
রাজধানী ও আশপাশের জেলায় জুমার নামাজ ও জানাজায় অংশ নিতো সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্যরা। তাদের টার্গেট থাকতো মুসল্লিদের পকেটের দিকে। সময় বুঝে পকেট থেকে মোবাইল ও টাকা হাতিয়ে চম্পট দিতো চক্রটি। এমনই একটি চোর চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) সদস্যরা।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, তারা হলেন- মো. বাহাউদ্দিন হোসেন মিজি ওরফে বাহার, রমজান আলী, মো. হামিম আহমেদ ওরফে হামিম, মো. আতিকুল ইসলাম, মো. পারভেজ হাসান, মো. মাসুদুর রহমান ওরফে মাসুদ, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. ফয়সাল আহমেদ রনি ও মো. মিল্লাত হোসেন। চক্রটি পায়জামা, পাঞ্জাবি ও টুপি পরে জুমার নামাজ ও জানাজা থেকে মোবাইল ফোন চুরি করতো।
গত বুধবার রাতে রাজধানীর চাঁনখারপুল, জুরাইনের বিক্রমপুর প্লাজা ও বুড়িগঙ্গা সেতু মার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্কসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল রাজধানীর বারিধারায় এটিইউ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির পুলিশ সুপার (অপারেশনস) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন।
গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ৩টি ল্যাপটপ, একটি মনিটর, ৭টি মোবাইল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ সামগ্রী এবং মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনের কাজে ব্যবহৃত ১৬টি ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। চক্রটি পায়জামা, পাঞ্জাবি ও টুপি পরে জানাজা ও জুমার নামাজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি করতো। গতকাল রাজধানীর বারিধারায় এটিইউ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির পুলিশ সুপার (অপারেশনস) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা, ওয়াজ মাহফিল এবং জানাজাসহ জনসমাগমস্থল থেকে মোবাইল ফোন চুরি করে। এরপর চোরাই মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে কেনাবেচা করে। চক্রটির সদস্যরা অনলাইনের মাধ্যমে ঢাকা ও এর আশপাশে কোনো জানাজা আছে কিনা তা খুঁজতে থাকে। কোনো জানাজার সন্ধান পাওয়ার পর তারা খোঁজ-খবর নিতে থাকে সেখানে কেমন মানুষের সমাগম হতে পারে। এ কাজের সাংকেতিক নাম দেয় ‘বডিকাজ’। ‘বডিকাজ’ বলতে তারা বুঝায় লাশের কাজ, মানে জানাজার কাজ। জানাজার স্থান নির্ধারণ হওয়ার পর তারা সেখানে পায়জামা, পাঞ্জাবি ও টুপি পরে যায়। সেখানে গিয়ে তারা গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়।
প্রতিটি গ্রুপে তিনজন করে সদস্য থাকে। এই গ্রুপের সদস্যরা জানাজার ভিড়ের মধ্যে কৌশলে একজনের পকেটে থেকে মোবাইল চুরি করে গ্রুপের দ্বিতীয় সদস্যকে দেয়। দ্বিতীয় সদস্য মোবাইলটি আবার তৃতীয় আরেকজনকে দেয়। মোবাইল হাতে পাওয়ার পর তৃতীয় ব্যক্তি জানাজার স্থান ছেড়ে চলে যায়। পকেট থেকে মোবাইলটি যে চুরি করে তাকে বলা হয় মহাজন। জানাজা ছাড়াও চক্রটির টার্গেটে থাকত শুক্রবারের জুমার নামাজ। শুক্রবার যেসব মসজিদে বেশি মানুষ জুমার নামাজ আদায় করতে আসেন, সেসব মসজিদে চক্রটির সদস্যরা তিনজনের গ্রুপ করে অবস্থান নিত। জুমার নামাজের কাতারে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে একই কায়দায় মোবাইল চুরি করে নিয়ে যায় তারা। মসজিদের এই চুরিকে তারা ‘মসজিদ কাম’ বলে থাকে। জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে চক্রটির সব থেকে বেশি গ্রুপ সক্রিয় থাকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে।
এটিইউ কর্মকর্তা ছানোয়ার আরও বলেন, চোরাই মোবাইল গ্রুপগুলোতে থেকে সংগ্রহ করত চক্রের সদস্য বাহার। তার একজন মোটরসাইকেল চালক আছে। যে বাহারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রুপগুলো থেকে মোবাইল সংগ্রহ করে। বাহার পরে মোবাইলগুলো গ্রেফতার মাসুদের কাছে পাঠিয়ে দিত। গ্রেফতার মাসুদের কাজ হচ্ছে চোরাই মোবাইলগুলো নির্দিষ্ট দোকানে পৌঁছে দেওয়া। তদন্তে এমন তিনটি দোকানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। দোকানগুলো হলো, জুরাইনের বিক্রমপুর প্লাজার এসআই টেলিকম যার মালিক গ্রেফতার সাইফুল, জুরাইনের সেতু মার্কেটের ফয়সাল টেলিকম যার মালিক গ্রেফতার ফয়সাল ও যমুনা ফিউচার পার্কের চতুর্থ তলার একটি দোকান যার মালিক গ্রেফতার মিল্লাত। এ দোকানগুলোতে চলত টেকনিক্যাল ও মোবাইল বিক্রির কাজ। প্রথমে মোবাইলগুলোর আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা হতো। তারপর মোবাইলগুলোর প্যাটার্ন লক খোলা হতো। সর্বশেষ মোবাইল থেকে ল্যাপটপের মাধ্যমে ফ্লাশ দিয়ে বিক্রি করা হতো।