সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন ওষুধের দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ‘ফিজিশিয়ান স্যাম্পল’ ওষুধ। উৎপাদনকারী কোম্পানির পক্ষ থেকে এসব ওষুধ বাজারে ছাড়ার আগে ট্রায়ালের উদ্দেশ্যে চিকিৎসকদের দেওয়া হয়। এসব স্যাম্পল ওষুধের ক্ষেত্রে সরকারি রাজস্ব দিতে হয় না।
বিনামূল্যে দেওয়া এসব ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। কিন্তু অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ ধরনের ওষুধ বিক্রি করছেন। দীর্ঘ দিন ধরেই স্যাম্পল ওষুধের কেনাবেচা চলে আসছে। এতে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে ট্রায়ালে থাকা এসব ওষুধ সেবনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতকানিয়া উপজেলার অসংখ্য ওষুধের দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে স্যাম্পল ওষুধ। এসব ওষুধের মোড়কের (প্যাকেট) গায়ে লেখা ‘ফিজিশিয়ান স্যাম্পল, বিক্রি নিষিদ্ধ’। তবে দোকানিরা এগুলো বিক্রির জন্য কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। ওষুধের মোড়ক পাল্টে বিক্রয়যোগ্য ওষুধের মোড়কে রেখে এসব ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে।
ফার্মেসি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে চুক্তি থেকে চিকিৎসকরা প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ স্যাম্পল পান। চিকিৎসকরা টাকার বিনিময়ে এসব ওষুধ ফার্মেসিতে বিক্রি করে দেন। সরাসরি চিকিৎসকদের মাধ্যমে বা দালাল চক্রের মাধ্যমে ওষুধগুলো খোলা বাজারে আসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফার্মেসি মালিক জানান, চিকিৎসকরা ফোন করে তাদের বাসায় অথবা চেম্বারে ডেকে নেন। এরপর তাদের এসব ওষুধ দেওয়া হয়। আর দালালেরা নিজেরাই চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ এনে দেন। তারা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ দামে ওষুধগুলো কেনেন।
এদিকে, স্যাম্পল ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে গত বুধবার উপজেলার কেরানীহাটের ফার্মেসিগুলোতে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে ৩টি ফার্মেসিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন বিশ্বাসের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, বুধবার কেরানীহাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। এতে স্যাম্পল ওষুধ বিক্রির সত্যতা পাওয়া গেছে। এ কারণে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। ওষুধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের এগুলো দেন রোগীদের বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য। এসব ওষুধের প্যাকেটেই লেখা থাকে- ‘এগুলো স্যাম্পল। ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ’। কিন্তু অনেক চিকিৎসক এগুলো ফার্মেসিতে বিক্রি করে দেন। ফার্মেসি মালিকরা তখন এসব ওষুধ পুরনো প্যাকেটে ঢুকিয়ে বিক্রি করেন। এটি অপরাধ। স্যাম্পল ওষুধের ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।