মধ্যরাতে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে বসতঘরে
আগুন ধরিয়ে দিয়ে বরগুনার বেতাগী উপজেলার সড়িষামুড়ি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়াররম্যান ও
দুই নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফারুক আহমেদ শামীমেকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার এক বছর পূর্ণ হয়েছে
শুক্রবার (১১ আগস্ট)। হত্যাকাণ্ডের একবছর হয়ে গেলেও এখনও দাখিল হয়নি মামলার চার্জশিট।
ইতোমধ্যে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজা নামে এক আসামি জেল হাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা
গেছেন।
গত বছরের ১০ আগস্ট রাত দুইটার দিকে শামীমের
বসতঘরে বাইরে থেকে তালা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে শামীম, তাঁর স্ত্রী
ও দুই ছেলে দগ্ধ হন। আশংকাজনক অবস্থায় শামীমকে প্রথমে বরিশালে এরপর ঢাকার শেখ হাসিনা
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায়
পরদিন তার মৃত্যু হয়। শামীম ঐ ইউনিয়নের তিনবারের ইউপি সদস্য ও তৎকালীন প্যানেল চেয়ারম্যান
ছিলেন। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও আদালতে দাখিল হয়নি মামলার তদন্ত
প্রতিবেদন। আসামি গ্রেফতার, মামলার তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহে দৌড়ঝাঁপ করেই পুলিশের
কেটেছে ১ বছর।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এক বছর আগে চাঞ্চল্যকর
এ হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পর ১৩ আগস্ট নিহত শামীমের মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে বেতাগী
থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়। মামলার পর পুলিশ তদন্ত করে হত্যাকাণ্ডের
ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী চাঁন মিয়াসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। আসামিদের ভিতরে চাঁন মিয়াসহ
তিনজন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এদের মধ্যে মো. আব্দুর রাজ্জাক
ওরফে রাজা নামে এক আসামি জেল হাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
আরও পড়ুন>> বরগুনায় পানির নিচে রাস্তা, ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের চলাচল
মামলার এজাহারে শামীমের মা অভিযোগ করেন,
২০২২ সালের ১০ আগস্ট মধ্যরাতে সরিষামুড়ি ইউনিয়নের মায়ার হাটবাজার-সংলগ্ন এলাকায় শামীমের
বসতঘরে বাইরে থেকে তালা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে শামীমসহ তাঁর স্ত্রী
সূচি আক্তার, দুই ছেলে মাইনুল খান ও সামিউল খান দগ্ধ হন। তাদের বরিশাল শের-ই–বাংলা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শামীমের অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার শেখ হাসিনা
জাতীয় বার্ন ও প্লস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায়
একদিন পর তার মৃত্যু হয়। দুর্বৃত্তরা শামীমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশে ঘরে আগুন
ধরিয়ে দেয়।
নিহত শামীমের নির্বাচনী এলাকায় (দুই নম্বর
ওয়ার্ড) পরবর্তীতে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন তার মেজো বোন মোসা. নাসিমা বেগম। তিনি বলেন,
‘ভাইকে হারিয়ে
আমারা সবাই আসহায় হয়ে পরেছি। বৃদ্ধ মাকে নিয়ে আমি কোনমতে সংসার চালাচ্ছি। আমার ভাবীকে
এমপি মহোদয় একটি মাদ্রাসায় চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তবে তিনি (ভাবী) আমাদের কোন
খোঁজ খবর রাখে না। আমার ভাইয়ের হত্যা মামলার একজন আসামি বর্তমানে জামিনে রয়েছে। সে
মামলা থেকে তার নাম বাদ দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। অন্য একজন পলাতক রয়েছে। আমারা এর দ্রুত
বিচার চাই।’
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও
বেতাগী থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শুভ বাড়ৈ বলেন, ‘আসামি গ্রেফতার,
মামলার তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে চার্জশিট দাখিল করতে বিলম্ব হচ্ছে।
এই মাসের ভিতরে আদালতে চার্জশিট দাখিল করবো।’
বেতাগী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মামলার তদন্ত এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই
আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।’