সুন্দরবন ঘেষা কয়রা উপজেলার চারিদিকে নদ-নদীতে
অথৈ পানি থাকার পরেও বিশুদ্ধ পানির তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে এই এলাকার জনসাধারণ
বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে অনেকেই অতিমাত্রায় লবণ ও কাঁদাযুক্ত পুকুরের পানি পান
করে আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত জটিল রোগে।
লোনা পানিতে উপকূলের মানুষের জীবনটাই যেন
লোনা হয়ে গেছে। পানি যখন সুপেয় না হয়, তখন তা হয়ে ওঠে নানা অসুখ, নানাবিধ স্বাস্থ্য
সমস্যাসহ মরণেরও কারণ। এখানে শুধু সুপেয় পানির অভাব এমনটাই নয়, পানিশূন্যতা, লবণাক্তসহ
নানা চর্মরোগসহ দূর থেকে পানি আনায় শারীরিক বিভিন্ন ঝুঁকিও আছে, বিশেষ করে নারীদের
ক্ষেত্রে।
কয়রা উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়েকটি গ্রাম
ঘুরে দেখা যায়, এসব জনপদের চারদিকে পানি থাকলেও তা লবণাক্ত। বেশির ভাগ নারী লবণ পানিতে
গোসল ও গৃহস্থালির কাজ সারছেন। এক কলসি পানি সংগ্রহের জন্যে নারী-পুরুষ আর শিশুদের
ছুটতে হয় সেই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত।
মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের তেঁতুলতলা গ্রামের
বাসিন্দা সেলিম হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় কোনো টিউবওয়েল বসানো যায় না। তারপরও যা আছে
তা দিয়ে লবণ পানি ওঠে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি পানিও ধরে রাখা যায় না, পানি নষ্ট হয়ে যায়।
এসব পানি খেলে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে
পরে।
২০২১ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি)
এক জরিপে দেশের উপকূলীয় মানুষের নিরাপদ খাওয়ার পানির দুর্দশার কথা তুলে ধরা হয়। জরিপে
দেখা যায়, উপকূলীয় এলাকার ৭৩ শতাংশ মানুষকে অনিরাপদ লবণাক্ত পানি পান করতে হয়।
কয়রা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী
ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘উপজেলার অধিকাংশ মানুষ বৃষ্টির পানির ওপর
নির্ভর করে। চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুকুর ও জলাধার শুকিয়ে
গেছে। এতে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ নলকূপে পানি কম উঠছে। ফলে সংকট বেড়েছে।’
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রেজাউল
করিম বলেন, ‘বাধ্য হয়ে উপকূলের মানুষ পুকুরের পানি পান করে এ কারণে
ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটের পীড়া ও চর্মরোগ নিয়ে অনেকে হাসপাতালে আসে। লবণাক্ত পানি পানের
মাধ্যমে অতিরিক্ত সোডিয়াম ক্লোরাইড গ্রহণ করছে উপকূলের মানুষ, যা তাদের মধ্যে উচ্চ
রক্তচাপসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে। লবণাক্ত পানি পানের কারণে গর্ভবতী
নারীদের কিডনি ও যকৃৎ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
খুলনার কয়রা-পাইকগাছার সংসদ সদস্য রশীদুজ্জামান
বলেন, ‘বছরের পর বছর
লোনাপানি আটকে চিংড়ি চাষের কারণে মিঠাপানির পুকুরগুলোর অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।’
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড
এনভায়রনমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ মোতাসিম বিল্লাহ মনে করেন, উপকূলের সুপেয় পানির
চাহিদা মেটাতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও অপরিকল্পিত
আর দায়সারা কাজে দীর্ঘমেয়াদি সুফল মিলছে না।