শ্রীপুর (গাজীপুর)প্রতিনিধি:
শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়ে নয়, ফসলের খেতে সবুজ-বেগুনি ধানের চারা লাগিয়ে জাতীয় পতাকার আদলে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জাতীয় পতাকার রূপ।
আর এই কাজটি করেছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেকাসাহারা গ্রামের আবদুল আউয়ালের ছেলে কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এনামুল হক। গ্রামীণ পিচঢালা সড়কের দুপাশের যে দিকেই চোখ যায় শুধুই সবুজের সমারোহ। টেংরা বাজার পার হলেই মাওনা-বরমী আঞ্চলিক সড়ক ঘেঁষা ধানের জমিতে চমৎকার ভাবে জিঙ্ক সমৃদ্ধ বেগুনি ধান আর সবুজ ধান মিশ্রণে জাতীয় পতাকার এক অনন্য শস্যচিত্র কর্ম চোখে পড়ে ।
জাতীয় পতাকার চতুর্ভুজের বেশিরভাগ জুড়ে লাগিয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু’ জাতের সবুজ রঙের ধান। মাঝখানে বৃত্ত নির্মাণ করেছেন জিঙ্ক সমৃদ্ধ বেগুনি রংয়ের ধান গাছ দিয়ে। পতাকার খুঁটি ব্যবহার করেছেন সবুজ রঙের ধান গাছ লাগিয়ে। এরপর পতাকার অংশটুকু আকর্ষণীয় ভাবে দৃশ্যমান রাখতে পুরো জমিতে রোপণ করেছেন বেগুনি ধান। পতাকার মাঝে বেগুনি ধানে বৃত্ত এঁকেছেন। সড়ক থেকে বিস্তীর্ণ মাঠে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যাওয়া সবুজ ভূমিতে একটি উড়ন্ত জাতীয় পতাকা দেখে।
আবদুল আউয়ালের ছেলে কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এনামুল হক নিজের ফসলের মাঠে সবুজ ও বেগুনি রঙের ধানের চারা দিয়ে তৈরি করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা প্রতিকৃতি। গত বছর একই জমিতে শস্যচিত্রে ‘মা’ শব্দটি ফুটিয়ে তুলে তিনি আলোচনায় আসেন।
আবহমানকাল থেকে সবুজ রঙের ধান গাছই দেখে এসেছে বাংলার কৃষক, কিন্তু সবুজ ও বেগুনি রঙের সংমিশ্রণে ব্যতিক্রমী এ ধান চাষ দেখতে ভিড় করছে মানুষ। প্রতিদিনই দূর-দুরান্ত থেকে ধানের সৌন্দর্য দেখতে আসছেন তারা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্ত মাঠজুড়ে সবুজ আর সবুজ। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় সবুজের মাঠে মাঝখানে বেগুনি রঙ। সবুজ ধানের বেষ্টুনির কাছে গেলে মনে হয় বেগুনি রঙের জায়গাটুকু কোনো আগাছা বা বালাই আক্রান্ত ধান। কিন্তু না, এটি এমন একটি ধানের জাত, যার পাতা ও কান্ডের রং বেগুনি। যেভাবে তৈরি করেছে দেখতে অনেকটাই জাতীয় পতাকার আদলে।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় ধানের জমিতে পতাকার আদলে শস্যচিত্র আঁকা কৃষক এনামুল হকের সাথে তিনি বলেন, ২০২১ সালে প্রথম তার এক বিঘা জমিতে জিঙ্ক বেগুনি ধান রোপণ করেন। সে বছর দারুণ ফলন হয় বেগুনি ধানের। এটা দেখে তার ব্যতিক্রমী চিন্তা আসে মাথায়। এরপর তিনি মায়ের প্রতি ভালোবাসা রেখেই জমিতে নান্দনিক ভাবে ফুঁটিয়ে তুলেন ‘মা’ লেখা এক অনন্য শস্য চিত্রকর্ম। এক বিঘা জমিতে বাংলায় ‘মা’ শব্দটিকে শস্যচিত্রে রূপ দেন তিনি চমৎকার ভাবে। সে সময় আগত দর্শনার্থীরা সেই মা লেখা শস্যচিত্র দেখে দারুণ প্রশংসা করেছিলেন। সেই উৎসাহ থেকে এ বছর জাতীয় পতাকা শস্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন তিনি।
এনামুল হক বলেন, প্রথমে সুতা দিয়ে মেপে জমিতে জাতীয় পতাকার গঠন তৈরি করেন। এরপর সেই অনুযায়ী রোপণ করেন দুই জাতের ধানের চারা। দেশ ও পতাকার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতেই তার এই আয়োজন বলে জানালেন তিনি। পথচারী আলমগীর হোসেন বলেন সবুজ-বেগুনিতে এতো সুন্দর ধানের জমি আর দেখেনি। লোকমুখে শুনে জমি দেখতে এখানে আসা। যারা এই জাতীয় ধান আবাদ করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। এ জাতীয় ধান আবাদ করতে এখন আমরাও শখ হয়েছে। জমি দেখে সাথে ছবিও তোলা হয়েছে বলে জানায়।
পথচারী মো: ইব্রাহিম মিয়া বলেন আমাদের জাতীয় পতাকার মতো দেখতে ধান ক্ষেতটি। যদিও জাতীয় পতাকার মতো কালার হয়নি। তারপরও অনেকটাই জাতীয় পতাকার মতো দেখতে খুবই ভালো লাগছে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, ‘একজন কৃষক দেশের প্রতি ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে তার জমিতে জাতীয় পতাকার আদলে শস্যচিত্র ফুটিয়ে তুলে সত্যিই প্রশংসার কাজ করেছেন। ইতিপূর্বেও তিনি শস্যচিত্র নির্মাণ করে প্রশংসিত হয়েছিলেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল বাতের সরকার জানান, এনামুল পরিশ্রমী কৃষক। দেশের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে এ কাজ কোনো ভাবেই করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ধানক্ষেতটি দেখলে মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়।