আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, আমার সামনে যারা বসে আছো তারা হাজার বছরের বাঙ্গালী জাতির পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বের হয়ে আসে রক্তের সাক্ষ্য বহন করছো।
তিনি বলেন, আত্মত্যাগ কিভাবে করতে হয় এটা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার দেখিয়ে দিয়েছে। এই জাতির জন্য পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হারাবার পরও ৪০-৪২ বছর ধরে চেষ্টা করে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অসংখ্যবার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি আজকে দেশকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। জাতির পিতা যেমন ৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে নিয়ে এসেছিলেন 'দিন বদলের সনদ'। জাতির জন্য তিনি একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেন যা এর আগে আমাদের ছিলো না। শুধু লক্ষ্য নির্ধারণ নয়, সময় বেধে দিলেন এবং ২০২১ সালে মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশের অবস্থানে নিয়ে এসেছেন তিনি। আমাদের মাধ্যমেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠিত যার সুবিধা ভোগ করছে, অপব্যবহার করছে আমাদের বিরোধী জোটগুলো।
বর্তমান প্রজন্মকে ত্যাগের মনন নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে কবির বিন আনোয়ার বলেন, এটা মাত্র শুরু। নির্বাচনের আগে এই প্রশিক্ষকেরা জেলা এবং উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। নির্বাচনের পর এটি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাবো আমরা। আগামী ৫ বছর এই কার্যক্রম চলবে যার পথপ্রদর্শক হবে তোমরা। তাই এটা মনে করার কোন কারণ নেই, এটা ছোট বিষয়। আমি যদি বেঁচে থাকি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে এই দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দেন তাহলে আগামী ৫ বছর এটি নিয়ে কাজ করে যাবো। যারা রাস্তা প্রথম তৈরি করে তাদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু তোমরা যেই রাস্তা তৈরি করে দিয়ে যাবে, সেই পথেই হাঁটবে পরবর্তী প্রজন্ম। তোমাদের দিয়েই এই যাত্রার শুরু।
ঢাকা ১৭ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন প্রফেসর মোহাম্মাদ আলী আরাফাত বলেন, রিয়েল ওয়ার্ল্ডের পাশাপাশি যখন ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড গড়ে ওঠা শুরু করলো তখন আমাদের যুদ্ধ সেখানে অনেকটা শিফট হয়ে গেছে। সেখানে আমাদের বিরোধী পক্ষ গুলো এতটাই সংগঠিতভাবে গুজব ও মিথ্যাচার প্রচার করা শুরু করেছে যে সত্যটা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েই অনেকটা বেগ পেতে হয়। আমি মনে করি এই কর্মশালার মাধ্যমে বাস্তবিক দুনিয়াতে আমরা মাঠে-ঘাটে ময়দানে যেভাবে যুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে, সাইবার দুনিয়াতেও আমরা সেভাবেই যুদ্ধ চালিয়ে যাবো আরও সুসংহত ও প্রশিক্ষিত হয়ে।
তিনি বলেন, আসলে আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন, সরকার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য খাত, দুর্যোগ সবকিছু মোকাবিলা করে সাইবার দুনিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এই শক্তির গুজব মোকাবিলা করে। আর একটি গবেষণা এসেছে গুজব সত্য তথ্য থেকে ৬ গুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই আমাদের দশগুণ বেশি পরিশ্রম করতে হবে গুজব মোকাবিলায়।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ অন্য সব দলের থেকে এগিয়ে আছে চিন্তাভাবনায় ও মননশীলতায়। আওয়ামী লীগ একমাত্র দল যাদের থিংক ট্যাঙ্ক আছে। আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সহ উন্নত বিশ্বের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোতে থিংক ট্যাংক থাকে। আওয়ামী লীগের একটি অফিশিয়াল থিংক ট্যাংক আছে, সিআরআই। এই যে উদ্যোগ গুলো সময়ের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে গ্রহণ করেছে। সাইবার ওয়ার্ল্ডে যে যুদ্ধ। এখানে যে প্রতিযোগিতা মিথ্যাচার অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই। সেখানে আওয়ামী লীগ আধুনিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। কর্মীদের প্রস্তুত করে আওয়ামী লীগ সেইখানে লড়াইয়ে থাকবে। কারণ আওয়ামী লীগ যদি এই যুদ্ধে বিজয়ী হয় সত্য বিজয়ী হবে। আওয়ামী লীগ যদি বিজয়ী হয় মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ী হবে। আওয়ামী লীগ যদি হেরে যায় তাহলে বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ থাকবে না, আফগানিস্তান-পাকিস্তান হবে।
আওয়ামী লীগ ওয়েব টিমের সমন্বয়ক ও সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) কো-অর্ডিনেটর তন্ময় আহমেদ বলেন, প্রশিক্ষকদের এই কর্মশালায় আমরা শেখাবো, প্রশিক্ষকেরা যখন সারা দেশে যাবেন তখন কোন কোন বিষয়ে শেখাবেন, এর মাধ্যমে আমরা কোন বিষয়গুলো অর্জন করতে চাচ্ছি। যেটা আরাফাত ভাই এবং কবির বিন আনোয়ার ভাই বলেছেন, আমাদের সুবিধা হলো, আমরা সত্যটা বলতে চাই। মিথ্যা ও গুজবকে প্রতিহত করতে চাই। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নের জন্য দেশের অর্জন এবং উন্নয়ন কার্যক্রমগুলো সকলের সামনে তুলে ধরতে চাই আমরা। সঠিক তথ্য, নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় কিভাবে সকলের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়, এ বিষয়ে আমরা জানাবো এখানে থাকা প্রশিক্ষকদের। তারা জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন। এর পাশাপাশি ঐ এলাকার সমস্যাগুলো নিয়ে একটা ফিডব্যাক তারা নিয়ে আসবেন, যাতে আমারা সেগুলো সমাধান করতে পারি।
২২ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই প্রশিক্ষকদের কর্মশালা 'দ্য ড্রিল' শেষ হবে ২৩ সেপ্টেম্বর। এই দুইদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিবিধ ব্যবহারের পাশাপাশি খুঁটিনাটি আরও বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।