বিশ্বজুড়ে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। এর মধ্যেই এক দশকে সবচেয়ে বড় পরিসরে গমের বৈশ্বিক ব্যবহার কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রেকর্ড মূল্যস্ফীতি ভোক্তা ও কোম্পানিগুলোকে শস্যটির ব্যবহার কমিয়ে আনতে বাধ্য করছে। শূন্যস্থানে জায়গা করে নিচ্ছে কম দামের অন্যান্য খাদ্যশস্য। এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে গমের আরো এক ধাপ মূল্যবৃদ্ধির মুখোমুখি হতে পারেন ভোক্তারা। আমদানিকারকরা বেশ কয়েক মাস আগেও তুলনামূলক সস্তা দামেই গম কিনতে পেরেছিলেন। কিন্তু মে মাসে এক দশকের শীর্ষে উঠে আসে কৃষিপণ্যটির বাজারদর। বর্তমানে সে রেকর্ডও ছাড়াতে বসেছে।
বিশ্লেষক, ব্যবসায়ী ও মিলাররা জানান, জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত গমের বৈশ্বিক ব্যবহার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫-৮ শতাংশ কমতে পারে। অর্থাৎ মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) দেয়া পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি গতিতে ব্যবহার কমবে। সংস্থাটি ১ শতাংশ হারে ব্যবহার কমার পূর্বাভাস দিয়েছিল।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) অর্থনীতিবিদ এরিন কোলিয়ের বলেন, চীন ও ইউরোপের বাজারে পশুখাদ্য হিসেবে গমের চাহিদা লক্ষণীয় মাত্রায় কমতে যাচ্ছে। এছাড়া বিশ্বজুড়ে প্রধান আমদানিকারক দেশগুলোয় মানুষের খাদ্য হিসেবেও গমের চাহিদা দুর্বল হয়ে আসছে। ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে এশিয়া ও আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলোয় খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এসব অঞ্চলের বড়সংখ্যক দেশ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে সক্ষম নয়।
বিশ্লেষকদের অভিমত, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর থেকেই লাখো মানুষ খাদ্যপণ্যের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দানা বাঁধছে। তার ওপর বৈরী আবহাওয়ার কারণে শীর্ষ রফতানিকারক দেশগুলোয় খাদ্যশস্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে এসব পণ্যের দাম বেড়ে অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত বাজার আদর্শ গমের ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য ৪০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে মার্চে শস্যটির দাম রেকর্ড সর্বোচ্চে ওঠে। সম্প্রতি দাম কিছুটা কমলেও স্পট মার্কেটে ঊর্ধ্বমুখীই রয়েছে।
তথ্য বলছে, কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর থেকে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে রফতানীকৃত গমের দাম সব ধরনের ব্যয় ও চার্জসহ টনপ্রতি ৪০০-৪১০ ডলার ধরা হচ্ছে। কয়েক মাস আগে দাম টনপ্রতি ৫০০ ডলারে উঠেছিল। সে হিসেবে দাম কমলেও তা গত বছরের গড় দামের তুলনায় অনেক উপরে অবস্থান করছে। ওই সময় প্রতি টন গমের গড় রফতানি মূল্য ছিল ৩০০ ডলার।
সিডনিভিত্তিক ব্রোকারেজ ইকন কমোডিটিজের ওলে হো বলেন, গম সরবরাহ সংকটের তীব্রতা এখনো কাটেনি। কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চল থেকে নতুন করে কতটুকু সরবরাহ আসবে সে বিষয়েও নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। এছাড়া অন্য রফতানিকারক দেশগুলোয় আবহাওয়াজনিত প্রতিবন্ধকতা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। এফএওর অর্থনীতিবিদ এরিন কোলিয়ের বলেন, ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, ইথিওপিয়া, আফগানিস্তান, শীলংকাসহ অনেক দেশ বর্তমানে গমের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।
এদিকে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে গৃহস্থালি পরিবারগুলো বাজেট মেলাতে পারছে না। সংকটের প্রভাবে চীন ও মালয়েশিয়া থেকে ইতালি, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আর্জেন্টিনা—দেশে দেশে সাধারণ মানুষের মাঝে বিক্ষোভ দানা বেঁধেছে।