ‘ঢাকা ড্রিম’। এতে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, শাহাদাৎ হোসেন, মনিরা মিঠু প্রমুখ। পঞ্চম দিন প্রচারিত হবে এইচআর হাবিব পরিচালিত ‘ছিটমহল’। অভিনয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া, মৌসুমী হামিদ, আরমান পারভেজ মুরাদ প্রমুখ। ষষ্ঠ দিন দেখানো হবে বহুল আলোচিত ও প্রশংসিত সিনেমা ‘চন্দ্রাবতী কথা’। এটি পরিচালনা করেছেন এন রাশেদ চৌধুরী, অভিনয় করেছেন দিলরুবা দোয়েল, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মিতা রহমান, গাজী রাকায়েত, আরমান পারভেজ মুরাদ, কাজী নওশাবা আহমেদ প্রমুখ। বাংলাদেশের প্রথম নারী কবি বলা হয় চন্দ্রাবতীকে। মলুয়া, দস্যু কেনারামের পালা ও রামায়ণ তার অন্যতম সৃষ্টি। তবে তার সৃষ্টির চেয়ে ঢের বেশি নাটকীয় এবং একই সঙ্গে বিয়োগান্তক তার নিজের জীবন। ষোড়শ শতাব্দীর অসম্ভব প্রতিভাবান ও সংগ্রামী এ নারীকে নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘চন্দ্রাবতী কথা’।
ছবির সংগীতায়োজন করেছেন কলকাতার লোকসংগীতশিল্পী সাত্যকি ব্যানার্জী। ছবির দৃশ্যধারণ হয়েছে চন্দ্রাবতীর জন্মস্থান কিশোরগঞ্জে। ছবিতে গ্রামের সাধারণ মানুষও অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে পালাকার বা বয়াতি এ রকম চরিত্রগুলোয় সেখানকার গ্রামের মানুষই অভিনয় করেছেন। সরকারি অনুদানের পাশাপাশি ছবিটি প্রযোজনা করেছে ম্যানগ্রোভ পিকচারস ও বেঙ্গল ক্রিয়েশনস। ঈদের সপ্তম দিন দেখা যাবে রিয়াজুল রিজুর পরিচালনায় ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’। এতে অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, সানজিদা তন্ময়, শতাব্দী ওয়াদু প্রমুখ।