ঘুষের মাধ্যমে
নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ এনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করলেন
বেলাব উপজেলার রাজারবাগ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহিনুর আক্তার
হেপি ও অফিস সহকারী রুবেল মিয়া। তবে পদত্যাগ করা দুই শিক্ষকের অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী
ছাত্র আন্দোলনের কয়েকশ নেতা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোড়পূবর্ক
পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে নেন।
এসময় পক্ষ বিপক্ষের লোকদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার
ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ১৫ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষার্থী ও জনতা। এর মধ্যে
গুরুতর আহত হয়ে বেলাব পাইলট মর্ডান সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর অনন্ত নামে
এক শিক্ষার্থীকে বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার সকালে
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসির কিছু অংশ রাজারবাগ
বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহিনুর আক্তার হেপি বেগমের পদত্যাগের
দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে শিক্ষকদের রুমে ঢুকে জোড়পূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর
নেন বলে অভিযোগ করেন সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহিনুর আক্তার ও অফিস সহকারী রুবেল মিয়া।
আন্দোলনকারীদের
অভিযোগ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহিনুর আক্তার হেপি বেগম বিগত আওয়ামী লীগ
সরকারের আমলে ক্ষমতার দাপটে নিয়োগ পান। এসময় তারা বলেন, উক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষকের
বিএড সার্টিফিকেটও নাকি জাল।
এদিকে আন্দোলন
চলাকালীন সময়ে এঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে রাজারবাগসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থী
ও সাধারণ মানুষ ছুটে আসে বিদ্যালয়ে। ছুটে আসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নরসিংদী জেলার
স্বেচ্ছাসেবক কর্মী জেসমিন আক্তার আন্দোলনকারীদের সমর্থন দিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের
সাথে কথা বলার জন্য বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের নিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন। এসময় সহকারী
প্রধান শিক্ষক শাহিনুর আক্তার হেপির ছেলে সাদির মোল্লা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবককমী
জেসমিন আক্তারের উপরে হামলা করে। হামলায় সাদির মোল্লাও আহত হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা আরো
উত্তেজিত হয়ে যায়। এসময় শিক্ষার্থীরা সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহিনুর আক্তার হেপি ও অফিস
সহকারী রুবেল মিয়ার পদত্যাগের দাবিতে ভূয়া ভূয়া বলে স্লোগান দিতে থাকে।
এরই মধ্যে পার্শ্ববতী
বেলাব পাইলট মর্ডান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী রাজারবাগ স্কুলে
আসে। এসময় রাজারবাগ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও বেলাব পাইলট মর্ডান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য যে রাজারবাগ
বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহিনুর আক্তার হেপির স্বামী মোঃ নাজমুল
হোসেন বেলাব পাইলট মর্ডান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষককতা করেন।
বেলাব পাইলট
মর্ডান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তারা খবর পান তাদের শিক্ষক
নাজমুল হোসেনকে নাকি রাজারবাগ উচ্চ বিদালয়ে আটক করেছে। এখবর শুনে তারা রাজারবাগ আসলে
এলাকাবাসি ও রাজারবাগ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
ও সংঘর্ষ বাঁধে।
ধাওয়া পাল্টা
ধাওয়া ও সংঘর্ষে এসময় উভয় পক্ষের প্রায় ১৫ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসি আহত হয়। এর মধ্যে
বেলাব পাইলট মর্ডান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর অনন্ত নামে এক শিক্ষার্থীর
মাথা ফেটে যায়। তাকে বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পরে আন্দোলনকারী
শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায় বেলাব পাইলট মর্ডান সরকারি
উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের
সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহিনুর আক্তার হেপি বলেন,তারা আগেই আমার বিরুদ্ধে বেলাব উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেয়। ইউএনও স্যার বলছে চলতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে
তদন্তপূর্বক ঘটনাটি দেখবে জানান। কিন্তু তার আগে আজ রোববার স্কুলচলাকালীন সময়ে তারা
স্কুলে এসে আমাকে মারধর করে। এসময় আমার ছেলে আমাকে বাঁচাতে আসলে তাকেও মারধর করে তারা।
পরে জোড়পূর্বক আমার কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেয়।
অফিস সহকারী
মোঃ রুবেল মিয়া বলেন, আমি বৈধভাবে পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পাই। আজকে বহিরাগত ছাত্ররা বিদ্যালয়ে
ঢুকে আমাকে হুমকী দিয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেয়। যা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়েছে।
আমলাব ইউনিয়নে
সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘটনার সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে
ফোন করে বলেন বিদ্যালয়ে আসার জন্য। এসময় এসে দেখি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়
প্রাঙ্গনে। তারা আমার কাছে জানান সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহিনুর আক্তার হেপির নিয়োগে
দুর্নীতি আছে অফিস সহকারী রুবেল মিয়া নিয়োগে ১১ লক্ষ টাকা সাবেক সভাপতির মাধ্যমে বিনিময়
হয়ছে। এসব প্রমাণের ডকুমেন্ট নাকি তাদের সংগ্রহে আছে। এসব কারণে ছাত্ররা তাদের পদত্যাগ
দাবি করছে । এসময় অফিসে কথা বলার সময় বেলাব পাইলট মর্ডান উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই তিন শতাধিক
শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অর্তকিতভাবে হামলা করে। খবর শুনে বেলাব থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে
আসে। শুনেছি দুইজন শিক্ষকই স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। এখন পরিবেশ শান্ত
আছে।
বৈষম্যবিরোধী
ছাত্র আন্দোলন জেলা শাখার স্বেচ্ছাসেবক কর্মী জেসমিন আক্তার বলেন,আমরা বিদ্যালয়ের এই
দুইজন শিক্ষকের নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আমরা
গেছি। উনি আমাদের সময় দিয়েছিলেন। রবিবার দিন তিনি আসার কথা ছিল। তিনি আসেননি। তাই আমরা
আজকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলেনের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়ে আসি শিক্ষকদের সাথে কথা
বলার জন্য। এসময় শিক্ষক শাহিনুর আক্তার হেপির ছেলে সাদির মোল্লা আমার উপর হামলা করে।
পরে আমরা শিক্ষকদের সাথে বসি। এসময় শাহিনুর আক্তার হেপির স্বামী বেলাব পাইলট মর্ডান
সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাজমুল হোসেনের নের্তৃত্বে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা
এসে গন্ডগোল সৃষ্টি করে। পরে উনারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।
বিদ্যালয়ের
প্রধান শিক্ষক নজরুল হোসেন বলেন, আমি বিদালয়ে এসে দেখি ছাত্ররা বলছে সহকারী প্রধান
শিক্ষক ও অফিস সহকারীকে পদত্যাগ করতে হবে। ফলে আজকের ঘটনার সমাধানের জন্য আমরা এলাকাবাসি
নিয়ে বিদ্যালয়ে বসেছিলাম। এসময় হঠাৎ করেই বেলাব পাইলট মর্ডান সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়
থেকে কিছু শিক্ষার্থী এসে গন্ডগোল শুরু করে। এতে কয়েকজন আহত হয়। পরে আমি উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা স্যার ও বেলাব থানায় খবর দেই। পরে থানা পুলিশ চলে যাবার পর বৈষম্যবিরোধী
ছাত্ররা তাদেরা পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নেয়।
বেলাব থানার
ওসি(তদন্ত) মীর মাহবুবুর রহমান বলেন, গন্ডগোলের খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবেশ
শান্ত করি। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করেনি।
বেলাব উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল করিম বলেন, আমি মিটিং এ থাকায় ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি।
আগামীকাল স্কুলে গিয়ে বিস্তারিত নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ নিব।